পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8 סף ফুৎকারে আকাশে জলক্ষেপ করিতে করিতে চিতসাতার কাটেন— দেখিয়া আমাদের বড়ো আশা হইয়াছিল পাঠকের কপালগুণে ছেলেটি আর যাহাই হউক অসাধারণ হইবে না। কিন্তু আশার ছলনে ভুলি কি ফল লভিকু হয় তাই ভাবি মনে । কিন্তু সে কথা পরে হইবে । শাস্ত মধুর অথচ স্বদ্যুম্বভাব নিস্তারিণীর চরিত্র স্বন্দর অঙ্কিত হইয়াছে। এই নিস্তারিণীর কন্য। ফুলকুমারীর সহিত যথাকলে নায়েব মহাশয়ের পুত্র পুরন্দরের বিবাহ সম্পন্ন হইয়া গেল। কিন্তু নায়েব মহাশয় এবং তাহার স্ত্রী জগদ্ধাত্রী তাহদের বেহাইনের প্রতি প্রসন্ন ছিলেন না। বিবাহের পর উভয় বৈবাহিক পক্ষে ছোটোখাটে। পল্লীযুদ্ধ চলিতে লাগিল। নায়েব মহাশয় পুএ পুরন্দরকে তাহার বেহাইনের প্রভাব হইতে দূরে রাখিবার জন্য সঙ্গে করিয়া আপন কর্মস্থানে লইয়া গেলেন। এইখানে আসিয়া মৌলভির নিকট হাফেজ পড়িয়া এবং পণ্ডিতের নিকট শাস্ত্রাধ্যয়ন করিয়া পুরন্দর একট। নূতনতর মানুষ হইয়া উঠিল। মানুষের পরিবর্তন কিছুই অসম্ভব নহে এবং পুরন্দরের স্বভাবে পরিবর্তনের প্রচুর কারণও ছিল। কিন্তু আমরা যে গ্রামদৃশু, যে সরল লোকসমাজ, যে অনতিতরঙ্গিত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে এতক্ষণ কালযাপন করিতেছিলাম নূতনীকৃত পুরন্দর তাহাকে যেন অত্যন্ত অতিক্রম করিবার উপক্রম করিল। পুরন্দর ভালো ছেলে হউক, সে ভালো ; তাহার দানধানে মতি হউক, হরিনামে প্রীতি হউক, শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি এবং হাফেজে অনুরাগ বাড়িতে থাক, আমাদের দেশে সচরাচর যেরূপ ভাবে অনেক লোকের মনে সংসার-বৈরাগ্যের উদয় হইয়া থাকে, পুরন্দরের হৃদয়েও সেইরূপ বৈরাগের সঞ্চার হউক তাহাতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু তাহার বেশি কিছু হইতে গেলে তাহকে অার সহ করা যায় না। কারণ, ‘ফুলজানি’ উপন্যাসকে সম্পূর্ণতা দেওয়াই পুরন্দরচরিত্রের একমাত্র সার্থকতা। অসাধারণ মহত্ত্ব প্রকাশ করিতে গিয়া যদি তিনি উপন্যাস নষ্ট করেন তবে আমরা তাহাকে মার্জনা করিতে পারিব না। প্রথম পরিচ্ছেদের আরম্ভ হইতে ‘ফুলজানিতে যে-এক স্বচ্ছ সুন্দর সারল্য-স্রোত প্রবাহিত হইয়া আসিতেছিল পুরন্দর হঠাৎ অসাধারণ উচ্চ হইয়া উঠিয় তাহাকেই প্রতিহত করিয়া দিয়াছে। গ্রন্থকর্তা পুরন্দর সম্বন্ধে লিখিতেছেন— ‘বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাহার মনে যে পরিবর্তন ঘটিতেছিল তাহার গতি এবং প্রকৃতি বিষাদের দিকে। মানুষ সংসারে, যে কারণেই হউক, দুঃখকষ্ট সহিতে আসিয়াছে, এই রকম তাহার মনের ভাব । আত্মজীবনের একটা লক্ষ্য তাহার তখনও স্থির হয় নাই কিন্তু আপনার বিষয়ে ভাবিতে বসিলেই তাহার মনে হইত, অতিঘোর