পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8ግማ এরূপ অঘটন সংঘটন হইল কেন তাহ বলিতে পারি না। তর্কভূষণের বিধবা ভগিনী বিজয় এবং তাহার কনিষ্ঠ পুত্র হরচন্দ্রের কলিকাতায় আগমনকালটি তাহাদের নিজের পক্ষে স্বক্ষণ, কিন্তু উপন্যাসের পক্ষে কুক্ষণ— কারণ সেই উপলক্ষটুকু অবলম্বন করিয়া গ্রন্থের শেষার্ধটি প্রথমার্ধের সহিত জুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে। পরস্পরের মধ্যে কোনো অবখ্যযোগ নাই। দুইটা মাতুষকে এক দড়ি দিয়া বাধিলে ঐক্য হিসাবেও তাহদের বলবৃদ্ধি হয় না এবং দ্বৈত হিসাবেও তাহ সুবিধা হয় না। তেমনি দুই স্বতন্ত্র গল্পকে জবরদস্তি করিয়৷ একত্র বাধিয়া দিলে একটা গল্পের হিসাবেও তাহীদের স্বচ্ছন্দ স্বাধীন পরিণতিতে বাধা দেওয়া হয়, দুইটা গল্পের হিসাবেও তাহাদিগকে আড়ষ্ট করিয়া বধ করা হয় । বর্তমান গ্রন্থেও তাহাই হইয়াছে। গ্রন্থকার যদি দুটি গল্পকে বিচ্ছিন্ন আকারে রচনা করিতেন তাহা হইলে সম্ভবত দুটিকেই উৎকৃষ্ট গল্পে পরিণত করিতে পারিতেন। দ্বিতীয় গল্পটির কথা বলিতে পারি না— কিন্তু প্রথম গল্পটি যে সাহিত্যের অত্যুচ্চ স্থান অধিকার করিত সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নাই। আসল কথা, লেখক নিজেই নূতন যুগের মধ্যে বাস করিতেছেন ; এমন-কি, নবযুগরথে চালকবর্গ-মধ্যে তিনিও একজন গণ্য ব্যক্তি। তিনি ইহার ঘর্ঘর শব্দ এবং জনতা-কোলাহল হইতে কল্পনাযোগে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়৷ এতদূরে লইয়৷ যাইতে পারেন নাই যেখানে শাস্তিতে বসিয়া নিপুণ চিত্রকরের ন্যায় ইহাকে চিত্রিত করিতে পারেন । বিচিত্র মতামত এবং তর্কবিতর্কগুলা একেবারে গোটা আসিয়া পড়ে, তাহা রক্তমাংসের মানবাকারে পরিণত হইয়া উঠে না। তাহার পঞ্চু, ব্রজরাজ, স্বরেন্দ্র গুপ্ত, মথুরেশ, এমন-কি নবীনও খুব ভালো ছেলে বটে কিন্তু সজীব নহে— তাহারা বীজগণিতের ক খ গ অক্ষরের ন্যায় কেবল কতকগুলি চিহ্নমাত্র । সাহিত্যের চিত্রপটে স্থিতি অপেক্ষ গতি আঁকা শক্ত। যাহা পুরাতন, যাহা স্থির, যাহা নানা দিকে নানা ভাবে সমাজের হৃদয় হইতে রসাকর্ষণ করিয়া শু্যামল সতেজ এবং পরিপূর্ণ হইয়া দাড়াইয়া আছে– তাহাকে সত্য এবং সরসভাবে পাঠকের মনে জাজল্যমান করিয়া তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু যাহ নূতন উঠিতেছে, যাহ। চেষ্টা করিতেছে, যুদ্ধ করিতেছে, পরিবর্তনের মুখে আবর্তিত হইতেছে, যাহা এখনও সর্বাঙ্গীণ পরিণতিলাভ করে নাই তাহাকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করিতে হইলে বিস্তর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ অথবা ঘাতপ্রতিঘাত-ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়া বিচিত্র নাট্যকলা প্রয়োগ আবশ্যক হয়। কিন্তু সেরূপ করিতে হইলে রচনার বিষয় হইতে রচয়িতার নিজেকে বিশ্লিষ্ট করিয়া লইতে হয়— অত্যন্ত কাছে থাকিলে, মণ্ডলীর