পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যেন বাজিল বীণা মুরজ মুরলী অমনি অধীর প্রাণে 5 সে গেল কী দিয়া, কী নিয়া, বাধি মোর হিয়া W কী মন্ত্রগুণে কে জানে । এই কবিতাটির মধ্যে যে রস আছে তাহাকে আমরা গীতরস নাম দিতে পারি। অর্থাৎ লেখক একটি মুখস্মৃতি এবং সৌন্দর্যস্বপ্নে আমাদের মনকে যেরূপ ভাবে আবিষ্ট করিয়া তুলিতে চাহেন তাহ সংগীত দ্বারা সাধিত হইয় থাকে এবং যখন কোনো কবিতা বিশেষ মন্ত্রগুণে অনুরূপ ফল প্রদান করে তখন মনের মধ্যে যেন একটি অব্যক্ত গীতধ্বনি গুঞ্জরিত হইতে থাকে। র্যাহারা বৈষ্ণব পদাবলী পাঠ করিয়াছেন, অন্যান্য কবিতা হইতে গানের কবিতার স্বাতন্ত্র্য র্তাহাদিগকে বুঝাইয়া দিতে হইবে না। আমরা সামান্য কথাবার্তার মধ্যেও যখন সৌন্দর্যের অথবা অমুভবের আবেগ প্রকাশ করিতে চাহি তখন স্বতই আমাদের কথার সঙ্গে সুরের ভঙ্গি মিলিয়া যায়। সেইজন্য কবিতায় যখন বিশুদ্ধ সৌন্দর্যমোহ অথবা ভাবের উচ্ছাস ব্যক্ত হয় তখন কথা তাহার চিরসঙ্গী সংগীতের জন্য একটা আকাজক্ষ। প্রকাশ করিতে থাকে।– এসো এসো বঁধু এসে, আধো আঁচরে বসে, নয়ন ভরিয়া তোমায় দেখি ! এই পদটিতে যে গভীর প্রীতি এবং একান্ত আত্মসমপণ প্রকাশ পাইয়াছে তাহ কি কথার দ্বারা হইয়াছে ? না, আমরা মনের ভিতর হইতে একটা কল্পিত করুণ স্বর সংযোগ করিয়া উহাকে সম্পূর্ণ করিয়া তুলিয়াছি ? ওই দুটি ছত্রের মধ্যে ষে-কটি কথা আছে তাহার মতো এমন সামান্য এমন সরল এমন পুরাতন কথা আর কী হইতে পারে ? কিন্তু উহার ওই অত্যন্ত সরলতাই শ্রোতাদের কল্পনার নিকট হইতে সুর ভিক্ষা করিয়া লইতেছে। এইজন্য ওই কবিতার স্বর না থাকিলেও উহা গান। এইজন্যই— হরষে বরষ পরে যখন ফিরি রে ঘরে, সে কে রে আমারি তরে আশা করে রহে বলে ; স্বজন সুহৃদ সবে উজল নয়ন যবে, কার প্রিয় আঁখি দুটি সব চেয়ে সমুজল ! ইহা কানাড়ায় গীত হইলেও গান নহে, এবং— চাহি অতৃপ্ত নয়নে তোর মুখপানে ফিরিতে চাহে না আঁখি ;