পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার পর পরিণতিসহকারে পুরাতন বন্ধনের মধ্যে ধরা দিয়া আপন মর্মগত নূতনত্বকে বহিঃস্থিত পুরাতনের উপর দ্বিগুণতর উজ্জল আকারে পরিস্ফুট করিয়া তুলে। আষাঢ়ে’র গ্রন্থকর্তী যতগুলি কবিতা লিখিয়াছেন, সকলেরই মধ্যে র্তাহার প্রতিভার স্বকীয়ত্ব প্রকাশ পাইতেছে, কিন্তু যে কবিতাগুলি তিনি ছন্দের পুরাতন ছাচের মধ্যে ঢালিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে নূতনত্বের উজ্জলতা ও পুরাতনের স্থায়িত্ব উভয়ই একত্র সম্মিলিত হইয়াছে । আমাদের বিশ্বাস, কবিও তাহ অন্তরের মধ্যে উপলব্ধি করিয়াছেন এবং র্তাহার হাস্যস্থষ্টির নীহারিক ক্রমে ছন্দোবন্ধে ঘনীভূত হইয়। বঙ্গসাহিত্যে হাস্যলোকের ধ্রুব নক্ষত্রপুঞ্জ রচনা করিবে। শুদ্ধমাত্র অমিশ্র হাস্ত ফেনরাশির মতো লঘু এবং অগভীর। তাহ বিষয়পুঞ্জের উপরিতলের অস্থায়ী উজ্জল বর্ণপাত মাত্র। কেবল সেই হাস্যরসের দ্বারা কেহ যথার্থ অমরতা লাভ করে না। রূপালির পাতের মধ্যে শুভ্রতা ও উজ্জলতা আছে বটে, কিন্তু তাহার লঘুত্ব ও অগভীরতা -বশত তাহার মূল্যও অল্প এবং তাহার স্থায়িত্বও সামান্য। সেই উজ্জ্বলতার সঙ্গে রৌপ্যপিণ্ডের কাঠিন্য ও ভার থাকিলে তবেই তাহার মূল্য বৃদ্ধি করে। হাস্যরসের সঙ্গে চিন্তা এবং ভাবের ভার থাকিলে তবে তাহার স্থায়ী অাদর হয়। সমালোচ্য গ্রন্থে ‘বাঙালি মহিমা’, ‘কৰ্ণবিমৰ্দনকাহিনী’ প্রভৃতি কবিতায় যে হাস্য প্রকাশ পাইতেছে, তাহা লঘু হাস্য মাত্র নহে, তাহার মধ্যে কবির হৃদয় রহিয়াছে, তাহার মধ্য হইতে জালা ও দীপ্তি ফুটিয়া উঠিতেছে। কাপুরুষতার প্রতি যথোচিত ঘৃণা এবং ধিক্কারের দ্বারা তাহ গৌরববিশিষ্ট । তাহা ছাড়া, সাময়িক পত্রে মধ্যে মধ্যে ‘আষাঢ়ে’-রচয়িতার এমন সকল কবিতা বাহির হইয়াছে যাহাতে হাস্য এবং অশ্ররেখা, কৌতুক এবং কল্পনা, উপরিতলের ফেনপুঞ্জ এবং নিম্নতলের গভীরতা একত্র প্রকাশ পাইয়াছে। তাহাই তাহার কবিত্বের যথার্থ পরিচয় । তিনি যে কেবল বাঙালিকে হাসাইবার জন্য আসেন নাই সেই সঙ্গে তাহাদিগকে যে ভাবাইবেন এবং মাতাইবেন এমন আশ্বাস দিয়াছেন। অগ্রহায়ণ ১৩০৫