পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

85 o রবীন্দ্র-রচনাবলী আলোক এবং অন্ধকার, গতি এবং স্তব্ধতা, মাধুর্য ও বিরাটভাব আকাশ জুড়িয়া অনায়াসে মিলিত হইয়াছে। আবার মাঝে মাঝে এক-এক পসলা বৃষ্টিও বাতাসকে আৰ্দ্ৰ করিয়া ঝরঝর শব্দে ঝরিয়া পড়ে। মেঘেরও বিচিত্র ভঙ্গি— তাহ। কখনও চাদকে অর্ধেক ঢাকিতেছে, কখনও পুরা ঢাকিতেছে, কখনও-ব৷ হঠাৎ একেবারে মুক্ত করিয়া দিতেছে— কখনও-বা ঘোরঘটায় বিদ্যুতে ফুরিত ও গর্জনে স্তনিত হইয়৷ উঠিতেছে। দ্বিজেন্দ্রলালবাবু বাংলাভাষার একটা নূতন শক্তি আবিষ্কার করিয়াছেন। প্রতিভাসম্পন্ন লেখকের সেই কাজ । ভাষাবিশেষের মধ্যে যে কতটা ক্ষমতা আছে, তাহ। র্তাহারাই দেখাইয়া দেন– পূর্বে যাহার অস্তিত্ব কেহ সন্দেহ করে নাই, তাহাই তাহার প্রমাণ করিয়া দেন। দ্বিজেন্দ্রলালবাৰু বাংলা কাব্যভাষার একটি বিশেষ শক্তি দেখাইয়া দিলেন। তাহা ইহার গতিশক্তি । ইহা যে কেমন দ্রুতবেগে, কেমন অনায়াসে তরল হইতে গভীর ভাষায়, ভাব হইতে ভাবান্তরে চলিতে পারে, ইহার গতি যে কেবলমাত্র মৃদুমন্থর আবেশভারাক্রান্ত নহে, তাহ কবি দেখাইয়াছেন। ' ছন্দ সম্বন্ধেও যেন স্পর্ধাভরে কবি যথেচ্ছ ক্ষমতা প্রকাশ করিয়াছেন । র্তাহার আশীৰ্বাদ’ ও ‘উদ্বোধন কবিতায় ছন্দকে একেবারে ভাঙিয়া চুরিয়া উড়াইয়া দিয়া ছন্দেরচনা করা হইয়াছে। তিনি যেন সাংঘাতিক সংকটের পাশ দিয়া গেছেন— কোথাও যে কিছু বিপদ ঘটে নাই, তাহ বলিতে পারি না। কিন্তু এই দুঃসাহস কোনো ক্ষমতাহীন কবিকে আদৌ শোভা পাইত না। এইবার নমুনা উদ্ধত করিবার সময় আসিয়াছে। কিন্তু আমরা ফুল ছিড়িয়া বাগানের শোভা দেখাইবার আশা করি না । পাঠকগণ কাব্য পড়িবেন— কেবল সমালোচনা চাখিয়া ভোজের পূর্ণমুখ নষ্ট করিবেন না । _ কীর্তিক ১৩০৯