পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য ○ oS) ধর্ম, সমাজ এবং লোকচরিত্র সম্বন্ধে ভূয়োভূয় কাল্পনিক মিথ্যাবাদ ও অত্যুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ ইংরাজি গ্রন্থের পত্রসংখ্যার সহিত তুলিত হইলে বঙ্গসাহিত্যের ভালোমন্দ পাঠ্য-অপাঠ্য সমস্ত গ্রন্থ আপন ক্ষীণতাক্ষোভে লজ্জিত হইয়া উঠে। ইংরাজ আমাদের ক্ষমতাশালী প্রভু। সেই ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রত্যক্ষ আকর্ষণ অত্যন্ত অধিক। এত অধিক যে, অন্যায় ও অত্যাচারও যদি ঘটে তথাপি তাহা দুর্বল ব্যক্তিদিগকে ভয়ে বিস্ময়ে এবং একপ্রকার অন্ধ আসক্তিতে অভিভূত করিয়া রাখে। অতএব দেড়শত বৎসর পূর্বে ইংরাজ বণিক তৎকালীন রাজস্থানীয়দের প্রতি কিরূপ আচরণ করিয়াছিল তাহ পাঠ করিয়া ইংরাজের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করিতে থাকিবে এমন ভারতবাসী নাই। মুখে যাহাই বলি, কোনোদিন বিশেষ আঘাতের ক্ষোভে বিশেষ কারণে যেমনই তর্ক করি, ইংরাজের প্রবল প্রতাপের আকর্ষণ ছেদন করা আমাদের পক্ষে সহজ নহে । , অতএব যতদিন আমরা দুর্বল এবং ইংরাজ সবল ততদিন আমাদের মুখের নিন্দায় র্তাহীদের ক্ষতি নাই বলিলেই হয়, তাহদের মুখের নিন্দ আমাদের পক্ষে সাংঘাতিক। ততদিন আমাদের সংবাদপত্র কেবল র্তাহীদের ও র্তাহীদের মেমসাহেবদের কর্ণপীড়া উৎপাদন করে মাত্র এবং তাহদের সংবাদপত্র আমাদের মর্মস্থানের উপর বন্দুকের গুলি বর্ষণ করে । 疊 কিন্তু ইংরাজি সাহিত্যে একটা অন্যায় আচরিত হয় বলিয়। আমরা তাহার অন্যায় প্রতিশোধ লইব ইহা স্বযুক্তির কথা নহে– বিশেষত দুর্বলের পক্ষে সবলের অনুকরণ ভয়াবহ । ইংরাজের অন্যায় নিন্দ ‘সিরাজদ্দৌলা গ্রন্থের উদ্দেশ্য নহে। তবে, এমন-একটা প্রসঙ্গের উত্থাপন করায় কী প্রয়োজন ছিল ! সেই প্রয়োজনীয়তা সমালোচক ঠিকভাবে বুঝিবেন এবং যথার্থভাবে গ্রহণ করিবেন কি না সন্দেহ। ঘাতপ্রতিঘাতের একটা স্বাভাবিক নিয়ম আছে। প্রাচ্য চরিত্র, প্রাচ্য শাসননীতি সম্বন্ধে ইংরাজি গ্রন্থে ছোটে-বড়ো স্পষ্ট-অস্পষ্ট, সংগত-অসংগত অজস্র কটক্তি পাঠ করিয়া শিক্ষিত-সাধারণের মনে যে-একটা অবমাননাজনিত ক্ষোভ জন্মিতে পারে এ কথা অল্প ইংরাজই কল্পনা করেন । অথচ, প্রথম শিক্ষাকালে ইংরাজের গ্রন্থ আমরা বেদবাক্যস্বরূপ গ্রহণ করিতাম । তাহা অামাদিগকে যতই ব্যথিত করুক তাহার যে প্রতিবাদ সম্ভবপর, তাহার যে প্রমাণ-আলোচনা আমাদের আয়ত্তগত এ কথা আমাদের বিশ্বাস হইত না । নীরবে মতশিরে আপনাদের প্রতি ধিক্কার-সহকারে সমস্ত লাঞ্ছনাকে সম্পূর্ণ সত্যজ্ঞানে বহন