পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t. У о রবীন্দ্র-রচনাবলী বংশ পাল-বংশ গুপ্ত-বংশের জটিল অরণ্যমধ্যে পথ করিয়া পৌরাণিক কাল হইতে বৌদ্ধ কাল এবং বৌদ্ধ কাল হইতে বৈদিক কাল পর্যন্ত অখণ্ড আপনার অনুসন্ধানে বাহির হইয়াছি। সেই মহৎ আবিষ্কারব্যাপারের নৌযাত্রায় ঐতিহাসিক চিত্র’ একটি অন্যতম তরণী । যে-সকল নিভাক নাবিক ইহাতে সমবেত হইয়াছেন ঈশ্বর র্তাহীদের আশীৰ্বাদ করুন, দেশের লোক র্তাহীদের সহায় হউন এবং বাধাবিঘ্ন ও নিরুৎসাহের মধ্যেও অনুরাগপ্রবৃত্ত মহৎ কর্তব্যসাধনের নিষ্কাম আনন্দ তাহাদিগকে ক্ষণকালের জন্য পরিত্যাগ না করুক। এ কথা কেহ না মনে করেন, গৌরব অনুসন্ধানের জন্য পুরাবৃত্তের দুর্গম পথে প্রবেশ করিতে হইবে । সে দিকে গৌরব না থাকিতেও পারে— অনেক পরাভব, অনেক অবমাননা, অনেক পতন ও বিকারের মধ্য দিয়া বাকিয়া বাকিয়া ভারতবর্ষের সুদীর্ঘ ইতিহাস বহিয়া আসিয়াছে। অনেক স্থলে সেই একইাটু পঙ্কের ভিতর দিয়া আমাদিগকে হঁটিতে হইবে। তবু আমাদিগকে এই পঙ্কিল জটিল বক্র পথের দিকে আকর্ষণ করিতেছে কে ? জাতীয় আত্মশ্লাঘা নহে, স্বদেশের প্রতি নবজাগ্রত ' প্রেম। আমরা দেশকে প্রকৃতরূপে প্রত্যক্ষরূপে সম্পূর্ণরূপে জানিতে চাই– তাহার সমস্ত দুঃখদুর্দশাদুৰ্গতির মধ্যেও তাহাকে লক্ষ্য করিতে চাই– আপনাকে ভুলাইতে চাই না । 離 তথাপি আমার দৃঢ়বিশ্বাস, ইতিহাসের পথ বাহিয়া ভারতবর্ষকে যদি আমরা সমগ্রভাবে দেখিতে পাই, আমাদের লজ্জা পাইবার কারণ ঘটিবে না। তাহ হইলে আমরা এমন একটি নিত্য আদর্শ লাভ করিব যাহ। ভারতবর্ষের আদর্শ, যাহা সকল পরাভব ও অবমাননার উর্ধের্ব আপন উচ্চশির অম্লান রাখিতে পারিয়াছে। গ্রীক ও রোমকের বীর জাতি ছিল, বিজয়ী জাতি ছিল, তাহারা বহুকাল নিৰ্ভয়ে প্রাণের মমতা ত্যাগ করিয়৷ দেশজয় ও দেশরক্ষা করিয়া আসিয়াছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা বৃক্ষ তাহদের জাতীয় লক্ষ্য ও গৌরব ছিল। কিন্তু সেই দৃঢ় আদর্শ, সেই বহুকালের সফলতা ও মহদুষ্টান্ত তাহাদিগকে পতনের ও পরাভবের হস্ত হইতে রক্ষা করিতে পারে নাই । ভারতবর্ষ নিজেকে যে পথে লইয়া গিয়াছিল তাহ কোনো কালেই দেশরক্ষা ও দেশজয়ের পথ নহে। অতএব বহিঃশত্রুর বাহুবলের নিকট ভারতবর্ষের যে পরাভব সে তাহীর আত্ম-অাদর্শের পরাভব নহে। অবশ্য বাহিরের উপপ্লবে, শক গ্রীক আরব মোগল ও ভারতবর্ষীয় অনার্যদের সংঘাতে ভারতবর্ষের তপোভঙ্গ হইয়াছিল ; যে অাদর্শের ঐক্য ক্রমশ অভিব্যক্ত হইয়া, বিক্ষিপ্তত হইতে ক্রমশ সংক্ষিপ্ত ও দৃঢ়