পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য لادة হইয়া হিন্দুজাতিকে একটি বিশেষ ভাবে ও গঠনে, শোভায় ও সামঞ্জস্তে স্বজন করিয়া তুলিতে পারিত, তাহ বারম্বার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন বিকীর্ণ হইয়। গিয়াছে, তথাপি নান৷ বিচ্ছেদের মধ্য দিয়াও সেই মূলস্থূত্রটি অনুসরণ করিতে পারিলে হয়তো বুঝিতে পারিব বর্তমান যুরোপের আদশ-দ্বারা ভারতবর্ষের ইতিহাস পরিমেয় নহে। যুরোপের আদশ যুরোপকে কোথায় লইয়া যাইতেছে তাহ আমরা কিছুই জানি না ; তাহ যে স্থায়ী নহে, তাহার মধ্যে যে অনেক বিনাশের বীজ অঙ্কুরিত হইয়া উঠিতেছে তাহ স্পষ্ট দেখা যায়। ভারতবর্ষ প্রবৃত্তিকে দমন করিয়া শক্রহস্তে প্রাণত্যাগ করিয়াছে— যুরোপ প্রবৃত্তিকে লালন করিয়া আত্মহত্যার উদযোগ করিতেছে। নিজদেশ এবং পরদেশের প্রতি আমাদের আসক্তি ছিল না বলিয়া বিদেশীর নিকট আমরা দেশকে বিসর্জন দিয়াছি— নিজদেশ ও পরদেশের প্রতি আসক্তি সযত্নে পোষণ করিয়া যুরোপ আজ কোন রক্তসমুদ্রের তীরে আসিয়া দাড়াইয়াছে! অস্ত্রে শস্ত্রে সর্বাঙ্গ কণ্টকিত করিয়া তুলিয় তাহার এ কী বিকটমূর্তি ! কী সন্দেহ ও কী আতঙ্কের সহিত যুরোপের প্রত্যেক রাজশক্তি পরস্পরের প্রতি ক্রুর কটাক্ষপাত করিতেছে! রাজমন্ত্রিগণ টিপিয়া টিপিয়া পরস্পরের মৃত্যুচাল চালিতেছে ; রণতরীসকল মৃত্যুবাণে পরিপূর্ণ হইয়া পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রে যমদৌত্যে বাহির হইয়াছে। আফ্রিকায় এসিয়ায় যুরোপের ক্ষুধিত লুদ্ধগণ আসিয়া ধীরে ধীরে এক-এক পা বাড়াইয়া একট। থাবায় মাটি আক্রমণ করিতেছে এবং আর-একটা থাবা সম্মুখের লোলুপ অভ্যাগতের প্রতি উদ্যত করিতেছে। যুরোপীয় সভ্যতার হিংসা ও লোভে অদ্য পৃথিবীর চারি মহাদেশ ও দুই মহাসমুদ্র ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। ইহার উপর আবার মহাজনদের সহিত মজুরদের, বিলাসের সহিত দুর্ভিক্ষের, দৃঢ়বদ্ধ সমাজনীতির সহিত সোশ্বালিজম ও নাইহিলিজমের দ্বন্দ্ব যুরোপের সর্বত্রই আসন্ন হইয়৷ রহিয়াছে। প্রবৃত্তির প্রবলত, প্রভূত্বের মত্তত, স্বার্থের উত্তেজনা কোনো কালেই শান্তি ও পরিপূর্ণতায় লইয়৷ যাইতে পারে না, তাহার একটা প্রচণ্ড সংঘাত, একটা ভীষণ রক্তাক্ত পরিণাম আছেই। অতএব যুরোপের রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শকে চরম আদর্শ বিবেচনাপূর্বক তস্থারা ভারতবর্ষকে মাপিয়া খাটো করিয়া ক্ষোভ পাইবার হয়তো প্রয়োজন নাই। একটা কথা আছে, জীর্ণমন্নং প্রশংসীয়াং । যেমন করিয়াই হউক এখন ভারতবর্ষকে আর পরের চোখে দেখিয়া আমাদের সান্তন নাই। কারণ, ভারতবর্ষের প্রতি যখন আমাদের প্রীতি জাগ্রত হইয়া উঠে নাই তখন ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আমরা বাহির হইতে দেখিতাম ; তখন আমরা পাঠান-রাজত্বের ইতিহাস মোগল-রাজত্বে পাঠ করিতাম। এখন সেই মোগল