পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? N 8 動 রবীন্দ্র-রচনাবলী বশতই মূর্তিপূজা পরিহারপূর্বক সমস্ত জীবন নিরাকার উপাসনায় যাপন করিয়াছেন। গ্রন্থকারের মতে তিনি ভ্রান্ত হইতে পারেন কিন্তু তিনি যে ভক্ত তাহা কেবল তর্কে নহে আচরণে এবং বহু পীড়ন ও ত্যাগ স্বীকারে প্রমাণ করিয়াছেন। এককালে ভারতবর্ষে মূর্তিপূজা ছিল না, কিন্তু সেই দূরকাল সম্বন্ধে ঐতিহাসিক প্রমাণ উত্থাপন করা নিস্ফল। আধুনিক কালের যে কয়টি উদাহরণ দেওয়া গেল তাহা হইতে অন্তত এটুকু প্রমাণ হয় যে, কোনো কোনো ভক্ত মূর্তিপূজায় বিরক্ত হইয়া তাহা ত্যাগ করিয়াছেন এবং অনেক ভক্ত পৃথিবীর অনেক দেশে অমূর্ত উপাসনায় ভক্তিবৃত্তির পরিতৃপ্তি লাভ করিয়াছেন। গ্রন্থকার বলেন, মানিলাম তাহারা মূর্তিপূজা করেন না কিন্তু তাহারা নিরাকার উপাসনা করেন ইহা হইতেই পারে না। কারণ, ‘জাতিবাচক ও গুণবাচক পদার্থের জ্ঞান সাকার এবং ‘জাতিবাচক ও গুণবাচক পদার্থ অবলম্বনে ঈশ্বরের জ্ঞান সাকার।’ এ কেমন তর্ক, যেমন— যদি আমি বলি ক বাকী পথে চলে এবং খ সোজা পথে চলে তুমি বলিতে পার খও সোজা পথে চলে না— কারণ সরল রেথ কাল্পনিক ; পৃথিবীতে কোথাও সরল রেখা নাই। কথাটা সত্য বটে কিন্তু তথাপি ইহা তর্কমাত্র। আমাদের ভাষা অামাদের মনকে একদম ছাড়াইয়া যাইতে পারে না ; এবং আমাদের মন সীমাবদ্ধ। সুতরাং আমাদের ভাষা আপেক্ষিক। আমরা যাহাকে তীক্ষ বলি অণুবীক্ষণ দিয়া দেখিতে গেলে তাহ ভেঁগত হইয়া পড়ে, আমরা যাহাকে নিটোল গোল বলি তাহাকে সহস্ৰ গুণ বাড়াইয়া দেখিলে তাহার অসমানত ধরা পড়িয়া যায়। অণুবীক্ষণ দিয়া দেখিতে গেলে নিরাকার উপাসনার মধ্যে যে আকারের আভাস পাওয়া যায় না তাহ বলিতে সাহস করি না । তাই যদি হইল, তবে আমরা যাহাকে সাকার উপাসনা বলি তাহাতেই বা দোষ কী ? নিরাকার যখন পূর্ণভাবে মনের অগম্য তখন তাহাকে স্বগম আকারে পূজা করাই ভালো । * আকার অামাদের মনের পক্ষে সুগম হইতে পারে কিন্তু তাই বলিয়। নিরাকার যে আকারের দ্বারা স্বগম হইতে পারেন তাহা নহে– ঠিক তাহার উলটা। মনে করে, আমি সমুদ্রের ধারণা করিতে ইচ্ছা করি। সমুদ্র ক্রোশ-দুই তফাতে আছে। আমি তাহ দেখিতে যাত্রা করিবার সময় পণ্ডিত আসিয়া বলিলেন, সমুদ্র এতই বড়ো যে স্বচক্ষে দেখিয়াও তাহার ধারণা হইতে পারে না ; কারণ আমাদের