পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

© ᎼᏬ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের সর্বোচ্চ উপাসনা তিনিই আকর্ষণ করেন যিনি এতবড়ো যে কোথাও র্তাহার শেষ নাই । তর্কের মুখে বল যাইতে পারে, তাহাকে জানিব বড়ো করিয়া, কিন্তু দেখিব ছোটো করিয়া। আপনাকে আপনি খণ্ডন করিয়া চলা কি সহজ কাজ ? বিশেষত ইন্দ্রিয় প্রশ্রয় পাইলে সে মনের অপেক্ষা বড়ো হইয় উঠে । সেই ইন্দ্রিয়ের সাহায্য যতটুকু না লইলে নয় তদপেক্ষা বেশি কর্তৃত্ব তাহার হাতে স্বেচ্ছাপূর্বক সমর্পণ করিলে মনের জড়ত্ব অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়ে। র্তাহাকে ছোটো করিয়াই বা দেখিব কেন ? নতুবা তাহাকে কিছু-একটা বলিয়া মনে হয় না, তিনি মন হইতে ক্রমশ স্খলিত হইয়া পড়েন । কিন্তু মহৎ লক্ষ্যের জন্য ফাকি দিয়া সারিবার সংক্ষিপ্ত রাস্ত নাই। দুর্গ পথস্তং কবয়ে বদন্তি। সেই দুর্গম পথ এড়াইবার উপায় থাকিলে ভাবনা ছিল না। কষ্ট, করিতে হয়, চেষ্টা করিতে হয় বলিয়া বিনা-প্রয়াসের পথ অবলম্বন করিলে লক্ষ্য ভ্ৰষ্ট হইয়া যায়। যে লোক ধনী হইতে চায় সে সমস্তদিন থাটিয়া রাত্রি একটা পর্যন্ত হিসাব মিলাইয়। তবে শুইতে যায় ; পায়ের উপর পা দিয়া তাহার অভীষ্টসিদ্ধি হয় না। আর যে ঈশ্বরকে চায়, পথ দুর্গম বলিয়। সে কি খেলা করিয়া তাহাকে পাইবে ? আসল কথা, ঈশ্বরকে সকলে চায় না, পারমাথিক দিকে স্বভাবতই অনেকের মন নাই। ধন ঐশ্বর্য স্থখ সৌভাগ্য পাপক্ষয় এবং পুণ্য-অর্জনের দিকে লক্ষ রাখিয়৷ দেবসেবা ও ধর্মকর্ম করাকে জর্জ এলিয়ট other-worldliness নাম দিয়াছেন । অর্থাৎ সেটা পারলৌকিক বৈষয়িকতা। তাহ আধ্যাত্মিকতা নহে। যাহাদের সেই দিকে লক্ষ সাকার-নিরাকার তাহাদের পক্ষে উপলক্ষমাত্র। সুতরাং হাতের কাছে যেটা থাকে, যাহাতে সুবিধা পায়, দশ জনে যেটা পরামর্শ দেয় তাহাই অবলম্বন করিয়া ধর্মচতুর লোক পুণ্যের খাতায় লাভের অঙ্ক জমা করিতে থাকেন। নিরাকারবাদী এবং সাকারবাদী উভয় দলেই তেমন লোক ঢের আছে। কিন্তু আধ্যাত্মিকত। যাহাদের প্রকৃতির সহজ ধর্ম, সংসার র্যাহাদিগকে তৃপ্ত ও বিক্ষিপ্ত করিতে পারে না, যে দিকেই স্থাপন কর কম্পাসের কাটার মতে র্যাহীদের মন এক অনির্বচনীয় চুম্বক-আকর্ষণে অনন্তের দিকে আপনি ফিরিয়া দাড়ায়, জগদীশ্বরকে বাদ দিলে র্যাহীদের নিকট আমাদের স্থিতিগতি চিন্তাচেষ্টা ক্রিয়াকর্ম একেবারেই নিরর্থক এবং সমস্ত জগদব্যাপার নিরবচ্ছিন্ন বিভীষিকা, যাহারা অন্তরাত্মার মধ্যে পরমাত্মার প্রত্যক্ষ আনন্দ উপভোগ করিয়াই বুঝিতে পারিয়াছেন যে,