পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 蜗 C: ) আনন্দাদ্ধোব খদ্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে, আনন্দেন জাতানি জীবস্তি, আনন্দং প্রয়স্ত্যভিসংবিশন্তি, সাধনা তাহদের নিকট দুঃসাধ্য নহে এবং তাহারা আপনাকে ভুলাইয়া এবং আপনার ঈশ্বরকে ভুলাইয়া সংক্ষেপে কার্যোদ্ধার করিতে চাহেন না— কারণ, নিত্যসাধনাতেই তাহদের সুখ, নিয়তপ্রয়াসেই তাহদের প্রকৃতির পরিতৃপ্তি । সেইরূপ কোনো স্বভাবভক্ত যখন মূর্তিপূজার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন তখন তিনি আপন অসামান্য প্রতিভাবলে মূর্তিকে অমূর্ত করিয়া দেখিতে পারেন ; তাহার প্রত্যক্ষবর্তী কোনো সীমা তাহাকে অসীমের নিকট হইতে কাড়িয়া রাখিতে পারে না ; র্তাহার চক্ষু যাহা দেখে তাহার মন তাহাকে বিদ্যুদবেগে ছাড়াইয়া চলিয়া যায় ; বাহিরের উপলক্ষ তাহার নিকট কেবল অভ্যাসক্রমে থাকে মাত্র, তাহাকে দুর করিবার কোনো প্রয়োজন হয় না ; বিশ্বসংসারই তাহার নিকট রূপক, প্রতিমার তে কথাই নাই ; যে লোকের অক্ষরজ্ঞান আছে সে যেমন অক্ষরকে অক্ষররপে দেখে না, সে যেমন কাগজের উপর যখন ‘গ’ এবং 'ছ’ দেখে তখন ক্ষুদ্র গয়ে আকার ছ দেখে না কিন্তু তৎক্ষণাং মনশ্চক্ষে শাখাপল্লবিত বৃক্ষ দেখিতে পায়, তেমনি তিনি সম্মুখে স্থাপিত বস্তুকে দেখিয়াও দেখিতে পান না, মুহূর্তমধ্যে অন্তঃকরণে সেই অমূর্ত আনন্দ উপলব্ধি করেন, যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ। কিন্তু এই ইন্দ্রজাল অসামান্য প্রতিভার দ্বারাই সাধ্য। সে প্রতিভা চৈতন্যের ছিল, রাম প্রসাদ সেনের ছিল। আবার প্রকৃতিভেদে কোনো কোনো স্বভাবভক্ত লোক প্রচলিত মূর্তি দ্বার ঈশ্বরের পূজাকে আত্মাবমাননা এবং পরমাত্মাবমাননা বলিয়া অভ্যাসবন্ধন ছেদন করিয়া আত্মার মধ্যে এবং বিশ্বের মধ্যে র্তাহার উপাসনা করেন। মহম্মদ এবং নানক তাহার দৃষ্টান্ত । কিন্তু আমাদের মধ্যে ভক্তির প্রতিভা খুব অল্প লোকেরই আছে। প্রত্যক্ষ সংসারঅরণ্য আমাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে ; মাঝে মাঝে তাহারই ডালপালার অবকাশপথে অধ্যাত্মরশ্মি দেবদূতের তর্জনীর মতো আমাদের অন্ধকারের একাংশ স্পর্শ করিয়া যায়। এখন, আমরা যদি মাঝে মাঝে সংসারের বনচ্ছায়াতলে কীটাঙ্গুসন্ধান ছাড়িয়া দিয়া অনন্ত আকাশের মধ্যে মুক্তির আনন্দ ভোগ করিতে চাই তে কী করিব ? যদি চাই এ কথা বলিতে হইল। কারণ, পূর্বেই বলিয়াছি আমরা সকলে চাই না, ঈশ্বরকে উপলক্ষ করিয়া আর-কিছু চাই। কিন্তু যদি চাই তো কী করিব ? তবে, যাহাতে বাধা যাহাতে অন্ধকার তাহ সাবধানে এড়াইয়া যে দিকে আলোক আপনাকে প্রকাশ করে সেই পথ দিয়া পাখী মেলিয়া আকাশের দিকে উড়িতে