পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য (*२x জুবেয়ারের মন সে শ্রেণীর ছিল না, তাহার চিত্ত ফলের বাগান নহে, ফসলের ক্ষেত্র । kų সে ফসল নানাবিধ। ধর্ম কর্ম কলারস সাহিত্য কত কী তাহার ঠিক নাই । অদ্য আমরা সাহিত্য ও রচনাকলা সম্বন্ধে এক অঞ্জলি সংগ্ৰহ করিয়া পাঠকগণকে উপহার দিতে ইচ্ছা করি – জুবেয়ার নিজের সম্বন্ধে বলেন— “যাহা জানিবার ইচ্ছা ছিল তাহ শিক্ষা করিতে বৃদ্ধবয়সের প্রয়োজন হইল, কিন্তু যাহা জানিয়াছি তাহা ভালোরূপে প্রকাশ করিতে যৌবনের প্রয়োজন অনুভব করি।’ অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য চেষ্টাজাত অভিজ্ঞতা চাই কিন্তু প্রকাশের জন্য নবীনত। আবখক। লেখার বিষয়টির মধ্যে চিন্তার পরিচয় যত থাকে ততই তাহার গৌরব বাড়ে কিন্তু রচনার মধ্যে চেষ্টার লক্ষণ যত অল্প থাকিবে তাহার প্রকাশশক্তি ততই অধিক হইবে। " 帶 জুবেয়ার নিজে যে রচনাকলা অবলম্বন করিয়াছিলেন সে সম্বন্ধে বলিতেছেন, ‘তোমরা কথার ধ্বনির দ্বারা যে ফল পাইতে চাও আমি কথার অর্থ-দ্বারা সেই ফল ইচ্ছা করি ; তোমরা কথার প্রাচুর্যের দ্বারা যাহা চাও আমি কথার নির্বাচনের দ্বারা তাহা চাই, তোমরা কথার সংগতির দ্বারা যাহা চাও আমি কথার পৃথক্করণের দ্বার তাহা লাভ করিতে প্রয়াসী । অথচ সংগতিও (harmony ) ইচ্ছা করি কিন্তু তাহ স্বভাবসিদ্ধ যথাযোগ্য সংগতি ; জোড়া-গাথার নৈপুণ্যমাত্রের দ্বারা যে সংগতি রচিত তাহা চাই না।’ বস্তুত প্রতিভাসম্পন্ন লেখক ও লিপিকুশল লেখকের প্রভেদ এই যে, একজনের রচনায় সংগতি এমন স্বাভাবিক এবং অখণ্ড যে, তাহ বিশ্লেষণ করাই শক্ত, অপরের রচনায় সংগতি ইটের উপর ইটের ন্যায় গাথা ও সাজানো। প্রথমটি অজ্ঞাতসারে মুগ্ধ করে, দ্বিতীয়টি বিন্যাসনৈপুণ্যে বাহবা বলায়। তর্কযুদ্ধ সম্বন্ধে জুবেয়ার বলেন— } তর্কবিতর্কের প্রয়োজনীয়তা যতটুকু তাহার ঝঞ্চাট তদপেক্ষা অনেক বেশি। বিরোধমাত্রেই চিত্তকে বধির করিয়া ফেলে। যেখানে অন্য-সকলে বধির অামি সেখানে মূক । জুবেয়ার বলেন— ‘কোনো কোনো চিত্ত নিজের জমিতে ফসল জন্মাইতে পারে না কিন্তু জমির উপরিভাগে যে সার ঢালা থাকে সেইখান হইতেই তাহার শস্য উঠে।”