পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য (t૨ (t কৌশল শিক্ষা হইতে পারে, কিন্তু সর্বাঙ্গীণ মানুষটির দ্বারা যে স্টাইল গঠিত হয় তাহাই স্টাইল বটে। সেই লিখনরীতির মধ্যে কেবল চিন্তার প্রভাব নহে, সমস্ত মাহুষের একটি সম্পূর্ণ প্রভাব পাওয়া যায়। ‘মনের অভ্যাস হইতে নৈপুণ্য, প্রকৃতির অভ্যাস হইতে উৎকর্ষ এবং সম্পূর্ণতা । ভালো লেখকমাত্রেরই একটি স্বকীয় লিখনরীতি থাকে— কিন্তু বড়ো লেখকের সেই রীতিটি পরিষ্কার ধরা শক্ত। তাহার মধ্যে একটি বৃহৎ অনির্দিষ্টত থাকে। এ সম্বন্ধে জুবেয়ার লিখিতেছেন— “যাহাদের ভাবনা ভাষাকে ছাড়াইয়া যায় না, যাহাদের দৃষ্টি ভাবনাকে অতিক্রম করে না, তাহদেরই লিখনরীতি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট হইয়া থাকে।’ মহং লেখকদের ভাষা অপেক্ষ ভাবনা বড়ো হইয় থাকে এবং তাহদের মানসদৃষ্টি ভাবনাকে অতিক্রম করিয়া যায়। র্তাহার যুক্তিতর্কচিন্তাকে লঙ্ঘন করিয়া অনেক জিনিস সহজে গ্রহণ করিয়া থাকেন। সেইজন্য র্তাহীদের রীতি বাধাছাদা কাটছাট নহে, তাহার মধ্যে একটি অনিৰ্দেশ্যতা অনির্বচনীয়তা থাকিয়া যায় । ‘মুকথিত রচনার লক্ষণ এই যে, ঠিক যেটুকু আবশ্যক তার চেয়ে সে অধিক বলে অথচ যেটি বলিবার নিতান্ত সেইটিই বলে ; ভালো লেখায় একই কালে প্রচুর এবং পরিমিত, ছোটো এবং বড়ো মিশ্রিত থাকে। এক কথায়, ইহার শব্দ সংক্ষিপ্ত, অর্থ অসীম।” ‘অতিমাত্রায় ঠিকঠাকের ভাবটা ভালো নয়, কি সাহিত্যে কি আচরণে শ্রীরক্ষা করিয়া চলিতে গেলে এই নিয়ম স্মরণ রাখা আবশ্ব্যক।’ ‘কোনো কোনো রচনারীতির একপ্রকার পরিষ্কার খোলাখুলি ভাব আছে, লেখকের মেজাজ হইতে তাহার জন্ম । সেটা আমাদের ভালো লাগিতে পারে কিন্তু সেটা চাইই চাই এমন কথা বলা যায় না।’ ‘ভণ্টেয়ারের লেখার এই গুণ, কিন্তু পুরাতন লেখকদের রচনায় ইহা দেখা যায় না। অতুলনীয় গ্রীক সাহিত্যের স্টাইলে সত্য সুষম এবং সৌহার্দ্য ছিল কিন্তু এই খোলাখুলি ভাবটা ছিল না। সৌন্দর্যের কতকগুলি মুখ্য উপাদানের সঙ্গে এই গুণটি ঠিক মিশে না। প্রবলতার সঙ্গে ইহা খাপ খাইতে পারে কিন্তু মর্যাদার সঙ্গে নহে। এই গুণটির মধ্যে একপ্রকার সাহসিকতা ও স্পর্ধা আছে বটে কিন্তু তেমনি ইহার মধ্যে একটা খাপছাড়া খিটখিটে ভাবও আছে।’ “যাহারা অর্ধেক বুঝিয়াই সন্তুষ্ট হয় তাহার অর্ধেক প্রকাশ করিয়াই খুশি থাকে ; এমনি করিয়াই দ্রুত রচনার উৎপত্তি।’