পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@ 88 রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগাযোগ যোগাযোগ ১৩৩৬ সালের আষাঢ় মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বিচিত্র পত্রে যোগাযোগ ধারাবাহিক ভাবে ( আশ্বিন ১৩৩৪ — চৈত্র ১৩৩৫ ) প্রকাশিত হইয়াছিল। প্রথম দুই সংখ্যায় উপন্যাসটি ‘তিন পুরুষ’ নামে প্রকাশিত হইয়াছিল। তৃতীয়বারে কবি ইহার ‘যোগাযোগ’ নাম দেন। এই উপলক্ষে বিচিত্রায় যে কৈফিয়ত প্রকাশিত হয় তাহ নিম্নে মুদ্রিত হইল— তিন পুরুষ' নাম ধরে আমার যে গল্পটা বিচিত্রায় বের হচ্ছে তার নাম রক্ষা করতেই হবে এমন কোনো দায় নেই। র্কাচ থাকতে থাকতেই ও নামটা বদল করব বলে স্থির করেছি। পাঠক-দরবারে তার কারণ নির্দেশ করি। নবজাত কুমারকুমারীদের নাম দেবার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ এসে থাকে, অবকাশমত সে অনুরোধ পালন করেও এসেছি। কারণ এতে কোনো দায়িত্ব নেই। ব্যক্তিসম্বন্ধে মামুষের নাম তার বিশেষণ নয়, সম্বোধন মাত্র । লাউয়ের বেঁটা নিয়ে Q লাউয়ের বিচার কেউ করে না, ওটাতে ধরবার সুবিধে । যার নাম দিয়েছি স্বশীল তার শীলতা নিয়ে আমার কোনো জবাবদিহি নেই। সুশীল-ঠিকানায় পত্র পাঠালে শব্দের সঙ্গে প্রয়োগের অসংগতিদোষ নিয়ে ডাকপেয়াদা কাগজে লেখালেখি করে না, ঠিক জায়গায় চিঠি পৌছোয়। ব্যক্তিগত নাম ডাকবার জন্যে, বিষয়গত নাম স্বভাবনির্দেশের জন্যে । মানুষকেও যখন ব্যক্তি বলে দেখি নে, বিষয় বলে দেখি, তখন তার গুণ বা অবস্থা মিলিয়ে তার উপাধি দিই— কাউকে বলি বড়োবউ, কাউকে বলি মাস্টারমশায় । সাহিত্যে যখন নামকরণের লগ্ন আসে দ্বিধার মধ্যে পড়ি । সাহিত্যরচনার স্বভাবটা বিষয়গত না ব্যক্তিগত এইটে হল গোড়াকার তর্ক। বিজ্ঞানশাস্ত্রে বিষয়টাই সর্বেসর্ব, সেখানে গুণধর্মের পরিচয়ই একমাত্র পরিচয় । মনস্তত্ত্বঘটিত বইয়ের শিরোনামায় যখনই দেখব ‘স্ত্রীর সম্বন্ধে স্বামীর ঈর্ষা", বুঝব বিষয়টিকে ব্যাখ্যা-দ্বারাই নামটি সার্থক হবে। কিন্তু ওথেলো নাটকের যদি ওই নাম হত পছন্দ করতুম না। কেননা এখানে বিষয়টি প্রধান নয়, নাটকটিই প্রধান। অর্থাৎ আখ্যানবস্তু, রচনারীতি, চরিত্রচিত্র, ভাষা, ছন্দ, ব্যঞ্জন, নাট্যরস, সবটা মিলিয়ে একটি সমগ্র বস্তু। একেই বলা চলে ব্যক্তিরূপ। বিষয়ের কাছ থেকে সংবাদ পাই, ব্যক্তির কাছ থেকে তার আত্মপ্রকাশ জনিত রস পাই । বিষয়কে বিশেষণের দ্বারা মনে বঁাধি, ব্যক্তিকে সম্বোধনের দ্বারা মনে রাখি ।