পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় (; 8(t এমন একটা-কিছু অবলম্বন করে গল্প লিখতে বসলুম যাকে বলা যেতে পারে বিষয়। যদি মূর্তি গড়তেম একতাল মাটি নিয়ে বসতে হত। অতএব ওটাকে ‘মাটি শিরোনামায় নির্দেশ করলে বিজ্ঞানে বা তত্ত্বজ্ঞানে বাধত না। বিজ্ঞান যখন কুণ্ডলকে উপেক্ষা ক’রে তার সোনার তত্ত্ব আলোচনা করে তখন তাকে নমস্কার করি । কিন্তু কনের কুগুল নিয়ে বর যখন সেই আলোচনাটাকেই প্রাধান্য দেয় তখন তাকে বলি বর্বর। রসশাস্ত্রে মূর্তিটা মাটির চেয়ে বেশি, গল্পটাও বিষয়ের চেয়ে বড়ে। এইজন্যে বিষয়টাকেই শিরোধা করে নিয়ে গল্পের নাম দিতে আমার মন যায় না। বস্তুত রসস্থষ্টিতে বৈষয়িকতাকে বড়ো জায়গা দেওয়া উচিত হয় না। যারা বৈষয়িক প্রকৃতির পাঠক তাদের দাবির জোরে সাহিত্যরাজ্যে হাটের পত্তন হলে দুঃখের বিষয় ঘটে। হাটের মালিক বিষয়বুদ্ধিপ্রধান বিজ্ঞান। এ দিকে সম্পাদক এসে বলেন, সংসারে নাম রূপ দুটোই অত্যাবশ্বক। আমি ভেবে দেখলুম, রূপের আমরা নাম দিই, বস্তুর দিই সংজ্ঞা। সন্দেশ যেখানে রূপ সেখানে তাকে বলি ‘অবাক চাকি', যেখানে বস্তু সেখানে তাকে বলি মিষ্টান্ন। সম্পাদকমশায়ের সংজ্ঞা হচ্ছে ‘সম্পাদক’, এখানে অর্থ মিলিয়ে আদালতে হলফ করে বলতে পারি শব্দের সঙ্গে বিষয়ের ষোলো আনা মিল আছে। কিন্তু যেখানে তিনি বিষয় নন, রূপ, অর্থাৎ স্বতন্ত্র ও একমাত্র, সেখানে কোনো একটামাত্র সংজ্ঞা দিয়ে তাকে বাধা অসম্ভব। সেখানে তার আছে নাম। সেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে শত্রু মিত্র কেউ তার যাচাই করে না । পিতামাতা যদি তাকে ‘সম্পাদক’ নামই দিতেন তবে নাম সার্থক করবার জন্যে সম্পাদক হবার কোনো দরকারই তার থাকত না । গল্প জিনিসটাও রূপ ; ইংরেজিতে যাকে বলে ক্রিয়েশন । আমি তাই বলি গল্পের এমন নাম দেওয়া উচিত নয় যেটা সংজ্ঞা, অর্থাৎ যেটাতে রূপের চেয়ে বস্তুটাই নির্দিষ্ট । 'বিষবৃক্ষ’ নামটাতে আমি আপত্তি করি। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ নামে দোষ নেই। কেননা ও নামে গল্পের কোনো ব্যাখ্যাই করা হয় নি। ও সম্পাদকমশায় যখন গল্পের নামের জন্যে পেয়াদা পাঠালেন তাড়াতাড়ি তখন ‘তিন পুরুষ’ নামটা দিয়ে তাকে বিদায় করা গেল। তার পরক্ষণেই নামটা কাহিনীর. আঁচলের সঙ্গে তার গ্রন্থিবন্ধন করে নিয়ে কানে কানে মুহূর্তে মুহূর্তে বলতে লাগল : ষদেতং অর্থং মম তদন্তু রূপং তব । আমার সঙ্গে তোমাকে সম্পূর্ণ মিলে চলতে হবে। ছায়েবাহুগতাস্বচ্ছ ইত্যাদি। কাহিনী বলে, তার মানে কী হল ? নাম বলে, বাক্যে ভাবে আজ থেকে আমাকে সপ্রমাণ করে চলাই তোমার ধর্ম। কাহিনী বলে, রেজিস্টার বইয়ে কর্তার তাড়ায় সম্মতি সই করেছি বটে, কিন্তু আজ আমি হাজার