পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 8b" রবীন্দ্র-রচনাবলী বঙ্গভাষার প্রথম স্তর তিনি নির্মাণ করিয়াছেন, বিধবার দুঃখমোচনের জন্য নিষ্ঠুর সমাজের সহিত তিনি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করিয়াছেন, দেশের বিদ্যাশিক্ষা স্বদেশীয়ের দ্বারা সাধন করিবার ভার লইয়া তিনি কৃতকার্য হইয়াছেন এবং এই অলস অকৰ্মণ্য অকুদার দেশে আপনাকে একনিষ্ঠ পরহিতব্ৰত অধ্যবসায় ও নিঃস্বাৰ্থ বদান্ততার উজ্জ্বলতম আদর্শস্থল করিয়া তুলিয়াছেন— আর, যে বঙ্গদেশ তাহার জীবনের রক্তে জীবন পাইয়াছে সে আজ বহুকষ্টে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিবার উপলক্ষে দুই-চারিবার সামান্য ব্যর্থ চেষ্টা দেখাইয়াই আপনাকে ঋণমুক্ত জ্ঞান করিয়া সম্পূর্ণ আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়াছে। ‘আজ বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর পরেও আমরা সভা ডাকিয়া সাময়িক পত্রে বিলাপহুচক প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়া আপনার কর্তব্য সাধন করিতে উদ্যত হইয়াছি। তাহার অধিক আর কিছুতে হস্তক্ষেপ করিতে সাহস হয় না। প্রতিমূর্তি-প্রতিষ্ঠা বা কোনোরূপ স্মরণচিহ্ন-স্থাপনের প্রস্তাব করিতে প্রবৃত্তি হয় না। পূর্ব অভিজ্ঞতা হইতে জানা গিয়াছে যে, চেষ্টা করিয়া অকৃতকার্য হইবার সম্ভাবনা অধিক। উপর্য পরি বারম্বার অকৃতজ্ঞতা ও অনুৎসাহের পরিচয় দিলে ক্রমে আর আত্মসন্ত্রমের লেশমাত্র থাকিবে না, এবং ভবিষ্যতে প্রবন্ধ লিখিয়া শোকের আড়ম্বর করিতেও কুষ্ঠিত বোধ করিতে হইবে। উপকার গ্রহণ করিবার শক্তির সঙ্গে সঙ্গে কৃতজ্ঞতার শক্তিও বাড়িতে থাকে । আমাদের দেশের জাতীয় স্বাস্থ্যের অবস্থা এখনও সেরূপ দাড়ায় নাই যাহাতে আমরা কোনো মহৎ লোকের দৃষ্টান্ত বা কার্য অস্তরের মধ্যে যথার্থরূপে পরিপাক করিয়া লইয়৷ তাহার ফল উপলব্ধি করিতে পারি। আমাদের কানের কাছে ক্রমাগতই বলা আবশ্যক, তোমার এতখানি উপকার করা হইল, তুমি এতটা লাভ করিলে, তোমার এতখানি পথ নিষ্কণ্টক হইল, অমুক তোমার এতবড়ো সুহৃদ। এইরূপে কৃত্রিম উপায়ে মন্থন করিয়া কিঞ্চিৎ কৃতজ্ঞতা হৃদয়ের উপরিভাগে ফেনিল করিয়া তোলা যাইতে পারে, কিন্তু তাহাকে কোনোরূপ স্থায়ী পদার্থে পরিণত করা যাইতে পারে না। দেখিতে দেখিতে কতকটা বাপ বিসর্জন করিয়া কোথাও কোনো চিহ্নমাত্র না রাখিয়া তাহ বিলীন হইয়া যায় । ‘ষে দেশের এমন দুরবস্থ৷ সেই দেশেই মহৎ লোকের নিঃস্বার্থ আত্মবিসর্জনের আবশ্বক সর্বাপেক্ষ অধিক। সহায়তা নাই, কৃতজ্ঞতা নাই, অমুকুলত নাই, কেবল আপনার অন্তরের অপ্রতিহত ধৈর্য ও উপবাসসহিষ্ণু অকাতর অনুরাগে চিরজীবন একাকী বসিয়া কাজ করিয়া যাইতে হইবে। ‘সেইজন্য যে কয়েকটি মহাত্মা আমাদের দেশের কাজে জীবন বিসর্জন করিয়া