পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Qのや সমস্ত বঙ্গসাহিত্যের মর্মস্থলে ঐস্বরূপে বিরাজ করিতেছিল এখন সে স্থান শূন্ত । সেইজন্য এখনকার সাহিত্যের বিশেষ কোনো আকারপ্রকার দেখা যায় না ; তাহার আয়তন বৃদ্ধি হইতেছে কিন্তু তাহার রূপ নাই ; তাহার কোনো লক্ষণ নাই, আদর্শ নাই, বিবেকশক্তি নাই, তাহার পক্ষে সকল পথই সমান। সংসারযুদ্ধে বঙ্গসাহিত্যের সারথি কৃষ্ণ যেন আজ তাহাকে পরিত্যাগ করিয়াছেন। সাহিত্যক্ষেত্রে কৃষ্ণের সহিত আমি আজ বঙ্কিমের তুলনা করিলাম। বঙ্কিমের মহাগ্রন্থ ‘কৃষ্ণচরিত্র পাঠ করিলে লেখকের সহিত লেখকের অাদর্শ-চরিত্রের সাদৃশ্য স্বতই মনে উদযু হয়। কৃষ্ণচরিত্র সম্বন্ধে আধুনিক সাহিত্যে স্বতন্ত্র প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ আলোচনা করিয়াছেন ; বর্তমান প্রবন্ধেও বলিতেছেন – বঙ্কিম যেখানে ইষ্টকের উপর ইষ্টক স্থাপন করিয়া সমুন্নত সুদৃঢ় প্রাসাদ নির্মাণ করিয়াছেন, এখনকার কোনো হৃদয়াধিক্যবিশিষ্ট লেখক সে স্থলে প্রচুর বাম্পোচ্ছাসযোগে বেলুন নির্মাণ করিয়া একেবারে মেঘরাজ্যে ছাড়িয়া দিতেন— কিন্তু সে বেলুন যতই উচ্চে উঠুক না কেন তাহ ভিত্তিহীন, তাহ কিছু কালের জন্য সাধারণের কৌতুহলজনক, কিন্তু বাসযোগ্য নহে, এবং সেই বেলুনযোগে যিনি আপন যশকে উর্ধ্বে উডউীন করিয়া দিতেন, একদিন আকস্মিক পতনে অপমৃত্যুর জন্য সে যশকে প্রস্তুত হইয়া থাকিতে হইত। বঙ্কিম গীতার উপদেশ-অনুসারে কেবলমাত্র আপনার কর্ম করিয়া গিয়াছেন, ফললাভের প্রতি দৃকপাত করেন নাই। তিনি নিজে কৃষ্ণকে পরিপূর্ণ ভক্তি করিতেন, অথচ আধুনিক কৃষ্ণভক্তদিগকে প্রসন্ন করিবার কোনো চেষ্টা করেন নাই ; তিনি কৃষ্ণের দেবত্বে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিতেন, অথচ বহুষত্বে বহু সাবধানে কৃষ্ণচরিত্র হইতে সমস্ত অলৌকিক অংশ দূর করিয়া দিয়াছেন ; আমাদের দেশের লোকের যে অন্ধভক্তি এবং নির্বিচার অতিবিশ্বাসের দিকে প্রবণতা আছে বঙ্কিম র্তাহার সমস্ত রচনায় কোথাও তাহার পোষণ বা সমর্থন করেন নাই, বরং প্রতিপদে তাহাকে আঘাত করিয়া গিয়াছেন ॥২ “যুক্তিবিচারকে প্রাধান্ত না দিয়া বঙ্কিম যদি নিজেই গুরু সাজিয়া দাড়াইতেন, অনুসন্ধান-দ্বারা সত্যের দিকে পথ নির্দেশ না করিয়া তিনি যদি নিজেকেই ধ্রুবতারা ২ বৰ্তমান গ্রন্থের পৃ. ৪•৬, ৭ম ও ৮ম ছত্রের অস্তত্বনিবিষ্ট ছিল।