পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& ©br রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া উপভোগ করিতে পারিলাম। আমার মনে পড়িতে লাগিল, অল্প বয়সে যখন রবিবারে স্কুলের ছুটির দিন অন্তঃপুরের নির্জন ছাদে বসিয়া কপালকুণ্ডলা পড়িয়াছিলাম তখন কেমন লাগিয়াছিল— কোথাকার এক পথবিহীন বনচ্ছায়াঘন কল্পনালোক হইতে উদভ্ৰান্ত সৌন্দর্যসমীরণ আসিয়া নগরবাসী বালকের বিস্মিত হৃদয়কে পুলকিত ব্যাকুলতায় পরিপূর্ণ করিয়া দিয়াছিল। মনে পড়িতে লাগিল, যখন মাসে মাসে বঙ্গদর্শনে খণ্ড খণ্ড করিয়৷ 'বিষবৃক্ষ’ ‘চন্দ্রশেখর’ ‘কৃষ্ণকাস্তের উইল’ বাহির হইতেছিল তখন মাসে মাসে আনন্দের আগ্রহে অন্তঃকরণ কিরূপ ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিত। চারাগাছ যেরূপ প্রতি রাত্রি অবসানে নূতন ব্যগ্রতার সহিত স্বর্যালোক পান করিতে থাকে, মাসান্তে বঙ্গদর্শনের অভু্যদয়ে সেইরূপ ঔংস্থক্যের সহিত মুকুলিত অস্তরের প্রত্যেক উন্মুখ অগ্রভাগের দ্বারা আনন্দরশ্মি গ্রহণ করিতে থাকিতাম। তখন এত বই পড়ি নাই এবং সমালোচনা যাহা পড়িতাম তাহাও বঙ্গদর্শন হইতে । আজ তাহার ডবল বয়সে নির্জনে রাজসিংহ পড়িয়া সাহিত্যের সহিত সেই আমার প্রথম কৈশোরু প্রণয়ের কথা মনে পড়িয়া গেল । ‘মনে করিলাম এই গ্রন্থ সম্বন্ধে একটা-কিছু লিখিয়া ফেলি। কিন্তু সমালোচন৷ লিখিতে হইবে মনে করিলেই ভয় হয়। একটা তো আগাগোড়া ফাদিয়া বসিতে হইবে— একটা তো নূতন কথার অবতারণা করিতে হইবে। গ্রন্থের মধ্য হইতে এমন একটা-কিছু আবিষ্কার করিতে হইবে যাহার অস্তিত্ব সম্বন্ধে গ্রন্থকার এবং পাঠকবর্গ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। ‘রাজসিংহের মধ্যে সে প্রকারের অপরূপ রহস্য অবশুই কিছু আছে, তাহার সন্ধানের ভার অামি বিজ্ঞ সমালোচকদের উপর রাখিয়া দিলাম। আমি কেবল এইটুকু বলিতে চাহি আমার হৃদয়ে যে সাহিত্যরসপিপাসা আছে এ গ্রন্থ পাঠে তাহার কতটা পরিতৃপ্তি হইল। ‘এক হিসাবে সে কাজটা সহজ, এক হিসাবে শক্তও বটে। আলোচ্য গ্রন্থের কোনো-এক অনালোকিত গোপন প্রাস্ত হইতে কোনো একটা তত্ত্বকথা যদি°সমূলে উৎপাটিত করিয়া আনা যায় তবে সেইটাকে অবলম্বন করিয়া সংগত এবং অসংগত অনেক কথা বলিয়া লওয়া সহজ হয় । “কিন্তু ভালো লাগিল এ কথাটা বড়ো শীঘ্ৰ শেষ হইয়া যায়, সেটাকে একটা রীতিমত প্রবন্ধাকারে প্রতিষ্ঠিত করিয়া তোলা সকল সময়ে স্বসাধ্য বোধ হয় না । ‘আবার, যখন ভালো লাগে তখন কেন ভালো লাগে, কেমন করিয়া ভালো লাগে, তাহার চেতন থাকে না— উচ্ছসিত সংক্ষিপ্ত হর্ষধ্বনি ছাড়া মুখ দিয়া আর