পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δ8 Ν s রবীন্দ্র-রচনাবলী সতীশ । সে কথাও ভেবেছি। তা হলেই আমার লজ্জা পুরো হয়। এক-একবার মনে করি, সংসারে যত মুশকিল সব আমারই ? বরুণ নদীর বাপ কি কোনােকালে ছিল না। যে-রকম দেখছি, একটা কোনাে গল্প বলে নেকলেসটা ফিরিয়ে আনতে হবে, তার পরে আমার নিজের গলায় পরিবার জন্যে গয়না মিলবে। বিধুমুখী। সে আবার কী। সতীশ । একগাছা দড়ি । বিধুমুখী। দেখ, আমাকে আর রোজ রোজ কঁাদাস নে। আমার রক্ত শুকিয়ে গেল, চােখের জলও বাকি নেই। এক দিকে তাের বাবা, আর-এক দিকে তুই-উপরে সরার চাপ আর নীচে আগুন, আমি যে গুমে v সতীশের মাসি সুকুমারী ও মেসোেমশায় শশধরবাবুর প্রবেশ এসো দিদি, বোসো। আজ কোন পুণ্যে রায়মশায়ের দেখা পাওয়া গেল। দিদি না আসলে তোমার আর দেখা পাবার জো নেই। শশধর । এতেই বুঝবে তোমার দিদির শাসন কী কড়া। দিনরাত্রি চোখে চোখে রাখেন। সুকুমারী। তাই বটে, এমন রত্ন ঘরে রেখেও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমানাে যায় না। বিধুমুখী। নাক ডাকার শব্দে ! সুকুমারী। সতীশ, ছিছি, তুই এ কী কাপড় পরেছিস। তুই কি এইরকম ধুতি পরে কলেজে যাস নাকি । বিধু, ওকে যে লাউঞ্জ সুন্টটা কিনে দিয়েছিলেম, সে কী হল। বিধুমুখী। সে ও কোনকালে ছিড়ে ফেলেছে। সুকুমারী। তা তো ছিড়বেই। ছেলেমানুষের গায়ে এক কাপড় কতদিন টেকে। তা, তাই বলে কি আর নূতন সুট তৈরি করাতে নেই। তাদের ঘরে সকলই অনাসৃষ্টি। বিধুমুখী। জােনই তো দিদি, তিনি ছেলের গায়ে সভ্য কাপড় দেখলেই আগুন হয়ে ওঠেন। আমি যদি না থাকতেম তো তিনি বােধ হয় ছেলেকে দোলাই গায়ে দিয়ে কোমরে ঘুনসি পরিয়ে ইস্কুলে পাঠাতেন— মা গো, এমন সৃষ্টিছাড়া পছন্দও কারও দেখি নি। সুকুমারী। মিছে না। এক বৈ ছেলে নয়, একটু সাজাতে-গোজাতেও ইচ্ছা করে না ? এমন বাপও তে দেখি নি। সতীশ, আমি তোর জন্য একসুট কাপড় র্যামজের ওখানে অর্ডার দিয়ে রেখেছি। আহা न केि अंश श्श ना । সতীশ । এক সুটে আমার কী হবে, মসিমা । লাহিড়-সাহেবের ছেলে আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ে— :ে আমাকে তাদের বাড়িতে টেনিস খেলায় নিমন্ত্রণ করেছে, আমি নানা ছুতো করে কাটিয়ে দিই। আমার তে কাপড় নেই। لائب শশধর । তেমন জায়গায় নিমন্ত্রণে না যাওয়াই ভালো, সতীশ । সুকুমারী। আচ্ছা আচ্ছা, তোমার আর বক্তৃতা দিতে হবে না। ওর যখন তোমার মতন বয়স হবে VO শশধর। তখন ওকে বক্তৃতা দেবার অন্য লোক হবে, বৃদ্ধ মেসোর পরামর্শ শোনবার অবসর হবে না । সুকুমারী। আচ্ছা মশায়, বক্তৃতা করবার অন্য লোক যদি তোমাদের ভাগ্যে না জুটত, তবে তোমাদের বঁ দশা হত বলো দেখি । শশধর । সে কথা বলে লাভ কী। সে অবস্থা চোখ বুজে কল্পনা করাই ভালো । ভূত্যের প্রবেশ ভৃত্য। কর্তবাবু লোহার সিন্দুকের চাবি চেয়েছেন। সতীশ । (কানে কানে) সর্বনাশ মা, সর্বনাশ। নিশ্চয় গুড়গুড়ির খোজ পড়েছে।