পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVbr রবীন্দ্র-রচনাবলী । সতীশ । ভয় নেই- পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে। শশধর । তবে কি তুমিসতীশ । তাই বটে মেসোেমশায়, যা সন্দেহ করছ, তাই। আমি চুরি করে মসির ঋণ শোধ করেছি। আমি চোর। মা, তুমি শুনে খুশি হবে, আমি চাের, আমি খুনী ! তোমার কীর্তি পুরো হল। এখন আর কঁদতে হবে না— যাও তুমি, যাও তুমি, যাও যাও, আমার সম্মুখ থেকে যাও । আমার অসহ্য বােধ হচ্ছে। শশধর । সতীশ, তুমি আমার কাছেও তো কিছু ঋণী আছ, তাই শোধ করে যাও । সতীশ । বলে কেমন করে শোধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি । শশধর । ঐ পিস্তলটি । ኩ፡ সতীশ । এই দিলাম। আমি জেলেই যাব । না গেলে আমার পাপের ঋণ শোধ হবে না । শশধর । পাপের ঋণ শান্তির দ্বারা শোধ হয় না। সতীশ, কর্মের দ্বারাই শোধ হয়। তুমি নিশ্চয় জেনো, আমি অনুরোধ করলে তোমার বড়ো-সাহেব তোমাকে জেলে দেবেন না। এখন থেকে জীবনকে সার্থক করে বেঁচে থাকো । সতীশ । মেসোেমশায়, আমার পক্ষে বীচা যে কত কঠিন তা তুমি জানো নাশশধর । তবু বাঁচতে হবে, আমার ঋণের এই শোধ। আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারবে না। সতীশ । তবে তাই হবে । শশধর । আমার একটা অনুরোধ শোনো । তোমার মাকে আর মাসিকে ক্ষমা করো। বিধুমুখী। বাবা, আমার কপালে ক্ষমা না থাকে, নাই থাক, ভগবান তোকে যেন ক্ষমা করেন। দিদির কাছে যাই । তার পায়ে ধরি গে । [প্ৰস্থান শশধর । তবে এসো সতীশ, আমার ঘরে আজ আহার করে যেতে হবে । - দ্রুতপদে নলিনীর প্রবেশ নলিনী | সতীশ ! नऊँीभ । दी नलिी । নলিনী! এর মানে কী ? এ চিঠি তুমি আমাকে কেন লিখেছ। সতীশ । মানে যেমন বুঝেছিলে সেইটেই ঠিক। আমি তোমাকে প্রতারণা করে চিঠি লিখি নি। তবে আমার ভাগ্যক্রমে সকলই উলটাে হয়। তুমি মনে করতে পাের, তোমার দয়া উদ্রেক করবার জন্যই আমিকিন্তু মেসোেমশায় সাক্ষী আছেন, আমি অভিনয় করছিলেম না- তবু যদি বিশ্বাস না হয় প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবার এখনো সময় আছে ! নলিনী। কী তুমি পাগলের মতো বাকছ। আমি তোমার কী অপরাধ করেছি যে তুমি আমাকে এমন সতীশ । যেজন্য আমি এই সংকল্প করেছি। সে তুমি জান, নলিনী- আমি তো একবৰ্ণও গোপন করিনি, তবু কি আমার উপর শ্রদ্ধা আছে। নলিনী। শ্রদ্ধা! সতীশ, তোমার উপর ঐজন্যই আমার রাগ ধরে। শ্রদ্ধা— ছিছি, শ্রদ্ধা তো পৃথিবীতে অনেকেই অনেককে করে। তুমি যে-কাজ করেছ। আমিও তাই করেছি- তোমাতে আমাতে কোনো ভেদ রাখি নি। এই দেখো, আমার গহনাগুলি সব এনেছি - এগুলো এখনো আমার সম্পত্তি নয়- এগুলি আমার বাপ-মায়ের। আমি তাদের না বলে চুরি করেই এনেছি, এর কত দাম হতে পারে আমি কিছুই জানি নে ; কিন্তু এ দিয়ে কি তোমার উদ্ধার হবে না। শশধর। উদ্ধার হবে ; এই গহনাগুলির সঙ্গে আরো অমূল্য যে-ধনটি দিয়েছ তা দিয়েই সতীশের উদ্ধার হবে ।