পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহপ্ৰবেশ। Sbr\C) মাসি। বেশ তো বাছা, একগাছি সোনার হার পাঠিয়ে দাও, তোমার মা খুশি হবেন। মণি । ভাবছি, আমি যাব। আমার ছোটাে বোনকে তো দেখি নি, দেখতে ইচ্ছে করে। মাসি। ওমা, সে কী কথা । যতীনকে একলা ফেলে যাবে ? মণি। ফিরতে আমার খুব বেশি দেরি হবে না। মাসি। খুব বেশি দেরি হবে কি না তা কে বলতে পারে, মা। সময় কি আমাদের হাতে। চোখের এক १ळक (झिं शंका यश ! 唱 মণি । তিন ভাইয়ের পরে বড়ো আদরের মেয়ে, ধুম করে অন্নপ্রাশন হবে। আমি না গেলে মা ভারিমাসি। তোমার মায়ের ভাব, বাছা, বুঝতে পারি নে— কান্নার সাত সমুদ্রে ঘেরা যাদের প্রাণ, তোমার মাও তো সেই মায়েরই জাত, তবু তিনি মানুষের এতবড়ো ব্যথা বোঝেন না, ঘন ঘন কেবলই ডেকে ডেকে নিয়ে যান মণি । দেখো মাসি, তুমি আমার মাকে খোঁটা দিয়ে কথা কোয়েনা বলছি। তবু যদি আপন শাশুড়ি হতে, তা হলেও নয় সহ্য করতুম, কিন্তু মাসি। আচ্ছা মণি, অপরাধ হয়েছে, আমাকে মাপ করো। আমি শাশুড়ি হয়ে তোমাকে কিছু বলছি নে, আমি একজন সামান্য মেয়েমানুষের মতোইমিনতি করছি-যতীনের এই সময়ে তুমি যেয়ে না। যদি যাও তোমার বাবা রাগ করবেন, সে আমি নিশ্চয় জানি । মণি । তা জানি, তোমাকে একলাইন লিখে দিতে হবে মাসি। এই কথা বোলো যে, আমি গেলে বিশেষ (KN- ኧ মাসি। তুমি গেলে কোনাে ক্ষতিই নেই, সে কি আমি জানি নে। কিন্তু তোমার ব্যাপকে যদি লিখতে হয়, আমার মনে যা আছে খুলেই লিখব। মণি । আচ্ছা বেশ, তোমাকে লিখতে হবে না। আমি ওঁকে গিয়ে বললেই উনিমাসি। দেখো বউ, অনেক সয়েছি, কিন্তু এই নিয়ে যদি তুমি যতীনের কাছে যাও কিছুতেই সইব না। মণি । আচ্ছা, থাক তোমাদের চিঠি । বাপের বাড়ি যাব তার এত হাঙ্গামা কিসের। উনি যখন জর্মনিতে পড়তে যেতে চেয়েছিলেন তখনই তো পাসপোর্টের দরকার হয়েছিল। আমার বাপের বাড়ি জমনি নাকি ? মাসি। আচ্ছা, আচ্ছা, অত চেচিয়ে কথা কোয়ে না। ঐ বুঝি আমাকে ডাকছে। যাই, যতীন। কী জানি, শুনতে পেয়েছে কি না । [প্ৰস্থান মাসি। আমাকে ডাকছিলে, যতীন ? যতীন। হাঁ, মাসি। শুয়ে শুয়ে ভাবছিলুম, উপায় নেই, আমি তো বন্দী ; অসুখের জাল দিয়ে জড়ানো, দেয়াল দিয়ে ঘেরা- সঙ্গে সঙ্গে মণিকে কেন এমন বেঁধে রাখি । মাসি। কী যে বলিস যতীন, তার ঠিক নেই। তোর সঙ্গে যে ওর জীবন বাধা, তুই খালাস দিতে চাইলেই কি ওর বাঁধন খসবে । যতীন। একদিন ছিল যখন স্ত্রী সহমরণে যেত, সে অন্যায় তো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মণির আজ এ যে পলে পলে সহমরণ, বেঁচে থেকে সহমরণ । মনে করে আমার প্রাণ ইপিয়ে ওঠে- এর থেকে ওকে দাও মুক্তি মাসি, দাও মুক্তি। ' মাসি। আজ এমন কথা হঠাৎ কেন বলছিস, যতীন। স্বপ্নের ঘোরে এক কথা আর হয়ে তোর কানে পীেচেছিল নাকি । S S S S যতীন। না না, অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলুম, ঝাউগাছের ঝরঝর শব্দ, নদীতে জোয়ার, দূরে বউ-কথা-কও পাখির ডাক। মনে পড়ছিল, মণির সেই কুসমি রঙের শাড়ি, আর কুকুরের সঙ্গে দেখােল, আর বিনা-কারণে হাসি। ওরা দুরন্ত প্ৰাণ, এই মরা দেওয়ালগুলোর মধ্যে কেন। দাও দুটি ওকে। কতদিন এ বাড়িতে ওর