পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Str8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হাসিই শুনতে পাইনি। ওর স্রোতে নবীন জোয়ার, সে কি ঐ সব ওষুধের শিশি, আর রুগীর পথ্যের বাধ বেঁধে আটকে দেবে। আমার মনে হচ্ছে, অন্যায়- ভারি অন্যায়। মাসি । কিছু অন্যায় না, একটুও অন্যায় না। যার প্রাণ আছে সেই তো প্ৰাণ দিতে পারে। বর্ষণ তো ভরা মেঘের। উঠে বসিস নে যতীন, শো- অমন ছটফট করতে নেই। কোথায় মণিকে পাঠাতে চাস, বল, আমি বুঝতে পারছি নে। ] যতীন। নাহয় মণিকে ওর বাপের বাড়ি- ভুলে যাচ্ছি। ওর বাবা এখন কোথায়মাসি। সীতারামপুরে। . যতীন। হাঁ, সীতারামপুরে। সে খোলা জায়গা, সেখানে ওকে পাঠিয়ে দাও। মাসি । শোনো একবার। এই অবস্থায় তোমাকে ফেলে বাপের বাড়ি যেতে চাইবেই বা কেন । যতীন । ডাক্তার কী বলেছে, সে কথা কি সেমাসি। তা সেনাই জানলে। চােখে তো দেখতে পাচ্ছে। সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমনি একটু ইশারায় বলা, অমনি বউ কেঁদে অস্থির। যতীন। সত্যি মাসি, বউ কঁদলে ? সত্যি ? তুমি দেখেছ ? মাসি। যতীন, উঠিস নে উঠিস নে, শো। ঐ যাঃ, ভঁড়ার ঘর বন্ধ করতে ভুলে গেছি- এখনই ঘরে কুকুর ঢুকবে। আমি যাই, তুমি একটু ঘুমেও যতীন। যতীন। আমি এইবার ঠিক ঘুমোব, তুমি ভেবাে না। কেবল একটা কথা— গৃহপ্ৰবেশের শুভদিন ঠিক করে দাও । ፩ মাসি। কী বলছিস যতীন, তোর এ অবস্থায়যতীন। তোমরা বিশ্বাস করতে পার না- আমার মন বলছে, গৃহপ্রবেশের দিন এল বলে। আমি যেতে পারব, নিশ্চয় যেতে পারব। এইবেলা থেকে সব প্রস্তুত করোগে । তখন যেন আবার দেরি না হয়। মাসি। তা হবে, হবে, কিছু ভাবিস নে। যতীন। মণিকেও এইবেল বলে রাখে। তারও তাে কাজ আছে ? মাসি। আছে বৈকি যতীন, আছে। যতীন । তুমি আমাদের দুজনকে বরণ করে নেবে - আচ্ছা মাসি, আমার একটা প্রশ্ন মনে আসে, ভয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারি নে। তুমি বলতে পাের ? পাটের বাজার কি এর মধ্যে চড়েছে। মাসি । ঠিক তো জানি নে । অখিল কী যেন বলছিল। যতীন। কী, কী, কী বলছিল। তোমাকে ভয় দেখাতে ইচ্ছে করে না, কিন্তু এ কথা নিশ্চয়, যদি বাজার না। চড়ে থাকে তা হলে— মাসি । কী আর হবে । যতীন। তা হলে আমার এ বাড়ি- এক মুহূর্তে হয়ে যাবে মরীচিকা। ঐ-যে, ঐ-যে, আমাদের আড়াতের গোমস্তা । নরহরি, নরহরি মাসি। যতীন, চেচিয়ে না, মাথা খাও, স্থির হয়ে শোও। আমি যাচ্ছি, ওর সঙ্গে কথা কয়ে আসছি। যতীন। আমার ভয় হচ্ছে, যেনে- মাসি, যদি বাজার খারাপই হয়, তুমি অখিলকে বলে কোনোরকম t ܚ-؟ܐܰ)◄ মাসি। আচ্ছা, অখিলের সঙ্গে কথা কব। তুই এখনযতীন। জান, মাসি ? আমি যে টাকা ধার নিয়েছিলুম। সে অখিলেরই টাকা অন্যের নাম করেমাসি। আমিও তাই আন্দাজ করেছি। যতীন। কিন্তু দেখো, নরহরিকে তুমি আমার কাছে আসতে দিয়ে না-আমার ভয় হচ্ছে পাছে কী বলে বসে। আমি সইতে পারব না, তুমি ওকে অখিলের কাছে নিয়ে যাও। মাসি । তাই যাচ্ছিযতীন । তোমার কাছে পাজিটা যদি থাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তো ।