পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহপ্ৰবেশ 8br፩ প্রতিবেশিনীর প্রবেশ প্রতিবেশিনী। ঠানদি ? ওমা এ কী কাণ্ড । তোমার বউ নাকি বাপের বাড়ি চলল। মসি । তা কী হয়েছে। তা নিয়ে তোমাদের অত ভাবনা কেন । প্রতিবেশিনী। তা তো বটেই, আমাদের কী বলো। যতীনবাবুকে পাড়ার লোক সবাই ভালোবাসে সেইজনেই- . মাসি। হাঁ, সেইজনেই যতীন যাকে ভালোবাসে তােমরা সকলে মিলে তার— প্রতিবেশিনী। তা বেশ ঠানদিদি, মণি খুবই ভালো কাজ করেছে। অত ভালো খুব কম মেয়েতেই করতে PT | মাসি । স্বামীর ইচ্ছা মেনে যে-শ্ৰী চলে তাকেই তো তোমরা ভালো বল ! মণি আমাদের সেই স্ত্রী । প্রতিবেশিনী । ইয়া, সে তো দেখতে পাচ্ছি। মাসি। মণি ছেলেমানুষ, রুগীর কাছে বদ্ধ হয়ে আছে, তাই দেখে যতীন কিছুতে সুস্থির হতে পারছিল না । শেষকালে ডাক্তারবাবুর মত নিয়ে তবে তো ও- তা থাকগে । তোমরা যত পাের পাড়ায় পাড়ায় নিন্দে করে বেড়াওগে । যতীনের কানের কাছে আর কেঁচামেচি কোরো না । প্রতিবেশিনী। বাস রে। মণি যে কোন দুঃখে ঘন ঘন বাপের বাড়ি যায় সে বোঝা যাচ্ছে। [প্ৰস্থান ডাক্তারের প্রবেশ ডাক্তার। ব্যাপারখানা কী। দরজার কাছে এসে দেখি, বাক্স তােরঙ্গ গাড়ির মাথায় চাপিয়ে বউমা তার ভাইয়ের সঙ্গে কোথায় চলল। আমাকে দেখে একটুও সবুর করলে না। রোগীর অবস্থার কথা কিছু জিজ্ঞাসা করা, তাও না। ওর সঙ্গে ঝগড়া করেছেন বুঝি ?-- भनि निक्रद्धन्न দেখুন, রোগীর এই অবস্থায় অন্তত এই কিছুদিনের জন্যে বউয়ের সঙ্গে আপনার শাশুড়িগিরি নাহয় বন্ধই রাখতেন । মাসি। পারি। কই, ডাক্তার। স্বভাব মালেও যায় না। একসঙ্গে ঘরে থাকতে গেলেই দুটাে বাকবাকি হয় বৈকি । ডাক্তার। তা বউ-যে গাড়ি ডাকিয়ে এনে চলে গেল, আপনি একটু নিবারণ করলেই তো হত। মাসি নিরুত্তর কী জানি, বোধ করি গেল বলেই আপনি হাফ ছেড়ে বীচলেন। কিন্তু আমি আপনাকে স্পষ্টই বলছি, এমনি করে বউকে নির্বাসনে দিয়ে আপনি প্রতি মুহুর্তে যে যতীনের আশাভঙ্গ করছেন, তাতে তার কেবলই প্রাণহানি হচ্ছে। রুগীর প্রতি আমাদের কর্তব্য সব আগে, সেইজন্যেই আমাকে এমন পষ্ট কথা বলতে হল, নইলে আপনাদের শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়ার মধ্যে কথা কবার অধিকার আমার নেই। মাসি। যদি দোষ করে থাকি, তা নিয়ে তর্ক করে তো কোনো ফল নেই। আমি-যে নিজেকে খাটো করে বউকে ফিরে আসতে চিঠি লিখব, সে প্ৰাণ ধরে পারব না, তা তুমি আমাকে গালই দাও। আর যাই কর। এখন | তুমি এক কাজ করতে পার ডাক্তার ? ডাক্তার। কী, বলুন। মাসি। সীতারামপুরে বউয়ের বাবাকে একখানা চিঠি লিখে দাও। তাতে লিখে যতীনের কী অবস্থা। বউমার বাবাকে আমি যতদূর জানি তাতে আমার নিশ্চয় বিশ্বাস, তিনি সে চিঠি পেলেই বউমাকে নিয়ে এখানে আসবেন । ডাক্তার। আচ্ছা, লিখে দিচ্ছি। কিন্তু বউমা-যে বাপের বাড়ি চলে গেছেন, এ খবর যেন কোনােমতেই যতীন জানতে না পায়। আমি আপনাকে বলেই রাখছি। এ খবরের উপরে আমার কোনো ওষুধই খাটবে סצופא