পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NObr -- রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা। বেশ, বেশ, এটা মধুর লাগল বটে। নটরাজ। কিন্তু মহারাজ, কেবলমাত্র মধুর ? সেও তো অসম্পূর্ণ ? রাজা। ঐ দেখো, যেমনি আমি বলেছি মধুর অমনি তার প্রতিবাদ। তোমাদের দেশে সোজা কথার চলন নেই বুঝি ? নটরাজ। মধুরের সঙ্গে কঠোরের মিলন হলে তবেই হয় হরপার্বতীর মিলন। সেই মিলনের গানটা ों ! বঞ্জ-মানিক দিয়ে গাথা আষাঢ় তোমার মালা । তোমার শ্যামল শোভার বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা । তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে, মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফুলের ডালা। মরো মরো পাতায় পাতায় ঝরে ঝরো বারির রবে, গুরু গুরু মেঘের মাদল বাজে তোমার কী উৎসবে । সবুজ সুধার ধারায় ধারায় প্ৰাণ এনে দাও তপ্ত ধরায়, বামে রাখা ভয়ংকরী বন্যা মরণ-ঢালা । রাজা। সব রকমের খ্যাপামিই তো হল। হাসির সঙ্গে কান্না,মধুরের সঙ্গে কঠোর, এখন বাকি রইল কী ? নটরাজ। বাকি আছে অকারণ উৎকণ্ঠা। কালিদাস বলেন, মেঘ দেখলে সুখী মানুষও আনমনা হয়ে যায়। এইবার সেই যে “অন্যথাবৃত্তি চেত”, সেই যে পথ-চেয়ে-থাকা আনমনা, তারই গান হবে । নাট্যাচাৰ্য, ধরে হে-- পূব হাওয়াতে দেয় দোলা আজ মারি মরি। হৃদয়-নদীর কূলে কুলে জাগে লহরী। পথ চেয়ে তাই একলা ঘাটে বিনা কাজে সময় কাটে, পাল তুলে ওই আসে তোমার সুরেরই তরী। ব্যথা আমারকুল মানে না বাধা মানে না, পরান আমার ঘুম জানেনা জাগা জানেনা। মিলবে যে আজ অকুল পানে, ভেসে যাবে রসের বানে আজ বিভাবী। নটরাজ। বিরহীর বেদন রূপ ধরে দাঁড়াল, ঘনবর্ষার মেঘ। আর ছায়া দিয়ে গড়া সজল রূপ। অশান্ত বাতাসে ওর সুর পাওয়া গেল। কিন্তু ওর বাণীটি আছে তােমার কষ্ঠে, মধুরকা। অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে । আজি শ্যামল মেঘের মাঝে বাজে কার কামনা |