পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ বর্ষণ Roa ক্ৰন্দনকার তার গানে ধ্বনিছে, করে কে সে বিরহী বিফল সাধনা | রাজা । আর নয়। নটরাজ, বিরহের পালটাই বড়ো বেশি হয়ে উঠল, ওজন ঠিক থাকছে না। নটরাজ। মহারাজ, রসের ওজন আয়তনে নয়। সমস্ত গাছ একদিকে, একটি ফুল একদিকে, তবু ওজন ঠিক থাকে। অসীম অন্ধকার একদিকে, একটি তারা একদিকে, তাতেও ওজনের ভুল হয় না। ভেবে দেখুন, এ সংসারে বিরহের সরোবর চারি দিকে ছলছল করছে, মিলনপদ্মটি তারই বুকের একটি দুর্লভ ধন । রাজকবি। তাই না হয় হল কিন্তু অশ্রুবাম্পের কুয়াশী ঘনিয়ে দিয়ে সেই পদ্মটিকে একেবারে লুকিয়ে ফেললে তো চলবে না । নটরাজ। মিলনের আয়োজনও আছে। খুব বড়ো মিলন, অবনীর সঙ্গে গগনের । নাট্যাচার্য একবার শুনিয়ে দাও তো । ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দে বাদল বাতাস মাতে মালতীর গন্ধে । উৎসবসভা-মাঝে শ্রাবণের বীণা বাজে, শিহরে শ্যামল মাটি প্ৰাণের আনন্দে । দুই কূল আকুলিয়া অধীর বিভঙ্গে নাচন উঠিল জেগে নদীর তরঙ্গে । কঁপিছে বনের হিয়া বিজলি বলিয়া উঠে নবঘন মন্দ্ৰে । রাজা ।। আঃ, এতক্ষণ একটু উৎসাহ লাগল। থামলে চলবে না। দেখে-না, তোমাদের মাদলওআলার হাত দুটাে অস্থির হয়েছে, ওকে একটু কাজ দাও । নটরাজ। বলি ও ওস্তাদ, ঐ যে দলে দলে মেঘ এসে জুটল, ওরা যে খ্যাপার মতো চলেছে। ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলো-না, একেবারে মৃদঙ্গ বাজিয়ে বুক ফুলিয়ে যাত্রা জমে উঠুক-না সুরে কথায় মেঘে বিদ্যুতে २७ । পথিক মেঘের দল জোটে ওই শ্রাবণ-গগন-অঙ্গনে। মন রে আমার, উধাও হয়ে নিরুদ্দেশের সঙ্গ নে । দিক-হারানো দুঃসাহসে সকল বঁধন পড়ুক খসে, কিসের বাধা ঘরের কোণের শাসন-সীমা লঙ্ঘনে । বেদনা তোর বিজুলশিখা জ্বালুক অন্তরে ; সর্বনাশের করিসি সাধন বজ্ৰ-মন্তরে । অজানাতে করবি গাহন, ঝড় সে পথের হবে বাহন, শেষ করে দিস আপনারে তুই প্রলয়রাতের ক্ৰন্দনে। রাজকবি । ঐ রে, আবার ঘুরে ফিরে এলেন সেই “অজানা সেই তোমার নিরুদেশ। মহারাজ, আর দেরি নেই, আবার কান্না নািমল বলে।