পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কঠোর, তুমি মাধুরী-সাধনাতে মগন হয়ে রয়েছ দিনে রাতে । নীরস কাঠে আগুন তুমি জালো, আঁধার যাহা করিবে তারে আলো, অশুচি যাহা, যা-কিছু আছে কালো দহিবে তারে, সুদূরে যাবে ভাগিমাধুরী-ধ্যান পরানে তব জাগি । ব্যঞ্জনা শুনিতে কি পাস এই যে শ্বাসিছে রুদ্র শূন্যে শূন্যে সন্তপ্ত নিশ্বাস এরি মাঝে দূরে বাজে চঞ্চলের চকিত খঞ্জনি, মাধুরীর মঞ্জীরের মৃদুমন্দ গুঞ্জরিত ধ্বনি ? রৌদ্রদগ্ধ তপস্যার মীেনস্তবন্ধ অলক্ষ্য আড়ালে স্বপ্নে-রচা অৰ্চনার থালে অর্ঘ্যমাল্য সাঙ্গ হয় সংগোপনে সুন্দরের লাগি । মগ্না যেথা ধেয়ানের সর্বাশুন্য গহনে বৈরাগী, সেথা কে বুভুকু আসে ভিক্ষা-অন্বেষণে ; জীর্ণ পৰ্ণশয্যা-’পরে একা রহে জাগি কঠিনের শুষ্ক প্ৰাণে কোমলের পদম্পর্শ মাগি । তাপিত আকাশে হঠাৎ নীরবে চলে আসে। একটি করুণ ক্ষীণ স্নিগ্ধ বায়ুধারা, কে অভিসারিণী যেন পথে এসে পায় না। কিনারা । অকস্মাৎ কোমলের কমলমালার সম্পর্শ লেগে শান্তের চিত্তের প্রান্ত অহেতু উদবেগে ভুকুটিয়া ওঠে কালো মেঘে ; বিদ্যুৎ বিছুরি উঠে। দিগন্তের ভালে, রোমাঞ্চ-কম্পন লাগে অশ্বন্থের ত্ৰস্ত ডালে ডালে ; মুহুর্তে অম্বরবক্ষে উলঙ্গিনী শ্যামা বাজায় বৈশাখী-সন্ধ্যা ঝঙ্কার দামামা, দিগবিদিকে নৃত্য করে দুর্বর ক্ৰন্দন, ছিন্ন ছিন্ন হয়ে যায় ঔদাসীন্য কঠোর বন্ধন ।