পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૩ রবীন্দ্র-রচনাবলী জন্মায় নাই।। সইয়ের বাড়ি গিয়া অনুভব করিয়াছিল বাল্যকালের সে সই মরিয়া গিয়াছে— খােকার ঘরে ‘আসিয়া বুঝিতে পারিল, খোকার কাকিম তো একতিলও মরে নাই। ব্যাকুলভাবে কহিল, “দিদি, তোমরা আমাকে দেখিয়া কেন ভয় পাইতেছ। এই দেখো, আমি তোমাদের সেই তেমনি আছি।” গিন্নি আর দাড়াইয়া থাকিতে পারলেন না, মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেলেন। ভগীর কাছে সংবাদ পাইয়া শারদাশংকরবাবু স্বয়ং অন্তঃপুরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন- তিনি জোড়হন্তে কাদম্বিনীকে কহিলেন, “ছোটােবউমা, এই কি তোমার উচিত হয়। সতীশ আমার বংশের একমাত্র ছেলে, উহার প্রতি তুমি কেন দৃষ্টি দিতেছ। আমরা কি তোমার পর । তুমি যাওয়ার পর হইতে ও প্রতিদিন শুকাইয়া যাইতেছে, উহার ব্যামো আর ছাড়ে না, দিনরাত কেবল “কাকিম। ককিমা করে । যখন সংসার হইতে বিদায় লইয়ােছ তখন এ মায়াবন্ধন ছিড়িয়া যাও- আমরা তোমার যথোচিত সৎকার করিব।” তখন কাদম্বিনী আর সহিতে পারিল না, তীব্ৰকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “ওগাে, আমি মারি নাই গাে, মারি নাই। আমি কেমন করিয়া তোমাদের বুঝাইব, আমি মারি নাই। এই দেখো, আমি বঁচিয়া আছি।” বলিয়া কাসার বাটিটা ভূমি হইতে তুলিয়া কপালে আঘাত করিতে লাগিল, কপাল ফাটিয়া রক্ত বাহির হইতে লাগিল । তখন বলিল, “এই দেখো, আমি বঁচিয়া আছি।” . শারদাশংকর মূর্তির মতো দাড়াইয়া রহিলেন- খোকা ভয়ে বাবাকে ডাকিতে লাগিল, দুই মূৰ্ছিতা রমণী भऊि १टिश अश्लि। তখন কাদম্বিনী “ওগো, আমি মারি নাই গো, মারি নাই গো, মারি নাই”- বলিয়া চীৎকার করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া সিঁড়ি বাহিয়া নামিয়া অন্তঃপুরের পুষ্করিণীর জলের মধ্যে গিয়া পড়ল। শারদাশংকর উপরের ঘর হইতে শুনিতে পাইলেন ঝাপাস করিয়া একটা শব্দ হইল। সমস্ত রাত্রি বৃষ্টি পড়িতে লাগিল, তাহার পরদিন সকালেও বৃষ্টি পড়িতেছে— মধ্যাহ্নেও বৃষ্টির বিরাম নাই। কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই। &siኛጫ S Sèè স্বর্ণমৃগ আদ্যনাথ এবং বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী দুই শরিক। উভয়ের মধ্যে বৈদ্যুনাথের অবস্থাই কিছু খারাপ। বৈদ্যনাথের বাপ মহেশচন্দ্রের বিষয়বুদ্ধি আন্দীে ছিল না, তিনি দাদা শিবনাথের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া থাকিতেন। শিবনাথ ভাইকে প্রচুর স্নেহবাক্য দিয়া তৎপরিবর্তের্তাহার বিষয়সম্পত্তি সমস্ত আত্মসাৎ করিয়া লন। কেবল খানকতক কোম্পানির কাগজ অবশিষ্ট থাকে।"-জীবনসমুদ্রে সেই কাগজ-কখানি বৈদ্যুনাথের একমাত্র लक्ष० ।। শিবনাথ বস্তু অনুসন্ধানে তঁহার পুত্ৰ আদ্যানাথের সহিত এক ধনীর একমাত্র কন্যার বিবাহ দিয়া বিষয়বৃদ্ধির আর-একটি সুযোগ করিয়া রাখিয়ছিলেন। মহেশচন্দ্র একটি সপ্তকন্যাভারগ্রস্ত দরিদ্র ব্ৰাহ্মণের প্রতি দয়া করিয়া এক পয়সা পণ না লইয়া তাহার জ্যেষ্ঠ কন্যাটির সহিত পুত্রের বিবাহ দেন। সাতটি কন্যাকেই যে ঘরে লন নাই তাহার কারণ, তাহার একটিমাত্র পুত্র এবং ব্ৰাহ্মণও সেরূপ অনুরোধ করে নাই। তবে, তাহদের বিবাহের উদ্দেশে সাধ্যাতিরিক্ত অর্থসাহায্য করিয়াছিলেন । পিতার মৃত্যুর পর বৈদ্যনাথ তাহার কাগজ-কয়খনি লইয়া সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ও সন্তুষ্টচিত্তে ছিলেন। কাজকর্মের কথা ঠাঁহার মনেও উদয় হইত না। কাজের মধ্যে তিনি গাছের ডাল কাটিয়া বসিয়া বসিয়া