পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዩ98br রবীন্দ্র-রচনাবলী মমি অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিলেন, “বেশ করেছ, আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।” ফটিক আর-কিছু না বলিয়াচলিয়া আসিল- সে যে পরের পয়সা নষ্ট করিতেছে, এই মনে করিয়া তাহার মুক্তর অন্তৰ অভিজ্ঞ উপস্থি হল,বিল সৈন্স এর ফল তাহলে আসি আঁত শিল্প স্কুল হইতে ফিরিয়া সেই রাত্রে তাহার মাথাব্যথা করিতে লাগিল এবং গা সিরসির করিয়া আসিল। বুঝিতে পারিল তাহার জ্বর আসিতেছে। বুঝতে পারিল ব্যামো বাধাইলে তাহার মমির প্রতি অত্যন্ত অনৰ্থক উপদ্রব কম সুইবে । মামি এই ব্যামোেটাকে যে কিরূপ একটা অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখিবে, তাহা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারিল। রোগের সময় এই অকৰ্মণ্য অদ্ভুত নির্বোিধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া আর-কাহারও কাছে সেবা পাইতে পারে, এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজা বোধ হইতে লাগিল। পরদিন প্ৰাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। চতুর্দিকে প্রতিবেশীদের ঘরে খোজ করিয়া তাহার কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না । সেদিন আবার রাত্রি হইতে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়িতেছে। সুতরাং তাহার খোজ করিতে কেয়ক অর্ড অল ইিঞ্জত হল। অশেষ কােথও ৰ প্ৰয়া শিক্ষত্রে পূরে থকা সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একটা গাড়ি আসিয়া বিশ্বস্তুরবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাড়াইল। তখনো বুপি ঝুপ করিয়া অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়িতেছে, রাস্তায় একইটু জল দাঁড়াইয়া গিয়াছে। দুইজন পুলিশের লোক গাড়ি হইতে ফটিককে ধরাধরি করিয়া নামাইয়া বিশ্বস্তুরবাবুর নিকট উপস্থিত করিল। তাহার। আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লোহিতবর্ণ, থারথার করিয়া কঁাপিতেছে। বিশ্বস্তুরবাবু প্রায় কোলে করিয়া তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন। মামি তাহাকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, “কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।” বাস্তবিক, সমস্তদিন দুশ্চিন্তায় তাহার ভালোরূপ আহারাদি হয় নাই এবং নিজের ছেলেদের সহিতও নািহক অনেক খিটমিটু করিয়াছেন। ফটিক কাদিয়া উঠিয়া কহিল, “আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।” বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলপ বকিতে লাগিল। বিশ্বস্তুরবাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন । ফটিক তাহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উমীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, “মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি ৷” বিশ্বম্ভরবাবুরুমালে চােখ মুছিয়া সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখনি হাতের উপর তুলিয়া লইয়া তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন । ফটিক আবার বিড় বিড় করিয়া বকিতে লাগিল, বলিল, “মা, আমাকে মারিস নে, মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করি নি।” পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যালফ্যাল করিয়া ঘরের চারি দিকে চাহিল। নিরাশ হইয়া আবার নীরবে দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া পােশ ফিরিয়া শুইল । বিশ্বস্তুরবাবু তাহার মনের চূড়াব বুঝিয়া তাহার কানের কাছে মুখ নত করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।” -- তাহার পরদিনও কাটিয়া গেল। ডাক্তার চিন্তিত বিমর্ষ মুখে জানাইলেন, অবস্থা বড়োই খারাপ । বিশ্বস্তুরবাবু স্তিমিতপ্রদীপে রোগশয্যায় বসিয়া প্রতিমুহূর্তেই ফটকের মাতার জন্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন । ফটিক খালসিদের মতো সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, “এক বীও মেলে না। দোবীও মেলে