পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ । Vobro চন্দরা বলিল, “তাহা হইলে তো হাড় জুড়ায়।” বলিয়া তৎকণাৎ বাহিরে যাইবার উপক্ৰম করিল। ছিদাম এক লফে তাহার চুল ধরিয়া টানিয়া ঘরে পুরিয়া বাহির হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল । কর্মস্থান হইতে সন্ধ্যাবেলায় ফিরিয়া আসিয়া দেখে ঘর খোলা, ঘরে কেহ নাই। চন্দরা তিনটি গ্রাম ছাড়াইয়া একেবারে তাহার মামার বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইয়াছে। ছিদাম সেখান হইতে বহুকষ্ট্রে অনেক সাধ্যসাধনায় তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া আনিল, কিন্তু এবার পরাস্ত মানিল। দেখিল এক অঞ্জলি পারদকে মুষ্টির মধ্যে শক্ত করিয়া ধরা যেমন দুঃসাধ্য এই মুষ্টিমেয় স্ত্রীটুকুকেও কঠিন করিয়া ধরিয়া রাখা তেমনি অসম্ভব- ও যেন দশ আঙুলের ফাঁক দিয়া বাহির হইয়া পড়ে। আর কোনো জবরদস্তি করিল না- কিন্তু বড়ো অশান্তিতে বাস করিতে লাগিল। তাহার এই চঞ্চলা যুবতী স্ত্রীর প্রতি সদাশঙ্কিত ভালোবাসা উগ্র একটা বেদনার মতো বিষম টনটনে হইয়া উঠিল। এমনকি, এক-একবার মনে হইত, এ যদি মরিয়া যায়। তবে আমি নিশ্চিন্ত হইয়া একটুখানি শান্তিলাভ করিতে পারি।-- মানুষের উপরে মানুষের যতটা ঈর্ষা হয় যমের উপরে এতটা নহে। এমন সময়ে ঘরে সেই বিপদ ঘটিল। চন্দরাকে যখন তাহার স্বামী খুন স্বীকার করিয়া লইতে কহিল, সে স্তম্ভিত হইয়া চাহিয়া রহিল ; তাহার কালে দুটি চক্ষু কালো অগ্নির ন্যায় নীরবে তাহার স্বামীকে দগ্ধ করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত শরীর মন যেন ক্রমেই সংকুচিত হইয়া স্বামীরাক্ষসের হাত হইতে বাহির হইয়া আসিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত অন্তরাত্মা একান্ত বিমুখ হইয়া দাড়াইল। হইবে বার বার শিখাইয়া দিল। চন্দরা সে-সমস্ত দীর্ঘ কাহিনী কিছুই শুনিল না, কাঠের মূর্তি হইয়া বসিয়া রহিল । সমস্ত কাজেই ছিদামের উপর দুখিরামের একমাত্র নির্ভর। ছিদাম যখন চন্দরার উপর দোষারোপ করিতে বলিল, দুখি বলিল, “তাহা হইলে বউমার কী হইবে।” ছিদাম কহিল, “উহাকে আমি বঁাচাইয়া দিব।” বৃহৎকায় দুখিরাম নিশ্চিন্ত হইল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ছিদাম তাহার স্ত্রীকে শিখাইয়া দিয়াছিল যে, তুই বলিস, বড়ো জা আমাকে বঁটা লইয়া মারিতে আসিয়াছিল, আমি তাহাকে দা লইয়া ঠেকাইতে গিয়া হঠাৎ কেমন করিয়া লাগিয়া গিয়াছে। এ-সমস্তই রামলোচনের রচিত । ইহার অনুকূলে যে যে অলংকার এবং প্রমাণ-প্রয়োগের আবশ্যক তাহাও সে বিস্তারিতভাবে ছিদামকে শিখাইয়াছিল। পুলিস আসিয়া তদন্ত করিতে লাগিল । চন্দরাই যে তাহার বড়ো জাকে খুন করিয়াছে গ্রামের সকল লোকের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। সকল সাক্ষীর দ্বারাই সেইরূপ প্রমাণ হইল। পুলিস যখন কেন খুন করিয়াছ। আমি তাহাকে দেখিতে পারিতাম না । কোনো বাচসা হইয়াছিল ? कीं । সে তোমাকে প্ৰথমে মারিতে আসিয়াছিল ? : R তোমার প্রতি কোনো অত্যাচার করিয়াছিল ? कीं । এইরূপ উত্তর শুনিয়া সকলে অবাক হইয়া গেল । ò SG