পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

800 রবীন্দ্র-রচনাবলী । মাসে কঁঠালের আমদানিই সব চেয়ে বেশি, ইলিশ মাছও যথেষ্ট। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে; অনেক বিক্রেতা বৃষ্টির আশঙ্কায় বীশ পুঁতিয়া তাহার উপর একটা কাপড় খাটাইয়া দিয়াছে। অছিমদিও হাট করিতে আসিয়াছে’- কিন্তু তাহার হাতে একটি পয়সাও নাই, এবং তাঁহাকে আজকাল কেহ ধারেও বিক্রয় করে না। সে একটি কাটারি এবং একটি পিতলের থালা হাতে করিয়া আসিয়াছে, বন্ধক রাখিয়া ধার করবে। 母 চলিয়াছে। কলরবে আকৃষ্ট হইয়া তিনি একবার হাট দেখিতে ইচ্ছুক হইলেন। হাটের মধ্যে প্রবেশ করিয়া দ্বায়ী কলুকে কীেতুহলবশত তাহার আয়ব্যয় সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতেছিলেন, এমন সময় আছিমদি কাটারি তুলিয়া বাঘের মতো গর্জন করিয়া বিপিনবাবুর প্রতি দুটিয়া আসিল। হাটের লোক তাহাকে অর্ধপথে ধরিয়া তৎক্ষণাৎ নিরস্ত্ৰ করিয়া ফেলিল- অবিলম্বে তাহাকে পুলিসের হন্তে অৰ্পণ করা DD BD BBB DB DBBB BDBDB DBDD DDB DDD S বিপিনবাবু এই ঘটনায় মনে মনে যে খুশি হন নাই তাহা বলা যায় না। আমরা যাহাকে শিকার করিতে চাহি সে যে আমাদিগকে থাবা মারিতে আসিবে এরূপ বজাতি এবং বে-আদবি অসহ্য । যাহা হউক, বেটা যেরূপ বদমায়েস সেইরূপ তাহার উচিত শান্তি হইবে। -- বিপিনের অন্তঃপুরের মেয়েরা আজিকার ঘটনা শুনিয়া কণ্টকিত হইয়া উঠিলেন। সকলেই বলিলেন, মাগো, কোথাকার বজাত হারামজাদা বেটা। তাহার উচিত শাস্তির সম্ভাবনায় তাহারা অনেকটা সাস্তুনা লাভ করিলেন । AO এ দিকে সেই সন্ধ্যাবেলায় বিধবার অন্নহীন পূত্রহীন গৃহ মৃত্যুর অপেক্ষাও অন্ধকার হইয়া গেল। এই ব্যাপারটা সকলেই ভুলিয়া গেল, আহারাদি করিল, শয়ন করিল, নিদ্রা দিল- কেবল একটি বৃদ্ধার কাছে পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মধ্যে এইটেই সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হইয়া উঠিল, অথচ ইহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সমস্ত পৃথিবীতে আর কেহই নাই, কেবল দীপহীন কুটিরপ্রান্তে কয়েকখানি জীর্ণ অস্থি এবং একটি হতাশ্বাস ভীত হৃদয় । চতুর্থ পরিচ্ছেদ ইতিমধ্যে দিন তিনেক অতিবাহিত হইয়া গেছে। কাল ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট বিচারের দিন নির্দিষ্ট হইয়াছে। বিপিনকেও সাক্ষ্য দিতে যাইতে হইবে। ইতিপূর্বে জমিদারকে কখনো সাক্ষ্যমঞ্চে দাড়াইতে হয় নাই- কিন্তু বিপিনের ইহাতে কোনো আপত্তি নাই। পরদিন যথাসময়ে পাগড়ি পরিয়া ঘড়ির চেন বুলাইয়া পালকি চড়িয়া মহাসমারোহে বিপিনবাবু কাছারিতে গিয়া উপস্থিত হইলেন । এজলাসে আজ আর লোক ধরে না। এতবড়ো হুজুক আদালতে অনেকদিন ঘটে कारैि । কানে কী একটা কথা বলিয়া দিল- তিনি তটস্থ হইয়া আবশ্যক আছে বলিয়া বাহিরে চলিয়া আসিলেন । বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, কিছু দূরে এক বটতলায় ঠাঁহার বৃদ্ধ পিতা দাঁড়াইয়া আছেন। খালি পা, গায়ে একখানি নামাবলি, হাতে হরিনামের মালা, কৃশ শরীরটি যেন স্নিগ্ধ জ্যোতির্ময়। ললাট হইতে একটি শান্ত করুণা বিশ্বে বিকীর্ণ হইতেছে। বিপিন চাপকন জোব্বা এবং আঁট প্যান্টলুন লইয়া কষ্ট ঠাঁহাকে প্ৰণাম করিলেন। মাথার পাগড়িটি নাসাপ্রান্তে নামিয়া আসিল, ঘড়িটি জেব হইতে বাহির হইয়া পড়িল । সেগুলি শশব্যান্তে সারিয়া লইয়া পিতাকে নিকটবর্তী উকিলের বাসায় প্রবেশ করিতে অনুরোধ করিলেন। •ቆ কৃষ্ণগোপাল কহিলেন, “না, আমার যাহা বক্তব্য আমি এইখনেই বলিয়া লই।” বিপিনের অনুচরগণ কৌতুহলী লোকদিগকে দূরে ঠেলিয়া রাখিল।