পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छैदनयूछि 8S) কী অসম্ভব আশ্চৰ্যই মনে হইয়াছিল। তিনি বলিলেন, “সিঁড়ির উপর সিঁড়ি লাগাইয়া উপরে উঠিয়া যাও-না, কোথাও মাথা ঠেকিবে না।” আমি ভাবিলাম, সিঁড়ি সম্বন্ধে বুঝি তিনি অনাবশ্যক কার্পণ্যকরিতেছেন। আমি কেবলই সুর চড়াইয়া বলিতে লাগিলাম, আরো সিঁড়ি আরো সিঁড়ি, আরো সিঁড়ি ; শেষকালে যখন বুঝা গেল সিঁড়ির সংখ্যা বাড়াইয়া কোনো লাভ নাই তখন স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম এবং মনে করিলাম, এটা এমন একটা আশ্চর্য খবর যে পৃথিবীতে যাহারা মাস্টারমশায় তাহারাই কেবল এটা জানেন, আর কেহ ভৃত্যরাজক তন্ত্ৰ । ভারতবর্ষের ইতিহাসে দাসরাজদের রাজত্বকাল সুখের কাল ছিল না। আমার জীবনের ইতিহাসেও ভৃত্যদের শাসনকালটা যখন আলোচনা করিয়া দেখি তখন তাহার মধ্যে মহিমা বা আনন্দ কিছুই দেখিতে পাই না। এই সকল রাজাদের পরিবর্তন বারংবার ঘটিয়াছে কিন্তু আমাদের ভাগ্যে সকল-তাতেই নিষেধ ও প্ৰহারের ব্যবস্থার বৈলক্ষণ্য ঘটে নাই। তখন এ-সম্বন্ধে তত্ত্বালোচনার অবসর পাই নাই- পিঠে যাহা পড়িত তাহা পিঠে করিয়াই লইতাম এবং মনে জানিতাম সংসারের ধর্মই এই- বড়ো যে সে মারে, ছোটাে যে সে মার খায়। ইহার বিপরীত কথােটা, অর্থাৎ ছোটাে যে সেই মারে, বড়ো যে সেই মার খায়- শিখিতে বিস্তর বিলম্ব হইয়াছে । কোনটা দুষ্ট এবং কোনটা শিষ্ট, ব্যাধ তাহা পাখির দিক হইতে দেখে না, নিজের দিক হইতেই দেখে। সেইজন্য গুলি খাইবার পূর্বেই যে সতর্ক পাখি চীৎকার করিয়া দল ভাগায়, শিকারী তাহাকে গালি দেয়। মার খাইলে আমরা কঁাদিতাম, প্রহার্যকর্তা সেটাকে শিষ্ট্রেচিত বলিয়া গণ্যকরিত না। বস্তুত, সেটা ভৃত্যরাজদের বিরুদ্ধে সিডিশন। আমার বেশ মনে আছে, সেই সিডিশন সম্পূর্ণ দমন করিবার জন্য জল রাখিবার বড়ো বড়ো জালার মধ্যে আমাদের রোদনকে বিলুপ্ত করিয়া দিবার চেষ্টা করা হইত। রোদন জিনিসটা প্রহারকারীর পক্ষে অত্যন্ত অপ্রিয় এবং অসুবিধাজনক, এ-কথা কেহই অস্বীকার করিতে পরিবে না। এখন এক-একবার ভাবি, ভূতদের হাত হইতে কেন এমন নির্মম ব্যবহার আমরা পাইতাম। মোটের উপরে আকারপ্রকারে আমরা যে মেহদিয়ামায়ার অযোগ্য ছিলাম তাহা বলিতে পারি না । আসল কারণটা এই, ভূতদের উপরে আমাদের সম্পূর্ণভার পড়িয়ছিল। সম্পূর্ণভার জিনিসটা বড়ো অসহ্য। পরমাত্মীয়ের পক্ষেও দুৰ্বহ । ছােটাে ছেলেকে যদি ছােটাে ছেলে হইতে দেওয়া যায়- সে যদি খেলিতে পায়, দৌড়িতে পায়, কৌতুহল মিটাইতে পারে, তাহা হইলেই সে সহজ হয়। কিন্তু যদি মনে কর, উহাকে বাহির হইতে দিব না, খেলায় বাধা দিব, ঠাণ্ডা করিয়া বসাইয়া রাখিব, তাহা হইলে অত্যন্ত দুরূহ সমস্যার সৃষ্টি করা হয়। তাহা হইলে, ছেলেমানুষ ছেলেমানুষের দ্বারা নিজের যে-ভার নিজে অনায়াসেই বহন করে সেই ভার শাসনকর্তার উপরে পড়ে। তখন ঘোড়াকে মাটিতে চলিতে না দিয়া তাহাকে কঁধে লইয়া বেড়ানো হয়। যে-বেচার কাধে । করে তাহার মেজাজ ঠিক থাকে না। মজুরির লোভে কাধে করে বটে, কিন্তু ঘোড়া-বেচারার উপর পদে পদে (भोक्ष नष्ट थोक । এই আমাদের শিশুকালের শাসনকর্তাদের মধ্যে অনেকেরই স্মৃতি কেবল কিলচড় আকারেই মনে আছে- তাহার বেশি আর মনে পড়ে না। কেবল একজনের কথা খুব স্পষ্ট মনে জাগিতেছে। তাহার নাম ঈশ্বর।” সে পূর্বে গ্রামে গুরুমশায়গিরিকরিত। সে অত্যন্ত শুচিসংযত আচারনিষ্ঠ বিজ্ঞ এবং গভীর প্রকৃতির লোক। পৃথিবীতে তাহার শুচিতরক্ষার উপযোগী মাটিজলের বিশেষ অসদ্ভাব ছিল। এইজন্য এই মৃৎপিণ্ড মেদিনীর মলিনতার সঙ্গে সর্বদাই তাহাকে যেন লড়াই করিয়া চলিতে হইত। বিদ্যুদবেগে ঘটি ডুবাইয়া পুষ্করিণীর তিন-চারহাত নীচেকার জল সে সংগ্ৰহ করিত। স্নানের সময় দুই হাত ১ ব্ৰজেশ্বর, স্ত্র ছেলেবেলা, অধ্যায় ৩