পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छैदनशूछि 8d আমি তো একমনে আঁটিতে আঠা লাগাইয়া কেবলই রৌদ্রে শুকাইতে লাগিলাম- তাহতে যে কিরূপ ফল ধরিয়াছিল, নিশ্চয়ই জানি, বয়স্ক পাঠকেরা সে-সম্বন্ধে কোনো প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করিবেন না। কিন্তু সত্য তেতালার কোন একটা কোণে এক ঘন্টার মধ্যেই ডালপালা সমেত একটা অদ্ভুত মায়ািতরু যে জাগাইয়া তুলিয়ছে, আমি তাহার কোনো খবরই জনিতাম না। তাহার ফলও বড়ো বিচিত্র হইল। এই ঘটনার পর হইতে প্রোফেসর যে আমার সংস্রব সসকোচে পরিহার করিয়া চলিতেছে, তাহা আমি অনেকদিন লক্ষ্যই করি নাই। গাড়িতে সে আমার পাশে আর বসে না, সর্বত্রই সে আমার নিকট হইতে কিছু प्रश्न मूद्ध ग्रूद्ध फ्रण । একদিন হঠাৎ আমাদের পড়বার ঘরে মধ্যাহ্নে সে প্রস্তাব করিল, “এসো, এই বেঞ্চের উপর হইতে লাফাইয়া দেখা যাক, কাহার কিরূপ লাফাইবার প্রণালী।” আমি ভাবিলাম, সৃষ্টির অনেক রহস্যই প্রোফেসরের বিদিত, বোধ করি লাফানো সম্বন্ধেও কোনো একটা গুঢ়তত্ত্ব তাহার জানা আছে। সকলেই লাফাইল, আমিও লাফাইলাম। প্রোফেসর একটি অন্তররূদ্ধ অব্যক্ত ই বলিয়া গভীরভাবে মাথা নাড়িল । অনেক অনুনয়েও তাহার কােছ হইতে ইহা অপেক্ষা স্কুটতর কোনাে বাণী বাহির করা গেল না। একদিন জাদুকর বলিল, “কোনো সম্রান্ত বংশের ছেলেরা তোমাদের সঙ্গে আলাপ করিতে চায়, একবার তাহাদের বাড়ি যাইতে হইবে।” অভিভাবকেরা। আপত্তির কারণ কিছুই দেখিলেন না, আমরাও সেখানে গেলাম । কৌতুহলীর দলে ঘর ভরতি হইয়া গেল। সকলেই আমার গান শুনিবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিল। আমি দুই-একটা গান গাছিলাম। তখন আমার বয়স অল্প, কণ্ঠস্বরও সিংহগর্জনের মতো সুগাষ্ঠীর ছিল না। অনেকেই মাথা নাড়িয়া বলিল- তাইতো, ভারি মিষ্ট গল ! তাহার পরে যখন খাইতে গেলাম। তখনাে সকলে ঘিরিয়া বসিয়া আহারপ্রণালী পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিল। তৎপূর্বে বাহিরের লোকের সঙ্গে নিতান্ত অল্পই মিশিয়াছি, সুতরাং স্বভাবটা সলজ ছিল। তাহা ছাড়া পূর্বেই জানাইয়াছি, আমাদের ঈশ্বর-চাকরের লোলুপদৃষ্টির সম্মুখে খাইতে খাইতে, অল্প খাওয়াই আমার চিরকালের মতো অভ্যন্ত হইয়া গিয়াছে। সেদিন আমার আহারে সংকোচ দেখিয়া দর্শকেরা সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করিল। যেরূপ সূক্ষ্মদৃষ্টিতে সেদিন সকলে নিমন্বিত বালকের কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল, তাহা যদি স্থায়ী এবং ব্যাপক হইত, তাহা হইলে বাংলাদেশে প্রাণিবিজ্ঞানের অসাধারণ উন্নতি হইতে পারিত। ইহার অনতিকাল পরে পঞ্চমান্ধে জাদুকরের নিকট হইতে দুই-একখানা অদ্ভুত পত্ৰ পাইয়া সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিতে পারিলাম। ইহার পরে যবনিকাপাতন । , সত্যর কাছে শোনা গেল, একদিন আমের আঁটির মধ্যে জাদু প্রয়োগ করিবার সময় সে প্রোফেসরকে বুঝাইয়া দিয়াছিল যে, বিদ্যাশিক্ষার সুবিধার জন্য আমার অভিভাবকেরা আমাকে বালকবেশে বিদ্যালয়ে পাঠাইতেছিলেন। কিন্তু ওটা আমার ছদ্মবেশ। যাহারা স্বকপোলকল্পিত বৈজ্ঞানিক আলোচনায় কৌতুহলী তঁহাদিগকে এ কথা বলিয়া রাখা উচিত, লাফানোর পরীক্ষায় আমি বা পা আগে বাড়াইয়াছিলাম- সেই পদক্ষেপটা যে আমার কত বড়ো ভুল হইয়াছিল, তাহা সেদিন জানিতে পারি নাই। পিতৃদেব আমার জন্মের কয়েক বৎসর পূর্ব হইতেই আমার পিতা’ প্ৰায় দেশভ্রমণেই নিযুক্ত ছিলেন। বাল্যকালে তিনি আমার কাছে অপরিচিত ছিলেন বলিলেই হয়। মাঝে মাঝে তিনি কখনো হঠাৎ বাড়ি আসিতেন; সঙ্গে বিদেশী চাকর লইয়া আসিতেন ; তাঁহাদের সঙ্গে ভােব করিয়া লইবার জন্য আমার মনে ভারি ঔৎসুক্য হইত। একবার লেনু বলিয়া অল্পবয়স্ক একটি পাঞ্জাবি চাকর তঁহার সঙ্গে আসিয়াছিল। সে আমাদের কাছে ১ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫)