পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

औदनछि r 88. বিদেশীর মুখে তাহদের এই বন্দনাগান শুনিয়া তাহারা অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিয়া ঠাঁহাকে সমাদর . করিত। ফিরিবার সময় মিছরির খণ্ড ও হালুয়া লইয়া আসিতেন। একবার পিতা গুরুন্দরবারের একজন গায়ককে বাসায় আনাইয়া তাহার কাছ হইতে ভজনগান শুনিয়াছিলেন। বোধ করি তাঁহাকে যে-পুরস্কার দেওয়া হইয়াছিল তাহার চেয়ে কম দিলেও সে খুশি হইত। ইহার ফল হইল। এই, আমাদের বাসায় গান শোনাঙ্কার উমেদারের আমদানি এত বেশি হইতে লাগিল যে, তাহাদের পথরোধের জন্য শক্ত বন্দোবস্তের প্রয়োজন হইল। বাডিতে সুবিধা না পাইয়া তাহারা সরকারি রাস্তায় আসিয়া আক্ৰমণ আরম্ভ করিল। প্রতিদিন সকালবেলায় পিতা আমাকে সঙ্গে করিয়া বেড়াইতে বাহির হইতেন । এই সময়ে ক্ষণে ক্ষণে হঠাৎ সম্মুখে তানপুরা-ঘাড়ে গায়কের আবির্ভাব হইত। যে-পাখির কাছে শিকারী অপরিচিত নহে। সে যেমন কাহারও ঘাড়ের উপর বন্দুকের চোঙ দেখিলেই চমকিয়া উঠে, রাস্তার সুদূর কোনো একটা কোণে তানপুর-যত্নের ডগাটা দেখিলেই আমাদের সেই দশা হইত । কিন্তু শিকার এমনি সেয়ানা হইয়া উঠিয়ছিল যে, তাহদের তানপুরার আওয়াজনিতান্ত ফাঁকা আওয়াজের কাজ করিত- তাহা আমাদিগকে দূরে ভাগইয়া দিত, পাড়িয়া ফেলিতে পারিত না। যখন সন্ধ্যা হইয়া আসিত পিতা বাগানের সম্মুখে বারান্দায় আসিয়া বসিতেন। তখন তাহাকে ব্ৰহ্মসংগীত শোনাইবার জন্য আমার ডাক পড়িত ! চাদ উঠিয়াছে, গাছের ছায়ার ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নার আলো বারান্দার উপর আসিয়া পড়িয়ছে- আমি বেহাগে গান গাহিতেছি?-- তুমি বিনা কে প্ৰভু সংকট নিবারে, কে সহায় ভাব-অন্ধকারে তিনি নিস্তব্ধ হইয়া নতশিরে কোলের উপর দুই হাত জোড় করিয়া শুনিতেছেন- সেই সন্ধ্যাবেলাটির ছবি আজও মনে পড়িতেছে। পূর্বেই বলিয়াছ একদিন আমার রচিত দুইটি পারমার্থিক কবিতা শ্ৰীকণ্ঠবাবুর নিকট শুনিয়া পিতৃদেব হাসিয়াছিলেন। তাহার পরে বড়ো বয়সে আর-একদিন আমি তাহার শোধ লইতে পারিয়াছিলাম। সেই কথাটা এখানে উল্লেখ করিতে ইচ্ছা করি । একবার মাঘোৎসবে সকালে ও বিকালে আমি অনেকগুলি গান তৈরি করিয়াছিলাম। তাহার মধ্যে একটা গান- ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে ৷” পিতা তখন চুড়ায় ছিলেন। সেখানে আমার এবং জ্যোতিদাদার” ডাক পড়িল। হারমেনিয়মে জ্যোতিদাদাকে বসাইয়া আমাকে তিনি নূতন গান সবকটি একে একে গাহিতে বলিলেন। কোনো কোনো গান দুবারও গাহিতে হইল । r. গান গাওয়া যখন শেষ হইল। তখন তিনি বলিলেন, “দেশের রাজা যদি দেশের ভাষা জানিত ও সাহিত্যের আদর বুঝিত, তবে কবিকে তো তাহারা পুরস্কার দিত। রাজার দিক হইতে যখন তাহার কোনো সম্ভাবনা নাই সুসমাবেই সেকাজ করতে হবে ? এই দিয়া ভিন্ন একখন পাঁচশ টাকার কে আমার হতে পিতা আমাকে ইংরেজি পড়াইবেন বলিয়া Peter Party's Tales পর্যায়ের অনেকগুলি বই লইয়া গিয়াছিলেন। তাহার মধ্য হইতে বেজমিন ফ্র্যাঙ্কলিনের জীবনবৃত্তান্ত তিনি আমার পাঠ্যরূপে বাছিয়া লাইলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন, জীবনী অনেকটা গল্পের মতো লাগিবে এবং তাহা পড়িয়া আমার উপকার হইবে। কিন্তু পড়াইতে গিয়া ঠাঁহার ভুল ভাঙিল। বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন নিতান্তই সুবুদ্ধি মানুষ ছিলেন। র্তাহার হিসাব-করা কেজো ধৰ্মনীতির সংকীর্ণতা আমার পিতাকে পীড়িত করিত। তিনি এক-এক ১ গানটি সত্যেন্ত্রনাথ ঠাকুর রচিত (মাঘ ১২৭৫)। দ্র। ব্ৰহ্মসংগীত ২ বাংলা মাঘ ১২৯৩ - ৩ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৯৪-১৯২৫)