পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 ኳ রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যাহে আহারের পর পিতা আমাকে আর-একবার পড়াইতে বসিতেন। কিন্তু সে আমার পক্ষে অসাধ্য হইত। প্রতুফের নষ্টযুম তাহার অকালব্যাঘাতের শোধ লাইত। আমি ঘুমে বার বার ঢুলিয়া পড়িতাম। আমার অবস্থা বুঝিয়া পিতা চুটি দিবামাত্র ঘুম কোথায় চুটিয়া যাইত। তাহার পরে দেবতাত্মা নগাধিরাজের পালা। এক-একদিন দুপুরবেলায় লাঠিহাতে একলা এক পাহাড় হইতে আর-এক পাহাড়ে চলিয়া যাইতাম ; পিতা তাহাতে কখনো উদবেগ প্রকাশ করিতেন না। র্তাহার জীবনের শেষ পর্যন্ত ইহা দেখিয়াছি, তিনি কোনোমতেই আমাদের স্বাতন্ত্র্যে বাধা দিতে চাহিতেন না। তাহার রুটি ও মতের বিরুদ্ধে কাজ অনেক করিয়াছি- তিনি ইচ্ছা করিলেই শাসন করিয়া তাহা নিবারণ করতে পারিতেন। কিন্তু কখনো তাহা করেন নাই । যাহা কৰ্তব্য তাহা আমরা অন্তরের সঙ্গে করিব, এজন্য তিনি অপেক্ষা করিতেন। সত্যকে এবং শোভনকে আমরা বাহিরের দিক হইতে লাইব, ইহাতে তঁহ্যির মন তৃপ্তি পাইত না-তিনি জানিতেন, সত্যকে ভালোবাসিতে না পরিলে সত্যকে গ্ৰহণ করাই হয় না। তিনি ইহাও জানিতেন যে, সত্য হইতে দূরে গেলেও একদিন সত্যে ফেরা যায়। কিন্তু কৃত্রিমশাসনে সত্যকে অগত্যা অথবা অন্ধভাবে মানিয়া লইলে সত্যের মধ্যে ফিরিবার পথ রুদ্ধ করা হয়। ] আমার যৌবনারম্ভে এক সময়ে আমার খেয়াল গিয়াছিল, আমি গোরুর গাড়িতে করিয়া গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড় ধরিয়া পেশোয়ার পর্যন্ত যাইব । আমার এ প্রস্তাব কেহ অনুমোদন করেন নাই এবং ইহাতে আপত্তির বিষয় অনেক ছিল। কিন্তু আমার পিতাকে যখনই বলিলাম, তিনি বলিলেন, “এ তো খুব ভালো কথা ; রেলগাডিতে ভ্রমণকে কি ভ্ৰমণ বলে।” এই বলিয়া তিনি কিরূপে পদব্রজে এবং ঘোড়ার গাড়ি প্রভৃতি বাহনে ভ্ৰমণ করিয়াছেন, তাহার গল্প করিলেন । আমার যেইহাতে কোনো কষ্ট বা বিপদ ঘটিতে পারে, তাহার উল্লেখমাত্র করিলেন না । আর-একবার যখন” আমি আদিসমাজের সেক্রেটারিপদ নূতন নিযুক্ত হইয়াছি তখন পিতাকে পার্কস্ট্রীটের বাড়িতে গিয়া জানাইলাম যে, “আদিব্ৰাহ্মসমাজের বেদিতে ব্ৰাহ্মণ ছাড়া অন্যবর্ণের আচাৰ্য বসেন না, ইহা আমার কাছে ভালো বোধ হয় না।” তিনি তখনই আমাকে বলিলেন, “বেশ তো, যদি তুমি পার তো ইহার প্ৰতিকার করিয়ো ।” যখন ঠাহার আদেশ পাইলাম তখন দেখিলাম, প্ৰতিকারের শক্তি আমার নাই। আমি কেবল অসম্পূর্ণতা দেখিতে পারি। কিন্তু পূর্ণতা সৃষ্টি করিতে পারি না। লোক কোথায়। ঠিক লোককে আহবান করিব, এমন জোর কোথায়। ভাঙিয়া সে-জায়গায় কিছু গড়িব, এমন উপকরণ কই। যতক্ষণ পর্যন্ত যথার্থ মানুষ আপনি না আসিয়া জোটে ততক্ষণ একটা বাধা নিয়মও ভালো, ইহাইণ্ঠাহার মনে ছিল। কিন্তু ক্ষণকালের জন্যও কোনো বিয়ের কথা বলিয়া তিনি আমাকে নিষেধ করেন নাই। যেমন করিয়া তিনি পাহাড়ে-পর্বতে আমাকে একলা বেড়াইতে দিয়াছেন, সত্যের পথেও তেমনি করিয়া চিরদিন তিনি আপন গম্যস্থান নির্ণয় করিবার স্বাধীনতা দিয়াছেন। ভুল করিব বলিয়া তিনি ভয় পান নাই, কষ্ট পাইব বলিয়া তিনি উদবিগ্ন হন নাই। তিনি আমাদের সম্মুখে জীবনের আদর্শ ধরিয়াছিলেন। কিন্তু শাসনের দণ্ড উদ্যত করেন নাই । পিতার সঙ্গে অনেক সময়েই বাড়ির গল্প বলিতাম। বাড়ি হইতে কাহারও চিঠি পাইবামাত্ৰ ঠাহাকে দেখাইতাম । নিশ্চয়ই তিনি আমার কাছা হইতে এমন অনেক ছবি পাইতেন যাহা আর-কাহারও কাছা হইতে পাইবার কোনো সম্ভাবনা ছিল না । বড়দাদা মেজদাদার কােছ হইতে কোনো চিঠি আসিলে তিনি আমাকে তাহা পড়িতে দিতেন। কী করিয়া তঁহাকে চিঠি লিখিতে হইবে, এই উপায়ে তাহা আমার শিক্ষা হইয়াছিল। বাহিরের এই সমস্ত কায়দাকানুন সম্বন্ধে শিক্ষা তিনি বিশেষ আবশ্যক বলিয়া জানিতেন। আমার বেশ মনে আছে, মেজদাদার কোনো চিঠিতে ছিল তিনি ‘কর্মক্ষেত্রে গলাবদ্ধরজ হইয়া খাটিয়া মরিতেছেন- সেই স্থানের কয়েকটি বাক্য লইয়া পিতা আমাকে তাহার অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। আমি y eNi fakarri, VfR »M» s on o (»vsa-obve)