পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83r রবীন্দ্র-রচনাবলী পাইয়া সে জিনিসটাকে ভুলিয়া থাকিতে পরিতাম না। শিশুবয়সে অন্তঃপুর যখন আমাদের কাছে দূরে থাকিত তখন মনে মনে সেইখানেই আপনার কল্পলেক সৃজন করিয়াছিলাম। যো-জায়গাটাকে ভাষায় বলিয়া থাকে অবরোধ সেইখনেই সকল বন্ধনের অবসান দেখিতাম। মনে করিতাম, ওখানে ইস্কুল নাই, মাস্টার নাই, জোর করিয়া কেহ কহাকেও কিছুতে প্ৰবৃত্ত করায় না- ওখানকার নিভৃত অবকাশ অত্যন্ত রহস্যময়- ওখানে কারও কাছে সমান্তদিনের সময়ের হিসাবনিকাশ করিতে হয় না, খেলাধুলা সমস্ত আপন ইছামত। বিশেষত দেখিতাম, হোড়দিদি’ আষাদের সঙ্গে সেই একই নীলকমল পণ্ডিতমহাশয়ের কাছে পড়িতেন। কিন্তু পড়া করিলেও তঁহার সম্বন্ধে যেমন বিধান, না করিলেও সেইরূপ। দশটার সময় আমরা তাড়াতাড়ি খাইয়া ইস্কুল যাইবার জন্য ভালোমানুষের মতো প্রস্তুত হইতাম- তিনি বেশী দোলাইয়া দিব্য নিশ্চিন্তমনে বাড়ির ভিতর দিকে চলিয়া যাইতেন দেখিয়া মনটা বিকল হইত। তাহার পরে গলায় সোনার হারটি পরিয়া বাড়িতে যখন নববধূ অসিলেন তখন অন্তঃপুরের রহস্য আরো ঘনীভূত হইয়া উঠিল। যিনি বাহির হইতে আসিয়াছেন। অথচ যিনি ঘরের, ধাহাকে কিছুই জানিনা অথচ যিনি আপনার, তাহার সঙ্গে ভাব করিয়া লইতে ভারি ইচ্ছা করিত। কিন্তু কোনো সুযোগে কাছে গিয়া পেঁৗছতে পরিলে ছোিড়দিদি তাড়া দিয়া বলিতেন, “এখানে তোমরা কী করতে এসেছি, যাও বাইরে যাও ”-তখন একে নৈরাশ্য তাঁহাতে অপমান, দুই মনে বড়ো বাজিত। তার পরে আবার তাঁহাদের আলমারিতে সাশির পল্লীর মধ্য দিয়া সাজানো দেখিতে পাইতাম,কঁচের এবং চীনামটির কত দুর্লভ সামগ্ৰী-ত্যাহার কাতরঙ এবং কত সজা ! আমরা কোনোদিন তাহা স্পর্শ করিবার যোগ্য ছিলাম না-কখনাে তাহা চাহিতেও সাহস করতাম না। কিন্তু এইসকল দূস্প্রাপ BBD DBDBD BDBBB DDBDDB BB DBDB DB DDD DDDDBD S এমনি করিয়া তো দূরে দূরে প্রতিহত হইয়া চিরদিন কাটিয়াছে। বাহিরে প্রকৃতি যেমন আমার কােছ হইতে দূরেছিল, ঘরের অন্তঃপুরও ঠিক তেমনই। সেইজন্য যখন তাহার যেটুকু দেখিতাম আমার চােখে যেন ছবির মতো পড়িত। রাত্ৰি নটার পর অঘোরমাস্টারের কাছে পড়া শেষ করিয়া বাড়ির ভিতরে শয়ন করিতে চলিয়াছি- খড়খড়ে-দেওয়া লম্বা বরাদ্দাটাতে মিটমিটে লণ্ঠন জ্বলিতেছে- সেই বারান্দ পাের হইয়া গোটাচারপাঁচ অন্ধকার সিঁড়ির ধাপ নামিয়া একটি উঠান-ঘেরা অন্তঃপুরের বারান্দায় আসিয়া প্রবেশ করিয়াছি-- বরাদ্দার পশ্চিমভাগে পূর্ব আকাশ হইতে বঁকা হইয়া জ্যোৎস্নার আলো আসিয়া পড়িয়ছেবারান্দার অপর অংশগুলি অন্ধকার- সেই একটুখানি জ্যোৎস্নায় বাড়ির দাসীরা পাশাপাশি পা মেলিয়া বসিয়াউরুর উপর প্রদীপের সলিতা পাকাইতেছে এবং মৃদুস্বরে আপনাদের দেশের কথা বলাবলি করিতেছে, এমন কত ছবি মনের মধ্যে একেবারে আঁকা হইয়া রহিয়াছে। তার পরে রাত্রে আহার সারিয়া বাহিরের বারান্দায় জল দিয়া পা দুইয়া একটা মন্ত বিছানায় আমরা তিনজনে শুইয়া পড়তাম— শংকরী কিংবা প্যার কিংবা তিনকড়ি আসিয়া শিয়রের কাছে বসিয়া তেপান্তর মাঠের উপর দিয়া রাজপুত্রের ভ্রমণের কথা বলিত- সে কাহিনী শেষ হইয়া গেলে শয্যাতলানীরব হইয়া যাইত- দেয়ালের দিকে মুখ ফিরাইয়া শুইয়া ক্ষীণালোকে দেখিতাম, দেয়ালের উপর হইতে মাঝে মাঝে চুনকাম খসিয়া গিয়া কালোয় সাদায় নানাপ্রকারের রেখাপাত হইয়াছে; সেই রেখাগুলি হইতে আমি মনে মনে বহুবিধ অদ্ভুত ছবি উদভাবন করিতে করিতে ঘুমাইয়া পড়তাম- তার পরে অর্ধরাত্রে কোনো কোনো দিন আধঘুমে শুনিতে পাইতাম, অতি বৃদ্ধ স্বরূপসর্দার উচ্চস্বরেইক দিতে দিতে এক বরাদ্দাহাইতে আর-এক বরাদ্দায় চলিয়া যাইতেছে। সেই অল্পপরিচিত কল্পনজড়িত অন্তঃপুরে একদিন বহুদিনের প্রত্যাশিত আব্দর পাইলাম। যাহা প্রতিদিন পরিমিতরূপে পাইতে পাইতে সহজ হইয়া যাইত, তাঁহাই হঠাৎ একদিনে বাকিবকেয়া সমেত পাইয়া যে বেশ ভালো করিয়া তাহ বহন করিতে পারিয়ছিলাম তাহ বলিতে পারি না। ক্ষুদ্র ক্রমণকারী বাড়ি ফিরিয়া কিছুদিন ঘরে ঘরে কেৰলাইক্রমণের গল্প বলিয়া বেড়াইতে লাগিল। বারবার্তা বলিতে বলিতে কল্পনার সংঘর্যেক্রমেই তাহা এত অত্যন্ত চিলা হইতে লাগিল যে, মূল বৃত্তান্ডের সঙ্গে তাহার » *ча б* (oveъ-зьв) IR VPN or, RRR se vyf vwo