পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शैवनन्यूठि 8.4 একেবারেই উঠিয়া গিয়াছে। এতবড়ো সামাজিক কৃপণতার মতো কুগ্ৰী জিনিস কিছু আছে বলিয়া মনে হয় না । এইজন্য তখনকার দিনে যাহারা প্ৰাণখোলা হাসির ‘ধ্বনিতে প্ৰত্যহ সংসারেয় ভার হালকা করিয়া রাখিয়ছিলেন, আজকের দিনে ঠাহাদিগকে আর-কোনো দেশের লোক ৰলিয়া মনে হইতেছে। Վ. অক্ষয়চন্দ্ৰ চৌধুরী বাল্যকালে আমার কাব্যালোচনার মন্ত একজন অনুকূল সুহৃদ জুটিয়াছিল। * অক্ষয়চন্দ্ৰ চৌধুরী’ মহাশয় জ্যোতিদাদার সহপাঠী বন্ধু ছিলেন। তিনি ইংরেজি সহিত্যে এম এ । সে সাহিত্যে র্তাহার যেমন বুৎপত্তি তেমনি অনুরাগ ছিল। অপর পক্ষে বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণবপদকর্তা, কবিকঙ্কণ, রামপ্রসাদ, ভারতচন্দ্ৰ, হরুঠাকুর, রাম বসু, নিধুবাবু, শ্ৰীধর কথক প্রভৃতির প্রতি তাহার অনুরাগের সীমা ছিল না। বাংলা কত উদ্ভট গানই তাহার মুখস্থ ছিল। সে-গান সুরে বেসুরে যেমন করিয়া পারেন, একেবারে মরিয়া হইয়া গাহিয়া যাইতেন। সে-সম্বন্ধে শ্রোতারা আপত্তি করিলেও তঁহার উৎসাহ অক্ষুধা থাকিত। সঙ্গে সঙ্গে তাল বাজাইবার সম্বন্ধেও অন্তরে বাহিরে তাহার কোনোপ্রকার বাধা ছিল না । টেবিল হউক, বই হউক,বৈধ অবৈধ যাহা কিছু হাতের কাছে পাইতেন, তাহাকে অজস্র টপটপ শব্দে ধ্বনিত করিয়া আসর গরম করিয়া তুলিতেন। আনন্দ উপভোগ করিবার শক্তি ইহার অসামান্য উদার ছিল। প্ৰাণ ভরিয়ারসগ্রহণ করিতে ইহার কোনো বাধা ছিল না এবং মন খুলিয়া গুণগান করিবার বেলায় ইনি কার্পণ্য করিতে জানিতেন না। গান এবং খণ্ডকাব্য লিখিতেও ইহার ক্ষিপ্ৰতা অসামান্য ছিল। অথচ নিজের এই সকল রচনা সম্বন্ধে তাহার লেশমাত্র মমত্ব ছিল না। কত ছিন্নপত্রে তাহার কত পেন্সিলের লেখা ছড়াছড়ি যাইত, সে দিকে খেয়ালও করিতেন না। রচনা সম্বন্ধে তাহার ক্ষমতার যেমন প্রাচুর্য তেমনি ঔদাসীন্য ছিল। উদাসিনী নামে ইহার একখানি কাব্য তখনকার বঙ্গদর্শনে যথেষ্ট প্রশংসা লাভ করিয়াছিল। ইহার অনেক গান লোককে গাহিতে শুনিয়াছি, কে যে তাহার রচয়িতা তাহা কেহ জানেও না। সাহিত্যভোগের আকৃত্রিম উৎসাহ সাহিত্যে পণ্ডিত্যের চেয়ে অনেক বেশি দুর্লভ। অক্ষয়বাবুর সেই অপর্যাপ্ত উৎসাহ আমাদের সাহিত্যবোধশক্তিকে সচেতন করিয়া তুলিত । সাহিত্যে যেমন তাহার ঔদার্য বন্ধুত্বেও তেমনি। অপরিচিত সভায় তিনি ডাঙায়তোলা মাছের মতো ছিলেন, কিন্তু পরিচিতদের মধ্যে তিনি বয়স বা বিদ্যাবুদ্ধির কোনো বাছবিচার করিতেন না। বালকদের দলে তিনি বালক ছিলেন । দাদাদের সভা হইতে যখন অনেক রাত্রে বিদায় লইতেন তখন কতদিন আমি তাহাকে গ্রেফতার করিয়া আমাদের ইস্কুলঘরে টানিয়া আনিয়াছি। সেখানেও রেড়ির তেলের মিটমিট আলোতে আমাদের পড়বার টেবিলের উপর বসিয়া সভা জমাইয়া তুলিতে তাহার কোনো কুষ্ঠা ছিল না। এমনি করিয়া র্তাহার কাছে কত ইংরেজি কাব্যের উজ্জসিত ব্যাখ্যা শুনিয়াছি, তাহাকে লইয়া কত তর্কবিতৰ্ক আলোচনা-সমালোচনা করিয়াছি। নিজের লেখা তাহকে কত শুনাইয়াছি এবং সে লেখার মধ্যে যদি সামান্য কিছু গুণাপনা থাকিত তবে তাহা লইয়া তাহার কাছে কত অপৰ্যাপ্ত প্রশংসালাভ করিয়াছি। • গীতচর্চা সাহিত্যের শিক্ষায়, ভাবের চর্চায়, বাল্যকাল হইতে জ্যোতিদাদা আমার প্রধান সহায় ছিলেন। তিনি নিজে উৎসাহী এবং অন্যকে উৎসাহ দিতে র্তাহার আনন্দ । আমি অবাধে তাহার সঙ্গে ভাবের ও জ্ঞানের আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতাম- তিনি বালক বলিয়া আমাকে অবজ্ঞা করিতেন না। ১ “হাওড়া জিলার আব্দুল ইহার নিবাস। এম এ, বি. এল. পাস করিয়া হাইকোর্টের এন্টনী হন।” -ব্র-কথা, o da i a quifèrsè, o dele-eu ২ বঙ্গদর্শন, জ্যৈষ্ঠ ১২৮১