পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃጳ রবীন্দ্র-রচনাবলী এবারে ডাক্তার ঘটে নামে একজন অত্র গৃহন্থের ঘরে আমার আশ্ৰয় জুটল।” একদিন সন্ধ্যায় সময় বাক্স তোরঙ্গ লইয়াৰ্তা:হাঙ্গেয় ঘরে প্রবেশ করিলাম। বাড়িতে কেবল পককেশ ডাক্তার,র্তাহার গৃহিণী ও তাঁহাদের কোনো আমীয়ের বাড়ি পলায়ন করিয়াছেন। বোধকরি যখন ষ্ঠাহারা সংবাদ পাইলেন, আমার দ্বারা কোনো সাংঘাতিক বিপদের আশু সম্ভাবনা নাই তখন তাহারা ফিরিয়া আসিলেন । অতি অল্পদিনের মধ্যেই আমি ইহুদের ঘরের লোকের মতো হইয়া গেলাম। মিসেস স্কট আমাকে আপনি ছেলের মতোই জেহ করতেন। তঁহার মেয়েরা আমাকে যেরূপ মনের সঙ্গে যত্ন করিতেন তাহা কাহ হইতেও পাওয়া দুর্লভ । এই পরিবারে বাস করিয়া একটি জিনিস। আমি লক্ষ্য করিয়াছি- মানুষের প্রকৃতি সব জায়গাতেই সমান । আমরা বলিয়া থাকি এবং আমিও তাঁহা বিশ্বাস করতাম যে, আমাদের দেশে পতিভক্তির একটি বিশিষ্টতা আছে, য়ুরোপে তাহা নাই। কিন্তু আমাদের দেশের সাক্ষীগৃহিণীর সঙ্গে মিসেস স্কটের আমি তো বিশেষ পার্থক্য দেখি নাই। স্বামীর সেবায় তাহার সমন্ত মন ব্যাপৃত ছিল। মধ্যবিত্ত গৃহস্থঘরে চাকর-বকিরদের উপসর্গ নাই, প্ৰায় সব কাজই নিজের হাতে করিতে হয়- এইজন্য স্বামীর প্রত্যেক ছোটোখাটো কাজটিও মিসেস স্কট নিজের হাতে করিতেন। সন্ধ্যার সময় স্বামী কাজ করিয়া ঘরে ফিরিবেন, তাহার পূর্বেই আগুনের ধারে তিনি স্বামীর আরামকেদারা ও তাহার পশমের জুতাজোড়াটি স্বহন্তে গুছাইয়া রাখিতেন। ডাক্তার স্কটের কী ভালো লাগে আর না লাগে, কোন ব্যবহার তাহার কাছে প্রিয় বা অপ্রিয়, সে কথা মুহুর্তের জন্যও তাঁহার শ্ৰী ভুলিতেন না। প্রাতঃকালে একজনমাত্র দাসীকে লইয়া নিজে উপরের তলা হইতে নীচের রান্নাঘর, সিঁড়ি এবং দরজার গায়ের পিতলের কাজগুলিকে পর্যন্ত ধুইয়া মজিয়া তকতাকে ঝকঝকে করিয়া রাখিয়া দিতেন। ইহার পরে লোকলৌকিকতার নানা কর্তব্য তো আছেই। গৃহস্থলির সমস্ত কােজ সারিয়া সন্ধ্যার সময় আমাদের পড়াশুনা গানবাজনায় তিনি সম্পূৰ্ণ যোগ দিতেন ; অবকাশের কালে আমোদপ্রমোদকে জমাইয়া তোলা, সেটাও গৃহিণীর কর্তব্যেরই অঙ্গ। মেয়েদের লইয়া এক-একদিন সন্ধাবেলায় সেখানে টেবিল-চালা হইত। আমরা কয়েকজনে মিলিয়া একটা টিপাইয়ে হাত লগাইয়া থাকি,তাম, আয় টিপাইটা ঘরময় উন্মত্তের মতো দাপাদ্যপি করিয়া বেড়াইত । ক্রমে এমন হইল, আমরা যাহতে হাত দিই তাঁহাইনড়িতে থাকে। মিসেস স্কটের এটা যে খুব ভালো লাগিত তাহা নহে। তিনি মুৰ গতীয় করিয়া এক-একবার মাথা নড়িয়া বলিতেন, “আমার মনে হয়, এটা ঠিক বৈধ হইতেছে না।” কিন্তু তবু তিনি আমাদের এই ছেলে মানুষ কাণ্ডে জোর করিয়া বাধা দিতেন না, এই অনাচার সহ্য করিয়া যাইতেন। একদিন ডাক্তার স্কটের লম্বা টুপ লইয়া সেটার উপর হাত রাখিয়া যখন চালিতে গেলাম, তিনি ব্যাকুল হইয়া তাড়াতাড়ি চুটিয়া অসিয়া বলিলেন, “ না না, ও টুপি চালাইতে পরিবে না।” তঁহার স্বামীর মাথার টুপিতে মুহূর্তের জন্য শয়তানের সংস্রব ঘটে, ইহা তিনি সহিতে পরিলেন না। এই সমস্তের মধ্যে একটি জিনিস দেখিতে পাইতাম, সেটি স্বামীর প্রতিষ্ঠাহার ভক্তি। ণ্ঠাহার সেই আত্মবিসর্জনপির মধুর নম্ৰতা স্মরণ করিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারি, নীলোকের প্রেমের স্বাভাবিক চরম পরিণাম ভক্তি। যেখানে তাহদের প্রেম আপন বিকাশে কোনো বাধা পায় নাই সেখানে তাহা আপনি পূজায় আসিয়া ঠেকে। যেখানে ভোগবিলাসের আয়োজন প্রচুর, যেখানে আমোদপ্রমোদেই দিনরাত্রিকে আবিল করিয়া রাখে, সেখানে এই প্রেমের বিকৃতি ঘটে; সেখানে শ্ৰীপ্ৰকৃতি আপনার পূর্ণ আনন্দ পায় না। কয়েক মাস এখানে কাটিয়া গেল। মেজদাদাদের দেশে ফিরিবার সময় উপস্থিত হইল। পিতা লিখিয়া পঠাইলেন, আমাকেও ঠাহীদের সঙ্গে ফিরিতে হইবে। সে প্রভাবে আমি খুশি হইয়া উঠিলাম। দেশের আলোক দেশের আকাশ আমাকে ভিতরে ভিতরে ডাক দিতেছিল। বিদায়গ্ৰহণকালে মিসেস স্থািট আমার দুই S BDB uuD uDDDDBBuSuBDBu DuDB D DDBDDBDBBBDB BDL DBDDBDDBDDBD SLBO ১ ম যুরোপ-প্রবাসীর পত্র, দশম