পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जीवन छि ፬ዓ© আসিলে।”- লন্ডনে এই গৃহটি এখন আর নাই- এই ডাক্তার পরিবারের কেহ বা পরলোকে কেহ বা ইহলোকে কে কোথায় চলিয়া গিয়াছেন, তাহার কোনো সংবাদই জানি না। কিন্তু সেই গৃহটি আমার মনের মধ্যে চিরপ্রতিষ্ঠিত হইয়া আছে। একবার শীতের সময় আমিটনব্রিজ ওয়েলস’ শহরের রাতা দিয়া যাইবার সময় দেখিলাম। একজন লোক রাস্তার ধারে দাঁড়াইয়া আছে; তাহার হেড়া জুতার ভিতর দিয়া পা দেখা যাইতেছে, পায়ে মোজা নাই, বুকের খানিকটা খোলা। ভিক্ষা করা নিযিদ্ধ বলিয়া সে আমাকে কোনো কথা বলিল না, কেবল মুহূর্তকালের জন্য আমার মুখের দিকে তাকাইল। আমি তাহাকে যে মুদ্রা দিলাম তাহা তাহার পক্ষে প্রত্যাশার অতীত ছিল। আমি কিছুদূর চলিয়া আসিলে সে তাড়াতাড়ি চুটিয়া আসিয়া কহিল, “মহাশয়, আপনি আমাকে ভ্ৰমব্রুমে । একটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়াছেন।”- বলিয়া সেই মুদ্রাটি আমাকে ফিরাইয়া দিতে উদ্যত হইল। এই ঘটনাটি হয়তো আমার মনে থাকিত না কিন্তু ইহার অনুরূপ আর-একটি ঘটনা ঘটিয়াছিল। বোধ করি টর্ক স্টেশনে প্রথম যখন পৌছিলাম। একজন মুটে আমার মোট লইয়া ঠিক গাড়িতে তুলিয়া দিল। টাকার থলি খুলিয়া পেনি-জাতীয় কিছু পাইলাম না, একটি অর্ধক্ৰাউন ছিল- সেইটিই তাহার হাতে দিয়া গাড়ি ছাড়িয়া দিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি সেই মুটি গাড়ির পিছনে দুটিতে ছুটিতে গাড়োয়ানকে গাড়ি থামাইতে বলিতেছে। আমি মনে ভাবিলাম, সে আমাকে নির্বোিধ বিদেশী ঠাহরাইয়া আরো কিছু দাবি করিতে আসিতেছে। গাড়ি থামিলে সে আমাকে বলিল, “আপনি বোধ করি পেনি মনে করিয়া আমাকে অৰ্ধক্ৰাউন দিয়াছেন।” । যতদিন ইংলন্ডে ছিলাম কেহ আমাকে বঞ্চনা করে নাই, তাহা বলিতে পারি না- কিন্তু তাহা মনে করিয়া রাখিবার বিষয় নহে এবং তাঁহাকে বড়ো করিয়া দেখিলে অবিচার করা হইবে। আমার মনে এই কথাটা খুব লাগিয়াছে যে, যাহারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না তাহারাই অন্যকে বিশ্বাস করে। আমরা সম্পূর্ণ বিদেশী অপরিচিত, যখন খুশি ফাঁকি দিয়া দৌড় মারিতে পারি- তবু সেখানে দোকানে বাজারে কেহ আমাদিগকে কিছু সন্দেহ করে নাই। যতদিন বিলাতে ছিলাম, শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত একটি প্রহসন আমার প্রবাসবাসের সঙ্গে জড়িত হইয়া ছিল। ভারতবর্থের একজন উচ্চ ইংরেজ কর্মচারীর বিধবা মীর সহিত আমার আলাপ হইয়াছিল। তিনি স্নেহ করিয়া আমাকে রুবি বলিয়া ডাকিতেন। তাহার স্বামীর মৃত্ম-উপলক্ষে তাহার ভারতবর্ষীয় এক বন্ধু ইংরেজিতে একটি বিলাপগান রচনা করিয়াছিলেন । তাহার ভাষানৈপূণ্য ও কবিত্বশক্তি সম্বন্ধে অধিক বাক্যব্যয় করিতে ইচ্ছা করি না। আমার দুর্ভাগ্যক্রমে সেই কবিতাটি বেহাগরাগিণীতে গাহিতে হইবে এমন একটা উল্লেখ ছিল। আমাকে একদিন তিনি ধরিলেন, “এই গানটা তুমি বেহাগরাগিণীতে গাহিয়া আমাকে শুনাও।” আমি নিতান্ত ভালোমনুৰি করিয়া ঠাঁহার কথাটা রক্ষা করিয়াছিলাম। সেই অদ্ভুত কবিতার সঙ্গে বেহাগ সুরের সন্মিলনটা যে কিরূপ হাস্যকর হইয়াছিল, তাহা আমি ছাড়া বুঝিবার দ্বিতীয় কোনো লোক সেখানে উপস্থিত ছিল না। মহিলাটি ভারতবৰীয় সুরে তঁহার স্বামীর শোকগাথা শুনিয়া খুব খুশি হইলেন। আমি মনে করিলাম, এইখানেই পালা শেষ হইল- কিন্তু হইল না। সেই বিধবা রমণীর সঙ্গে নিমন্ত্রণসভায় প্রায়ই আমার দেখা হইত। আহারান্তে বৈঠকখানাঘরে যখন নিমন্বিত শ্ৰীপুরুষ সকলে একত্রে সমবেত হইতেন তখন তিনি আমাকে সেই বেহাগ গান করিবার জন্য অনুরোধ করিতেন। অন্য সকলে ভাবিতেন, ভারতববীয় সংগীতের একটা বুঝি আশ্চর্য নমুনা শুনিতে পাইবেন-- তাহারা সকলে মিলিয়া সানুনয় অনুরোধে যোগ দিতেন, মহিলাটির পকেট হইতে সেই ছাপানো কাগজখানি বাহির হইত- আমার কর্শমূল রক্তিম আভা ধারণ কিরিত। নতশিরে লজিতকণ্ঠে গান ধরিতাম- স্পষ্টই বুঝিতে পরিতাম, এই শোকগাথার ফল আমার পক্ষে ছাড়া আর-কাহারও পক্ষে যথেষ্ট শোচনীয় হুইত না । গানের শেষে চাপা হাঁসির মধ্য হইতে শুনিতে পাইতাম, “Thank you very much. How interesting!” তখন শীতের মধ্যেও আমার শরীর ঘর্মািক্ত হইবার উপক্ৰম করিত। এই y Tunbridge Wells, Kent- (r-tre *, wer