পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

81W রবীন্দ্র-রচনাবলী বিলাতে যখন আমি য়ুনিভার্সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যক্লাসে তখন সেখানে লোকেন পালিত ছিল আমার সাহায্যায়ী বন্ধু। বয়সে সে আমার চেয়ে বছর চায়েকের ছোটাে। বেরিয়সে জীবনস্মৃতি লিখিতেছি সে বয়চোচার বছরের তারতম্য চোখে পড়বার মতো নহে; কিন্তু সতেরোর সঙ্গে তেরোর প্রভেদ এত বেশি যে সেটা ডিঙাইয়া বন্ধুত্ব করা কঠিন। বয়সের গীেরব নাইবলিয়াই বয়স সম্বন্ধে বালক আপনার মর্যাদাৰীচাইয়া চলিতে চায়। কিন্তু এই বালকটি সম্বন্ধে সে বাধা আমার মনে একেবারেই ছিল না। তাহার একমাত্র কারণ, বুদ্ধিশক্তিতে আমি লোকেনকে কিছুমাত্র ছোটাে বলিয়া মনে করিতে পরিতাম না। য়ুনিভার্সিটি কলেজের লাইব্রেরিতে ছাত্র ও ছাত্রীরা বসিয়া পড়াশুনা করে ; আমাদের দুইজনের সেখানে গল্প করিবার আড্ডাছিল। সে কাজটা চুপিচুপিসারিলে কাহারও আপত্তির কোনাে কারণ থাকিিত না-কিন্তু হাসির প্রভূত বাম্পে আমার বন্ধুর তরুণ মন একেবারে সর্বদা পরিস্ফীত হইয়া ছিল, সামান্য একটু নাড়া পাইলে তাহা সশব্দে উচ্ছসিত হইতে থাকিত। সকল দেশেই ছাত্রীদের পাঠনিষ্ঠায় অন্যায় পরিমাণ আতিশয্য দেখা যায়। আমাদের কত পাঠরত প্রতিবেশিনী ছাত্রীর নীল চক্ষুর নীরব ভৎসনাকটাক্ষ আমাদের সরব হাস্যালাপের উপর নিফলে বর্ধিত হইয়াছে, তাহা স্মরণ করিলে আজ আমার মনে অনুতাপ উদয় হয়। কিন্তু তখনকার দিনে পাঠাভ্যাসের ব্যাঘাতপীড়া সম্বন্ধে আমার চিত্তে সহানুভূতির লেশমাত্র ছিল না। কোনোদিন আমার মাথা ধরে নাই এবং বিধাতার প্রসাদে বিদ্যালয়ের পড়ার বিয়ে আমাকে একটু কষ্ট দেয় নাই। এই লাইব্রেরি-মন্দিরে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন হাস্যালািপ চলিত বলিলে অত্যক্তি হয়। সাহিত্য-আলোচনাও করিতাম। সে-আলোচনায় বালক বন্ধুকে অর্বািচীন বলিয়া মনে করিতে পারিতাম না। যদিও বাংলা বই সে আমার চেয়ে অনেক কম পড়িয়ছিল, কিন্তু চিন্তাশক্তিতে সেই কমিটুিকু সে অনায়াসেই পোষাইয়া লইতে পারিত । আমাদের অন্যান্য আলোচনার মধ্যে বাংলা শব্দতত্বের একটা আলোচনা ছিল । * তাহার উৎপত্তির কারণটা এই । ডাক্তার স্কটের একটি কন্যা আমার কাছে বাংলা শিখিবার জন্য উৎসাহ প্ৰকাশ করিয়াছিলেন । তঁহকে বাংলা বর্ণমালাশিখাইবার সময় গর্ব করিয়া বলিয়ছিলাম যে, আমাদের ভাষায় বানানের মধ্যে একটা ধৰ্মজ্ঞান আছে- পদে পদে নিয়ম লঙ্ঘন করাই তাহার নিয়ম নহে। তঁহকে জানাইয়াছিলাম, ইংরেজি বানানরীতির অসংযম নিতান্তই হাস্যকর, কেবল তাহা মুখস্থ করিয়া আমাদিগকে পরীক্ষা দিতে হয় বলিয়াই সেটা এমন শোকাবহ। কিন্তু আমার গর্ব টিকিল না । দেখিলাম, বাংলা বানানও ধাধন মানে না ; তাহা যে ক্ষণে ক্ষণে নিয়ম ডিভাইয়া চলে অভ্যাসবশত এতদিন তাহা লক্ষ্য করি নাই। তখন এই নিয়ম-ব্যতিক্রমের একটা নিয়ম খুজিতে প্ৰবৃত্ত হইলাম। য়ুনিভার্সিটি কলেজের লাইব্রেরিতে বসিয়া এই কাজ করিতাম। লোকেন এই বিষয়ে আমাকে যে সাহায্য করিত তাহাতে আমার বিস্ময় বোধ হইত। তাহার পর কয়েক বৎসর পরে সিভিল সার্ভিসে প্রবেশ করিয়া লোকেন যখন ভারতবর্ষে ফিরিল তখন সেই কলেজের লাইব্রেরিঘরে গ্রস্যেচ্ছসিতরঙ্গিত যে-আলোচনা শুরু হইয়াছিল তাহাঁই ক্রমশ প্রশান্ত হইয়া প্রবাহিত হইতে লাগিল। সাহিত্যে লোকেনের প্রবল আনন্দ আমার রচনার বেগকে পালের হাওয়ার মতো অগ্রসর করিয়াছে। আমার পূর্ণযৌবনের দিনে সাধনার সম্পাদক" হইয়া অবিশ্রামগতিতে যখন গদ্যপদ্যর ১ “ইংরেজি সাহিত্য পড়াচ্ছেন্ন হেনরি মািল - আমি য়ুনিভার্সিটিতে পড়তে পেরেছিলুম তিন মাস মাত্র ”- MI, VIRO 38 ২ লোকেন্দ্রনাথ পালিত (জন্ম : ১৮৬৫), তারক পালিতের পুত্র - ৩ যন্ত্র উত্তরকালীন প্ৰবন্ধ “বাংলা উচ্চারণ, শজাতন্তু, রবীন্দ্র-রচনাবলী ১২ (সুলভ সং ৬) ৪ সাধন- অগ্রহায়ণ। ১২১৮-কর্তিক ১৩০২ “আমার ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ শ্ৰীযুক্ত সুধীন্দ্রনাথ তিন বৎসর এই কাগজের সম্পাদক ছিলেন-চতুর্থবৎসরে ইহার সম্পূর্ণ BBLBDDB LBBB BBBD S BB BBBDB BBL BB LBBB BBBB BBB BBB DB ELDLz রচনাতেও আমার হাত ভূীি পরিমাণে ছিল।"- পঞ্জিনীমোহন নিয়োগীকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের পত্র, আত্মপরিচয়; नौ ३१