পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

総br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাল্মীকি-প্ৰতিভা ও কালমৃগয়া যে উৎসাহে লিখিয়ছিলাম সেউৎসাহে আর কিছু রচনা করি নাই। ঐ দুটি প্রায় সমান্তদিন ওস্তাদি গানগুলাকে পিয়ানো যমের মধ্যে ফেলিয়া তাহাদিগকে যথেচ্ছা মন্থন করিতে প্ৰবৃত্ত ছিলেন। তাহাতে ক্ষণে ক্ষণে রাগিশীগুলির এক-একটি অপূর্বমূর্তি ও ভাবব্যাজনা প্ৰকাশ পাইত। যে-সকল সুর ধাঁধা নিয়মের মধ্যে মন্দগতিতে দন্তীয় রাখিয়া চলে তাহাদিগকে প্রথবিরুদ্ধ বিপর্যন্তভাবে দৌড় করাইবামাত্র সেইবিপ্লবে তাহদের প্রকৃতিতে নূতন নূতন অভাবনীয় শক্তি দেখাদিত এবং তাঁহাতে আমাদের চিত্তকে সর্বদা বিচলিত করিয়া তুলিত। সুরগুলা যেন নানা প্রকার কথা কহিতেছে এইরূপ আমরা স্পষ্ট শুনিতে পাইতাম। আমি ও অক্ষয়বাবু অনেক সময়ে জ্যোতি দাদার সেই বাজনার সঙ্গে সঙ্গে সুরে সাক্ষর কীরিকান অঞ্চল ন সুগন্ধহঁত আহুক আর সে সুখের বলে কায় এইরূপ একটা দান্তরভাঙা গীতবিপ্লবের প্রলয়ানন্দে এই দুটি নাট্য লেখা। এইজন্য উহাদের মধ্যে তাল-বোতালের নৃত্য আছে এবং ইংরেজি-বাংলার বাছবিচার নাই। আমার অনেক মত ও রচনারীতিতে আমি বাংলাদেশের পাঠকসমাজকে বারংবার উত্তাক্ত করিয়া তুলিয়হি৷কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে সংগীত সম্বন্ধে উক্ত দুই গীতিনাট্য যে দুঃসাহসিকতা প্রকাশ পাইয়াছে তাহাতে কেহই কোনো ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাই এবং সকলেই খুশি হইয়া ঘরে ফিরিয়াছেন। বাল্মীকি-প্রতিভায় অক্ষয়বাবুর কয়েকটি গান আছে এবং ইহার দুইটি গানে বিহারী চক্রবর্তী মহাশয়ের সারদামঙ্গল সংগীতের দুই-একস্থানের ভাষা ব্যবহার করা হইয়াছে। • এই দুটি গীতিনাট্যর অভিনয়ে আমিই প্রধান পদ গ্ৰহণ করিয়ছিলাম। বাল্যকাল হইতেই আমার মনের মধ্যে নাট্যাভিনয়ের শখ ছিল। আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, এ কার্ষে আমার স্বাভাবিক নিপুণতা আছে। আমার এই বিশ্বাস অমূলক ছিল না, তাহার প্রমাণ হইয়াছে। নাট্যমঞ্চে সাধারণের সমক্ষে প্রকাশ হইবার পূর্বে জ্যোতিদাদার ‘এমন কর্ম আর করব না প্রহসনে আমি অলীকবাবু সাজিয়ছিলাম। সেই আমার প্রথম অভিনয়’। তখন আমার অল্প বয়স, গান গাহিতে আমার কােঠর ক্লান্তি বা বাধামাত্র ছিল না ; তখন বাড়িতে দিনের পর দিন, প্রহরের পর প্রহর সংগীতের অবিরলবিগলিত কারনা করিয়া তাহার শীকরবর্ষণে মনের মধ্যে সুরের রামধনুকের রঙ ছড়াইয়া দিতেছে ; তখন নবযৌবনের নব নব উদ্যম নূতন নূতন কৌতুহলের পথ ধরিয়া ধাবিত হইতেছে ; তখন সকল জিনিসই পরীক্ষা করিয়া দেখিতে চাই, কিছু যে পারিব না। এমন মনেই হয় না, তখন লিখিতেছি, গাহিতেছি, অভিনয় করিতেছি, নিজেকে সকল দিকেই প্রচুরভাবে ঢালিয়া দিতেছি- আমার সেই কুড়ি বছরের বয়সটাতে এমনি করিয়াই পদক্ষেপ করিয়াছি। সেদিন এই যে আমার সমস্ত শক্তিকে এমন দুৰ্গম উৎসাহে দীেড় করাইয়াছিলেন, তাহার সারথি ছিলেন জ্যোতিদাদা। তাহার কোনো ভয় ছিল না । যখন নিতান্তই বালক ছিলাম তখন তিনি আমাকে ঘোড়ায় চড়াইয়া ঠাহীর সঙ্গে ছুট করাইয়াছেন, আনাড়ি সওয়ার পড়িয়া যাইব বলিয়া কিছুমাত্র উদবেগ প্রকাশ করেন নাই। সেই আমার বাল্যবয়সে একদিন শিলাইদহে যখন খবর আসিল যে গ্রামের বনে একটা বাঘ আসিয়াছে তখন আমাকে তিনি শিকারে লইয়া গেলেন- হাতে আমার অস্ত্ৰ নাই, থাকিলেও তাহতে বাঘের চেয়ে আমারই বিপদের ভয় বেশি, বনের বাহিরে জুতা বুলিয়া একটা বঁাশগাছের আধাকটা কফির উপর চড়িয়া জ্যোতিদাদার পিছনে কোনোমতে বসিয়া রছিলাম- অসভ্য জন্তটা গায়ে হাত তুলিলে তাহাকে যে দুই-এক ঘা জুতা কষাইয়া অপমান করিতে পারিব সে পথও ছিল না। এমনি করিয়া ভিতরে বাহিরে সকল দিকেই সমস্ত বিপদের সম্ভাবনার মধ্যেও তিনি আমাকে মুক্তি দিয়াছেন- কোনো বিধিবিধানকে তিনি ভুক্ষেপ করেন নাই এবং আমার সমন্ত চিত্তবৃত্তিকে তিনি সংকোচামুক্ত করিয়া দিয়াছেন। ; s S L LLLLL SBTz LL uLLSLiSLSY LLLLS BiBT0L TSS s ELS Y L00 S S