পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-য়চনাকী নিয়মকে আপন হাতে সে গড়িয়া তুলে- তখনই সে যথাৰ্থ আপনার অধীন হয়। আমার সেই উচুখল কবিতা শোনাইবার একজন মাত্র লোক তখন ছিলেন- অক্ষয়বাৰু। তিনি হঠাৎ আমার এই লেখাগুলি দেখিয়া ভারি খুশি হইয়া বিস্ময় প্রকাশ করিলেন। তাহার কােছ হইতে অনুমোদন পাইয়া আমার পথ আরো প্রশান্ত হইয়া গেল। বিহায়ী চক্রবর্তী মহাশয় তাহার বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যে যে ছন্দের প্রবর্তন করিয়াছিলেন তাহা তিনমাত্রা মূলক, Re একদিন দেব তরুণ তপন হেরিলেন সুরনদীর জলে । অপরাপ এক কুমারীয়তন খেলা করে নীল নলিনীদলে । তিনমাত্রা জিনিসটা দুইমাত্রার মতো টোেকা নহে, তাহা গোলার মতো গোল, এইজন্য তাহা দ্রুতবেগে গড়াইয়া চলিয়া যায়- তাহার এই বেগবান গতির নৃত্য যেন ঘনঘন কংকারে নূপুর বাজাইতে থাকে। একদা এই ছন্দটাই আমি বেশি করিয়া ব্যবহার করিতাম। ইহা যেন দুই পায়ে চলা নহে, ইহা যেন বাইসিকেলে ধাবমান হওয়ার মতো । এইটেই আমার অভ্যাস হইয়া গিয়াছিল। সন্ধ্যাসংগীতে আমি ইচ্ছা করিয়া নহে। কিন্তু স্বভাবতই এই বন্ধন ছেদন করিয়াছিলাম । তখন কোনো বন্ধনের দিকে তাকাই নাই। মনে কোনো ভয়ডর যেন ছিল না । লিখিয়া গিয়াছি, কাহারও কাছে কোনো জবাবদিহির কথা ভাবি নাই । কোনোপ্রকার পূর্বসংস্কারকে খাতির না করিয়া এমনি করিয়া লিখিয়া যাওয়াতে যে জোর পাইলাম তাঁহাতেই প্রথম এই আবিষ্কার করিলাম যে, যাহা আমার সকলের চেয়ে কাছে পড়িয়া ছিল তাহাকেই আমি দূরে সন্ধান করিয়া ফিরিয়াছি । কেবলমাত্র নিজের উপর ভরসা করিতে পারি নাই বলিয়াই নিজের জিনিসকে পাই নাই। হঠাৎ স্বল্প হইতে জাগিয়াই যেন দেখিলাম, আমার হাতে শৃঙ্খল পরানো নাই। সেইজন্যই হাতটাকে যেমন-খুশি ব্যবহার করিতে পারি এই আনন্দটাকে প্রকাশ করিবার জন্যই হাতটাকে যথেচ্ছ ষ্টুড়িয়াছি। আবার কাব্যলেখার ইতিহাসের মধ্যে এই সময়টাই আমার পক্ষে সকলের চেয়ে স্মরণীয়। কাব্যহিসাবে সন্ধ্যাসংগীতের মূল্য বেশি না হইতে পারে। উহার কবিতাগুলি যথেষ্ট কঁচা । উহার ছন্দ ভাষা ভাব- মৃতি ধরিয়া পরিস্ফুট হইয়া উঠিতে পারে নাই। উহার গুণের মধ্যে এই যে, আমি হঠাৎ একদিন আপনার ভরসায় যা-খুশি তাই লিখিয়া গিয়াছি। সুতরাং সে-লেখাটার মূল্য না থাকিতে পারে। কিন্তু খুশিটার মূল্য আছে। গান সম্বন্ধে প্ৰবন্ধ ব্যারিস্টার হইব বলিয়া বিলাতে আয়োজন শুরু করিয়ছিলাম, এমন সময়ে পিতা আমাকে দেশে ডাকিয় আনাইলেন । আমার কৃতিত্ব লাভের এই সুযোগ ভাঙিয়া যাওয়াতে বন্ধুগণ কেহ কেহ দুঃখিত হইয়া আমাবে পুনরায় বিলাতে পাঠাইবার জন্য পিতাকে অনুরোধ করিলেন।’ এই অনুরোধের জোরে আবার একবার বিলাতে যাত্রা করিয়া বাহির হইলাম।” সঙ্গে আরো একজন আীয় ছিলেন । ব্যারিস্টার হইয়া আসার্ট আমার ভাগ্য এমনি সম্পূর্ণ নামজুর করিয়া দিলেন যে, বিলাত পর্যন্ত পৌঁছিতেও হইল না- বিশেষ কারণে মাদ্রাজের ঘাটে নামিয়া পড়িয়া কলিকাতায় ফিরিয়া আসিতে হইল। ঘটনাটা যত বড়ো গুরুতর, কারণট তদনুরূপ কিছুই নহে ; শুনিলে লোকে হাসিবে এবং সে হাস্যটা বোলো-আনা আমারই প্রাপ্য নহে ১ প্রকাশ : অবোধবন্ধু মাসিকপত্রে, ১২৭৪-৭৬ ; জহকারে, ১২৭৬ ২ দ্র দেবেন্দ্রনাথের পত্র, গ্রন্থপরিচয় ১৭ e first firetya- or saw (ws) ৪ ভাগিনেয়। সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় ।