Err রবীন্দ্র-রচনাবলী ওগো বিদেশিনী-সঙ্গে যদি সুরটুকু না থার্কিত তবে এ গানের কীভাব দাড়াইত বলিতে পারিনা। কিন্তু ঐ সুরের মন্ত্ৰগুণে বিদেশিনীর এক অপরূপ মূর্তি জাগিয়া উঠিল। আমার মন বলিতে লাগিল, আমাদের এই জগতের মধ্যে একটি কোন বিদেশিনী আনাগোনা করে- কোন রহস্যসিন্ধুর পরপারে ঘাটের উপরে তাহার বাড়ি- তাহাকেই শারদাপ্রাতে মাধবীরাত্রিতে ক্ষণে ক্ষণে দেখিতে পাই - হৃদয়ের মাঝখানেও মাঝে মাঝে তাহর আভাস পাওয়া গেছে, আকাশে কান পতিয়া তাহার কণ্ঠস্বর কখনো বা শুনিয়াছি। সেই বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের বিশ্ববিমোহিনী বিদেশিনীর দ্বারে আমার গানের সুর আমাকে আনিয়া উপস্থিত করিল এবং আমি কহিলাম फून अभिमानव এসেছি তোমারি দেশে, আমি অতিথি তোমারি দ্বারে, ওগো বিদেশিনী । ইহার অনেকদিন পরে একদিন বোলপুরের রান্তা দিয়া কে গাহিয়া যাইতেছিল খাচার মাঝে অচিন পাখি কমনে আসে যায়, ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতেম পাখির পায় । দেখিলাম বাউলের গানও ঠিক ঐ একই কথা বলিতেছে। মাঝে মাঝে বন্ধ খাচার মধ্যে আসিয়া অচিন পাখি বন্ধনহীন অচেনার কথা বলিয়া যায়-মন তাহাকে চিরন্তন করিয়া ধরিয়া রাখিতে চায়। কিন্তু পারে না । এই অচিন পাখির নিঃশব্দ যাওয়া-আসার খবর গানের সুর ছাড়া আর কে দিতে পারে! এই কারণে চিরকাল গানের বই ছাপাইতে সংকোচ বোধ করি । কেননা, গানের বহিতে আসল জিনিসই বাদ পড়িয়া যায়। সংগীত বাদ দিয়া সংগীতের বাহনগুলিকে সাজাইয়া রাখিলে কেমন হয়, যেমন গণপতিকে वाप्न शि छैाशन्न भूश्कोिएक क्षत्रिग्रा ब्राश । গঙ্গাতীর বিলাতযাত্রার আরম্ভপথ হইতে যখন ফিরিয়া আসিলাম তখন জ্যোতিদাদা চন্দননগরে গঙ্গাধারের বাগানে বাস করিতেছিলেন- আমি তাহদের আশ্রয় গ্ৰহণ করিলাম।” আবার সেই গঙ্গা ! সেই আলস্যে আনন্দে অনির্বাচনীয়, বিষাদে ও ব্যাকুলতায় জড়িত, নিবন্ধ শ্যামল নদীতীরের সেই কলধ্বনিকরুশ দিনরাত্ৰি ! এইখানেই আমার স্থান, এইখানেই আমার মাতৃ হন্তের অন্নপরিবেশন হইয়া থাকে। আমার পক্ষে বাংলাদেশের এই আকাশভরা আলো, এই দক্ষিণের বাতাস, এই গঙ্গার প্রবাহ, এই রাজকীয় আলস্য, এই আকাশের নীল ও পৃথিবীর সবুজের মাঝখানকার দিগন্তপ্রসারিত উদার অবকাশের মধ্যে সমস্ত শরীরমন ছাড়িয়া দিয়া আত্মসমর্পণ- তৃষ্ণার জল ও ক্ষুধার খাদ্যের মতোই অত্যাবশ্যক ছিল। সে তো খুব বেশি দিনের কথা নহে- তবু ইতিমধ্যেই সময়ের অনেক পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে। আমাদের তরুচ্ছায়াগ্রচ্ছন্ন গঙ্গাতটের নিভৃত নীড়গুলির মধ্যে কলকারখানা উৰ্ব্বশী সাপের মতো প্রবেশ করিয়া সো সো শব্দে কালো নিশ্বাস যুঁসিতেছে। এখন খরমধ্যাহ্নে আমাদের মনের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রশান্ত দিখািচ্ছায়া সংকীর্ণতম হইয়া আসিয়াছে। এখন দেশের সর্বত্রই অনবসর আপনি সহস্ৰ বাহু প্রসারিত করিয়া ঢুকিয়া পড়িয়ছে। হয়তো সে ভালোই- কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন ভালো, এমন কথাও জোর করিয়া বলিতে পারি না। আমার গঙ্গাতীরের সেই সুন্দর দিনগুলি গঙ্গার জলে উৎসর্গকরা পূৰ্ণবিকশিত পদ্মফুলের মতো একটি একটি করিয়া ভাসিয়া যাইতে লাগিল। কখনো বা ঘনঘোর বর্ষািরদিনে হরমোনিয়ম-যাত্ৰ-যোগে বিদ্যাপতির ‘ভরা বােদর মােহ ভাদর পদটিতে মনের মতো সুর বসাইয়া বর্বর রাগিণী গাঁথিতে গাহিতে বৃষ্টিপাতমুখরিত