পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शैक्नछि এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক বড়ো বড়োসাহিত্যিকের সঙ্গে আমার আলাপ হইয়াছে,কিন্তু রাজেন্দ্রলালের স্মৃতি আমার মনে যেমন উজ্জ্বল হইয়া বিরাজ করিতেছে এমন আর কাহারও নহে। মানিকতলার বাগানে যেখানে কোর্ট অফ ওয়ার্ডস ছিল সেখানে আমি যখন তখন তাহার সঙ্গে দেখা করিতে যাইতাম । আমি সকালে যাইতাম- দেখিতাম তিনি লেখাপড়ার কাজে নিযুক্ত আছেন। অল্পবয়সের অবিবেচনাবশতই অসংকোচ আমি তাহার কাজের ব্যাঘাত করিতাম। কিন্তু সেজন্য তঁহাকে মুহুর্তকালও অপ্ৰসন্ন দেখি নাই। আমাকে দেখিবামাত্র তিনি কাজ রাখিয়া দিয়া কথা আরম্ভ করিয়া দিতেন। সকলেই জানেন, তিনি কানে কম শুনিতেন । এইজন্য পারতপক্ষে তিনি আমাকে প্রশ্ন করিবার অবকাশ দিতেন না । কোনো একটা বড়ো প্রসঙ্গ তুলিয়া তিনি নিজেই কথা কহিয়া যাইতেন। তাহার মুখে সেই কথা শুনিবার জন্যই আমি তাহার কাছে যাইতাম। আর কাহারও সঙ্গে বাক্যালপে এত নূতন নূতন বিষয়ে এত বেশি করিয়া ভাবিবার জিনিস পাই নাই। আমি মুগ্ধ হইয়া তাহার আলাপ শুনিতাম। বোধ করি তখনকার কালের পাঠ্যপুস্তক-নির্বাচনসমিতির তিনি একজন প্রধান সভ্য ছিলেন। তঁহার কাছে যে-সব বই পাঠানো হইত তিনি সেগুলি পেনসিলের দাগ দিয়া নেট করিয়া পড়িতেন। এক-একদিন সেইরূপ কোনো একটা বই উপলক্ষ করিয়া তিনি বাংলা ভাষারীতি ও ভাষাতত্ব সম্বন্ধে কথা কহিতেন, তাহাতে আমি বিস্তর উপকার পাইতাম। এমন অল্প বিষয় ছিল যে সম্বন্ধে তিনি ভালো করিয়া আলোচনা না করিয়ছিলেন এবং যাহা-কিছু তাহার আলোচনার বিষয় ছিল তাঁহাই তিনি প্রািজল করিয়া বিবৃত করিতে পারিতেন। তখন যে বাংলাসাহিত্যসভার প্রতিষ্ঠাচেষ্টা হইয়াছিল। সেই সভায় আর কোনো সভ্যোর কিছুমাত্ৰ মুখাপেক্ষা না করিয়া যদি একমাত্র মিত্ৰ মহাশয়কে দিয়া কাজ করাইয়া লওয়া যাইত, তবে বর্তমান সাহিত্য-পরিষদের অনেক কাজ কেবল সেই একজন ব্যক্তি দ্বারা অনেক দূর অগ্রসর হইত সন্দেহ নাই। কেবল তিনি মননশীল লেখক ছিলেন ইহাইণ্ঠাহার প্রধান গীেরব নহে। তাহার মূর্তিতেই ঠাহার মনুষ্যত্ব যেন প্রত্যক্ষ হইত। আমার মতো অর্বািচীনকেও তিনি কিছুমাত্র অবজ্ঞা না করিয়া, ভারি একটি দক্ষিণ্যের সহিত আমার সঙ্গেও বড়ো বড়ো বিষয়ে আলাপ করিতেন- অথচ তেজস্বিতায় তখনকার দিনে তাহার সমকক্ষ কেহই ছিল না। এমনকি, আমি তাহার কােছ হইতে যমের কুকুর” নামে একটি প্রবন্ধ আদায় করিয়া ভারতীতে ছাপাইতে পারিয়াছিলাম ; তখনকার কালের আর-কোনো যশস্বী লেখকের প্রতি এমন করিয়া উৎপাত করিতে সাহসও করি নাই এবং এতটা প্রশ্ৰয় পাইবার আশাও করিতে পারিতাম না । অথচ যোদ্ধৃবেশে তাহার রুদ্রমূর্তি বিপজ্জনক ছিল। মুনিসিপাল সভায় সেনেট সভায় তাহার প্রতিপক্ষ সকলেই তাহাকে ভয় করিয়া চলিত। তখনকার দিনে কৃষ্ণদাস পাল ছিলেন কৌশলী, আর রাজেন্দ্রলাল ছিলেন বীর্যবান। বড়ো বড়ো মল্লের সঙ্গেও স্বত্বযুদ্ধে কখনো তিনি পরাঘুখি হন নাই ও কখনো তিনি পরাভূত হইতে জানিতেন না। এসিয়াটিক সোসাইটি” সভার গ্রন্থপ্রকাশ ও পুরাতত্ত্ব আলোচনা ব্যাপারে অনেক সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতকে তিনি কাজে খাটাইতেন । আমার মনে আছে, এই উপলক্ষে তখনকার কালের মহত্ত্ববিদ্বেষী ঈৰ্ষাপরায়ণ অনেকেই বলিত যে, পণ্ডিতেরাই কাজ করে ও তাহার যশের ফল মিত্র মহাশয় ফাঁকি দিয়া ভোগ করিয়া থাকেন। আজিও এরূপ দৃষ্টান্ত কখনো কখনো দেখা যায় যে, ষে-ব্যক্তি যন্ত্ৰমাত্র ক্রমশ তাহার মনে হইতে থাকে। আমিই বুঝি কৃতী, আর যীটি বুঝি অনাবশ্যক শোভামাত্র। কলম-বেচারার যদি চেতনা থাকিত তবে লিখিতে লিখিতে নিশ্চয় কোন একদিন সে মনে করিয়া বসিত— লেখার সমস্ত কাজটাই করি আমি, অথচ আমার মুখেই কেবল কালি পড়ে আর লেখকের খ্যাতিই উজ্জ্বল হইয়া উঠে । বাংলাদেশের এই একজন অসামান্য মনস্বী পুরুষ মৃত্যুর পরে দেশের লোকের নিকট হইতে বিশেষ .১ ভারতী, বৈশাখ ১২৮৯ R RIYA Yu (? yrer-ws) ‘. . : ৩ ইং ১৮৪৬ সালে রাজেন্দ্রলাল ইহার “অসিস্টান্ট সেক্রেটারি ও লাইব্রেরিয়ানের পদ” পান, ১৮৮৫ খৃস্টাব্দে ইহার | निो७के इन ।