পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83r রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনো সন্মান লাভ করেন নাই। ইহার একটা কারণ ইহার মৃত্যুর’ অনতিকালের মধ্যে বিদ্যাসাগরের মৃত্যু ঘটে- সেই শোকেই রাজেন্দ্রলালের বিয়োগবেদনা দেশের চিত্ত হইতে বিলুপ্ত হইয়াছিল। তাহার আর-একটা কারণ, বাংলা ভাষায় তাহার কীর্তির পরিমাণ তেমন অধিক ছিল না, এইজন্য দেশের সর্বসাধারণের হৃদয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করিবার সুযোগ পান নাই। কারোয়ার : ইহার পরে কিছুদিনের জন্য আমরা সদর দ্বীটের দল কারোয়ারে সমুদ্রতীরে আশ্ৰয় লইয়াছিলাম ! কারোয়ার বোম্বাই প্রেসিডেলির দক্ষিণ অংশে হিত কর্নাটের প্রধান নগর। তাহা এলালিতা ও চন্দনতরুর জন্মভূমি মলয়াচলের দেশ। মেজদাদা তখন সেখানে জজ ছিলেন। এই ক্ষুদ্র শৈলমালবেষ্টিত সমুদ্রের বন্দরটি এমন নিভৃত এমন প্রচ্ছন্ন যে, নগর এখানে নাগরীমূর্তি প্রকাশ করিতে পারে নাই। অর্ধচন্দ্রাকার বেলাভূমি আকুল নীলাম্বুরাশির অভিমুখে দুই বাহু প্রসারিত করিয়া দিয়াছে- সে যেন অনন্তকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিবার একটি মূর্তিমতী ব্যাকুলতা। প্রশান্ত বালুতটের প্রান্তে বড়ো বড়ো ঝাউগাছের অরণ্য ; এই অরণ্যের এক সীমায় কালানদী নামে এক ক্ষুদ্র নদী তাহার দুই গিরিবন্ধুর উপকূলরেখার মাঝখােন দিয়া সমুদ্রে আসিয়া মিশিয়াছে। মনে আছে, একদিন শুক্লপক্ষের গোধূলিতে একটি ছোটো নীেকায় করিয়া আমরা এই কালানদী বাহিয়া উজাইয়া চলিয়ছিলাম। এক জায়গায় তীরে নামিয় শিবাজির একটি প্রাচীন গিরিদুর্গ দেখিয়া আবার নীেকা ভাসাইয়াদিলাম। নিন্তব্ধ বন, পাহাড় এবং এই নির্জন সংকীর্ণ নদীর স্রোতটির উপর জ্যোৎস্নারাত্রি ধ্যানাসনে বসিয়া চন্দ্ৰলোকের জাদুমন্ত্ৰ পড়িয়া দিল। আমরা তীরে নামিয়া একজন চাষার কুটিরে বেড়া-দেওয়া পরিষ্কার নিকানো আঙিনায় গিয়া উঠিলাম। প্রাচীরের ঢালু। ছায়াটির উপর দিয়া যেখানে টাদের আলো আড় হইয়া আসিয়া পড়িয়ছে, সেইখানে তাহদের দাওয়াটির সামনে আসন পাতিয়া আহার করিয়া লইলাম। ফিরিবার সময় ভঁটিতে নীেকা ছাড়িয়া দেওয়া গেল । সমুদ্রের মোহানার কাছে আসিয়া পীেহিতে অনেক বিলম্ব হইল। সেইখানে নীেকা হইতে নামিয় বালুতটের উপর দিয়া হাঁটিয়া বাড়ির দিকে চলিলাম। তখন নিশীথরাত্রি, সমুদ্র নিন্তরঙ্গ, ঝাউবনের নিয়তমৰ্মরিত চাঞ্চল্য একেবারে থামিয়া গিয়াছে, সুদূরবিকৃত বালুকারাশির প্রান্তে তরুশ্রেণীর ছায়াপুঞ্জ নিম্পন্দ দিক্‌চক্রবালে নীলাভ শৈলমাল পাণ্ডুরনীল আকাশতলে নিমগ্ন। এই উদার শুভ্রতা এবং নিবিড় স্তৱতার মধ্য দিয়া আমরা কয়েকটি মানুষ কালো ছায়া ফেলিয়া নীরবে চলিতে লাগিলাম। বাড়িতে যখন পীে ছিলাম তখন ঘুমের চেয়েও কোন গভীরতার মধ্যে আমার ঘুম ডুবিয়া গেল। সেই রাত্রেই যে কবিতাটি লিখিয়ছিলাম তাহা সুদূর প্রবাসের সেই সমুদ্রতীরের একটি বিগত রজনীর সহিত বিজড়িত। সেই স্মৃতির ইহা ছাপানো হয় নাই। কিন্তু আশা করি জীবনস্মৃতির মধ্যে তাহাকে এইখানে একটি আসন দিলে তাহার পক্ষে অনধিকার-প্ৰবেশি হইবে না - যাই যাইডুবে যাই, আরো আরো ডুবে যাই বিহবল অবশ্য অচেতন । কোন খানে কোন দূরে, কোন মাঝে ১ । ১১ শ্ৰাবণ ১২৯৮ e i “Sur, vir, cu so i a VfR e IR, ARGIRNIM