পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? কোটার মধ্যে কোটা, তাহার মাঝখানে যে রত্নটি সেই তো প্রেম। কেটার বোঝা বহিতে পারি না। কিন্তু সেই প্রেমটুকু এমনি যে, তাহকে গলার হার গাঁথিয়া বুকের কাছে অনায়াসে কুলইয়া রাখিতে পারি। প্রকাণ্ড এই জগৎব্ৰহ্মাণ্ডের মাঝখানে বড়ো নিভৃতে ঐ একটি প্রেম আছে- চারিদিকে সূৰ্যতাঁরা দুটাছুটি করিতেছে, তাহার মাঝখানকার স্তবতার মধ্যে ঐ প্রেম ; চারি দিকে সপ্তলোকের ভাঙাগড়া চলিতেছে, তাহারই মাঝখানকার পূর্ণতার মধ্যে ঐ প্রেম। ঐ প্রেমের মূল্যে ছোটােও যে সে বড়ো, ঐ প্রেমের টানে বড়োও যে সে ছোটাে । ঐ প্রেমই তো ছোটাের সমস্ত লজাকে আপনার মধ্যে টানিয়া লইয়াছে, বড়োর সমস্ত প্ৰতাপকে আপনার মধ্যে আচ্ছন্ন করিয়াছে, ঐ প্রেমের নিকেতনের মধ্যে প্রবেশ করিলে দেখিতে পাই বিশ্বজগতের সমস্ত সুর আমারই ভাষাতে গান করিতেছে- সেখানে একি কাণ্ড ! সেখানে নির্জন রাত্রির অন্ধকারে রজনীগন্ধর উন্মুখ গুচ্ছ হইতে যে গন্ধ আসিতেছে সেকি সত্যই আমারই কাছে নিঃশব্দচরণে দূত আসিল! এও কি বিশ্বাস করিতে পারি! হাঁ সত্যই। একেবারেই বিশ্বাস করিতে পারিতাম না। মাঝখানে যদি প্রেম না থাকিত । সেই তো অসম্ভবকে সম্ভব করিল। সেই তো এতবড়ো জগতের মাঝখানেও এত ছোটােকে বড়ো করিয়া তুলিল। বাহিরের কোনাে উপকরণ তাহার যে আবশ্যক হয় না, সে যে আপনারই আনন্দে ছােটােকে গৌরব দান করিতে পারে। V. এইজন্যই তো ছোটােকে তাহার এতই দরকার। নইলে সে আপনার আনন্দের পরিমাণ পাইবে কী করিয়া ? ছোটাের কাছে সে আপনার অসীম বৃহত্ত্বকে বিকাইয়া দিয়াছে; ইহাতেই তাহার আপনার পরিচয়, ইহাতেই তাহার আনন্দের পরিমাণ। সেই জন্যই এমন স্পর্ধা করিয়া বলিতেছি, এই তারাখচিত আকাশের নীচে, এই পুষ্পবিকশিত বসন্তের বনে, এই তরঙ্গমুখরিত সমুদ্র-বেলায় ছােটাের কাছে বড়ো আসিতেছেন। জগতে সমস্ত শক্তির আন্দোলন, সমস্ত নিয়মের বন্ধন, সমস্ত অসংখ্য কাজের মাঝখানে এই আনন্দের লীলাটিই সকলের চেয়ে গভীর, সকলের চেয়ে সত্য। ইহা অতি ছােটাে হইয়াও ছােটাে নহে, ইহাকে কিছুতেই আচ্ছন্ন করিতে পারিল না। দেশকালের মধ্যে তাহার বিহার ; প্রত্যেক তিলপরিমাণ দেশকে ও পলপরিমাণ কালকে অসীমত্বে উদ্ভাসিত করা তাহার স্বভাব - আর, আমার এই ক্ষুদ্র আমিটুকুকে নানা আড়ালের ভিতর দিয়া নিবিড় সুখেদুঃখে আপন করিয়া লওয়া তাহার পরিপূর্ণতা। জগতের গভীর মাঝখানটিতে এই যেখানে সমস্ত একেবারেই সহজ, যেখানে বিশ্বের বিপুল বোঝা আপনার সমস্ত ভার নামাইয়া দিয়াছে, সত্য যেখানে সুন্দর, শক্তি যেখানে প্রেম, সেইখানে একেবারে সহজ হইয়া বসিবার জন্য আজ নববর্ষের দিনে ডাক আসিল । যেদিকে প্রয়াস, যেদিকে যুদ্ধ সেই সংসার তো আছেই- কিন্তু সেইখানেই কি দিন খাটিয়া দিন মজুরি লাইতে হইবে ? সেইখানেই কি চরম দেনাপাওনা ? এই বিপুল হাটের বাহিরে নিখিল ভুবনের নিভৃত ঘরটির মধ্যে একটি জায়গা আছে যেখানে হিসাবকিতাব নাই, যেখানে আপনাকে অনায়াসে সম্পূর্ণ সমৰ্পণ করিতে পারাই মহত্তম লাভ, যেখানে ফলাফলের তর্ক নাই, বেতন নাই, কেবল আনন্দ আছে; কৰ্মই যেখানে সকলের চেয়ে প্রবল নহে, প্ৰভু যেখানে প্রিয়- সেখানে । একবার যাইতে হইবে, একেবারে ঘরের বেশ পরিয়া, হাসিমুখ করিয়া। নহিলে প্রাণপণ চেষ্টায় কেবলই আপনাকে আপনিই জীৰ্ণ করিয়া আর কতদিন এমন করিয়া চলিবে ? নিজের মধ্যে অন্ন নাই গো অন্ন নাইঅমৃতহস্ত হইতে অন্ন গ্ৰহণ করিতে হইবে। সে অন্ন উপার্জনের অন্ন নয়, সে প্রেমের অন্ন- হাত খালি করিয়া দিয়া অঞ্জলি পতিয়া চাহিতে পরিলেই হয়। সহজ হইয়া সেইখানে চল-আজ নববর্ষের পাখি সেই ডাক ডাকিতেছে, বেলফুলের গন্ধ সেই সহজ কথাটিকে বাতাসে অযাচিত ছড়াইয়া দিতেছে। নববর্ষ যে সহজ কথাটি জানাইবার জন্য প্রতি বৎসর দেখা দিয়া যায়,রোগের শয্যায় কাজ ছিল না বলিয়া সেই কথাটি আজ স্তব্ধ হইয়া শুনিবার সময় পাইলাম-আজ প্ৰভাতের আলোকের এই নিমন্ত্রণপত্রটিকে প্ৰণাম করিয়া भाथाश कब्रिग्रां शदर्भ कब्रि। > 9>。