পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eR রবীন্দ্র-রচনাবলী বড়ো, আজ যে ধনী কাল সে দরিদ্র। বৈষম্যের এই চলাচল আছে বলিয়াই মানবসমান্ধে স্বাস্থ্য আছে। কেননা বৈষম্য না থাকিলে গতিই থাকে না-উচুনিচু না থাকিলে নদীচলে না, বাতাসে তাপের পার্থক্য না থাকিলে বাতাস বহে না। যাহা চলে না এবং যাহা সচল পদার্ধের সঙ্গে যোগ রাখে না। তাহা দূষিত হইতে থাকে। অতএব, মানবসমাজে উচ্চ নীচ আছেই, থাকিবেই এবং থাকিলেই ভালো, এ কথা মানিতে হইবে। কিন্তু এই বৈষম্যের চলাচলকে যদি ধাঁধ দিয়া ধধিয়া ফেলি, যদি একশ্রেণীর লোককে পুরুষানুক্রমে মাথায় করিয়া রাখিব এবং আর-এক শ্রেণীকে পায়ের তলায় ফেলিব। এই বাধা নিয়ম একেবারে পাকা করিয়া দিই। তবে বৈষম্যের প্রকৃতিগত উদ্দেশ্যই একেবারে মাটি করিয়া ফেলি। যে বৈষম্য চাকার মতো আবর্তিত হয় না। সে বৈষম্য নিদারুণভারে মানুষকে চাপিয়া রাখে, তাহা মানুষকে অগ্রসর করে না । জগতে বৈষম্য ততক্ষণ সত্য যতক্ষণ তাহা চলে, ততক্ষণ তাহা মুক্ত— জগতে লক্ষ্মী যতক্ষণ চঞ্চল ততক্ষণ তিনি কল্যাণদায়িনী। লক্ষ্মীকে এক জায়গায় চিরকাল বঁধিতে গেলেই তিনি অলক্ষ্মী হইয়া উঠেন। কারণ, চঞ্চলতার দ্বারাই লক্ষ্মী বৈষম্যের মধ্যে সামকে আনেন। দুঃখী চিরদিন দুঃখী নয়, সুখী চিরদিন সুখী নয়— এইখনেই সুখীতে দুঃখীতে সাম্য আছে। সুখ দুঃখের এই চলাচল আছে বলিয়াই সুখ দুঃখের দ্বন্দ্বে মানুষের মঙ্গল ঘটে । ” ܝ তোই বলিতেছি, সত্যকে, সুন্দরকে, মঙ্গলকে, যে রূপ যে সৃষ্টি ব্যক্ত করিতে থাকে তাহা বদ্ধরূপ নহে, তাহা একরূপ নহে, তাহা প্রবহমান এবং তাহাবাহু। এই সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের প্রকাশকে যখনই আমরা বিশেষ দেশে কালে পাত্রে বিশেষ আকারে বা আচারে বন্ধ করতে চাই তখনই তাহা সত্য-সুন্দর-মঙ্গলকে বাধাগ্ৰস্ত করিয়া মানবসমাজে দুৰ্গতি আনয়ন করে। রূপমাত্রের মধ্যেই যে একটি মায়া আছে, অর্থাৎ যে চঞ্চলত অনিত্যতা আছে, যে অনিত্যতাই সেই রূপকে সত্য ও সৌন্দৰ্যদান করে, যে অনিত্যতাই তাহার প্রাণ, সেই কল্যাণময়ী অনিত্যতাকে কী সংসারে, কী ধর্মসমাজে, কী শিল্পসাহিত্যে, প্রথার পিঞ্জরে অচল করিয়া বাধিতে গেলে আমরা কেবল বন্ধনকেই লাভ করি, গতিকে একেবারেই হারাইয়া ফেলি। এই গতিকে যদি হারাই তবে শিকলে বাধা পাখি। যেমন আকাশকে হারায় তেমনি আমরা অনন্তের উপলব্ধি হইতে বঞ্চিত হই। সুতরাং সত্যের চিরমুক্ত পথ রুদ্ধ হইয়া যায় এবং চারিদিক হইতে নানা অদ্ভুত আকার ধারণ করিয়া অসংখ্য প্রমাদ আমাদিগকে মায়াবী নিশাচরের মতো আক্রমণ করিতে থাকে। স্তব্ধ হইয়া জড়বৎ পড়িয়া থাকিয়া আমাদিগকে তাহ সহ্য করতে হয়। እዩ98br নামকরণ এই আনন্দরপিণী কন্যাটি একদিন কোথা হইতে তাহার মায়ের কোলে আসিয়া চক্ষু মেলিল। তখন তাহার গায়ে কাপড় ছিলনা, দেহে বলছিল না, মুখে কথা ছিল না, কিন্তু সে পৃথিবীতে পা দিয়াই এক মুহূর্তে সমস্ত বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের উপর আপনার প্রবল দাবি জানাইয়া দিল। সে বলিল আমার এই জল, আমার এই মাটি আমার এই চন্দ্ৰ সূৰ্যগ্ৰহতারকা। এত বড়ো জগৎচরাচরের মধ্যে এই অতি ক্ষুদ্রমাণবিকটি নূতন আসিয়াঢ়ে বলিয়া কোনো দ্বিধা সংকোচ সে দেখাইল না। এখানে যেন তাহার চিরকালের অধিকার আছে, যেন বড়োলোকের কােছ হইতে ভালোরকমের পরিচয়পত্র সংগ্ৰহ করিয়া আনিতে পরিলে নূতন জায়গা রাজপ্ৰসাদে আব্দর অভ্যর্থনা পাইবার পথ পরিষ্কার হইয়া যায়। এই মেয়েটিও যেদিন প্রথম এই পৃথিবীতে ১ ১৮৩৩ শক ৩ ফাল্গুন বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন আশ্রমে अधिडकूभान চক্রবর্তীর কন্যার নামকর