পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

' अर्थ at আছে, আর কিছু বলিবার দরকার হয় না। এই প্ৰাণের আনন্দেই আমরা নিশ্বাস লাইতেছি, খাইতেছি, দেহ । রচনা করিতেছি, বাড়িতেছি। বীচিয়া থাকিব। এই প্রবল আনন্দময় ইচ্ছাতেই আমাদের সমস্ত শক্তি সচেষ্ট হইয়া বিশ্বময় চুটিয়া চলিতেছে। প্রাণের আনন্দেই জীবপ্রবাহ প্রবাহিত হইয়া চলিয়াছে; প্রাণের নিগৃঢ় আনন্দে প্রাণীরা জগতের নানা স্পর্শের তানে আপনার স্নায়ুর তারগুলিকে কেবলই বিচিত্ৰতর করিয়া ধাধিয়া । তুলিতেছে। বঁচিয়া থাকিতে চাই এই ইচ্ছা সন্তানসন্ততিকে জন্ম দিতেছে, রক্ষা করিতেছে, চারি দিকের পরিবেটনের সঙ্গে উত্তরোত্তর আপনার সর্বদীণ সামঞ্জস্য সাধন করিতেছে। : এমনকি, বাচিয়া থাকিব এই আনন্দেই জীব মৃত্যুকেও স্বীকার করিতেছে। সে লড়াই করিয়া প্ৰাণের আনন্দেই প্ৰাণ দিতেছে। কমী মউমাছিরা আপনাকে অঙ্গহীন করিতেছে কেন ? সমস্ত মাউচকের প্রজাদের প্রাণের সমগ্রতার আনন্দ তাহাদিগকে ত্যাগ-স্বীকারে প্রবৃত্ত করিতেছে। দেশের জন্য মানুষ যে অকাতরে যুদ্ধ করিয়া মরিতেছে তাহার মূলে এই প্ৰাণেরই আনন্দ । সমস্ত দেশের প্রাণকে সে বড়ো করিয়া জানিতে চায়-- সেই ইচ্ছার জোরেই সেই আনন্দের শক্তিতেই সে আপনাকেও বিসর্জন করিতে পারে। তাই আমি বলিতেছিলাম মূলে দৃষ্টিপাত করিতে গেলে দেখা যায় প্রাণের আনন্দই বঁচিয়া থাকিবার নানা শক্তিকে নানা দিকে প্রেরণ করে। শুধু তাই নয়, সেই নানা শক্তি নানা দিক হইতে নানা উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া এই আনন্দেই ফিরিয়া আসিতেছে এবং তাঁহারই ভাণ্ডার পূর্ণ করিয়া তুলিতেছে। প্রাণের এই শক্তি যেমন প্ৰাণের ব্যাপ্তির দিক, প্রাণের এই আনন্দ তেমনি প্ৰাণের সমাপ্তির দিক । যেমন গানের তান। এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে, তান জিনিসটা একটা নিয়মহীন উদ্ধৃঙ্খলতা নহে ; তাহার মধ্যে তালম্যানলয় রহিয়াছে ; তাহার মধ্যে স্বরবিন্যাসের অতি কঠিন নিয়ম আছে ; সেই নিয়মের মূলে স্বরতন্ধের গণিতশাস্ত্রসম্মত একটা দুরূহ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে ; শুধু তাই নয়, যে কণ্ঠ বা বাদ্যযন্ত্রকে আশ্রয় করিয়া এই তান চলিতেছে তাহারও নিয়মের শেষ নাই ; সেই নিয়মগুলি কার্যকরণের বিশ্বব্যাপী শৃঙ্খলকে আশ্রয় করিয়া কোন অসীমের মধ্যে যে চলিয়া গিয়াছে তাহার কেহ কিনারা পায় না। অতএব বাহিরের দিক হইতে যদি কেহ বলে এই তানগুলি অন্তহীন নিয়মশৃঙ্খলকে আশ্রয় করিয়াই বিত্তীর্ণ হইতেছে তবে সে একরকম করিয়া বলা যায় সন্দেহ নাইকিন্তু তাঁহাতে আসল কথাটি বাদ পড়িয়া যায়। মূলের কথাটি এই যে, গায়কের চিত্ত হইতে গানের আনন্দই বিচিত্র তানের মধ্যে প্রসারিত হইতেছে। যেখানে সেই আনন্দ पूल, अखि७ 6नशान कोभ। গানের এই তানগুলি গানের আনন্দ হইতে যেমন নানা ধারায় উৎসারিত হইতে থাকে, তেমনি তাহারা। সেই আনন্দের মধ্যেই ফিরিয়া আসে। বস্তুত এই তানগুলি বাহিরে ছােটাে কিন্তু গানের ভিতরকারই আনন্দকে তাহারা ভরিয়া তোলে। তাহার মূল হইতে বাহির হইতে থাকে। কিন্তু তাঁহাতে মূলের ক্ষয় হয় না, মূলের মূল্য বাড়িয়াই উঠে। - . কিন্তু যদি এই আনন্দের সঙ্গে তানের যোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় তাহা হইলে উলটাই হয়। তাহা হইলে তানের দ্বারা গান কেবল দুর্বল হইতেই থাকে। সে তানে নিয়ম যতই জটিল ও বিশুদ্ধ থািক-না কেন গানকে সে কিছুই রস দেয় না, তাহা হইতে সে কেবল হরণ করিয়াই চলে। যে গায়ক আপনার মধ্যে এই গানের মূল আনন্দে গিয়া পৌঁছিয়াছে গান সম্বন্ধে সে মুক্তিলাভ করিয়াছে। সে সমাপ্তিতে পৌঁছিয়াছে। তখন তাহার গলায় যে তান খেলে তাহার মধ্যে আর চিন্তা নাই, চেষ্টা নাই, ভয় নাই। যাহা দুঃসাধ্য তাহা আপনি ঘটিতে থাকে। তাহাকে আর নিয়মের অনুসরণ করিতে হয় না, নিয়ম আপনি তাহার অনুগত হইয়া চলে। তানসেন আপনার মধ্যে সেই গানের আনন্দলোকটিকে পাইয়াছিলেন। ইহাই ঐশ্বর্যােলাক ; এখানে অভাব পূরণ হইতেছে, ভিক্ষা করিয়া নয়, হরণ করিয়া নয়, আপনারই ভিতর হইতে । তানসেন এই জায়গায় আসিয়া গান সম্বন্ধে মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন। মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন বলিতে এ কথা বুঝায় না যে, তাহার গানে তাহার পর হইতে নিয়মের বন্ধন আর ছিল না ; তাহা সম্পূর্ণই ছিল, তাহার লেশমাত্র ক্রটি ছিল না- কিন্তু তিনি সমস্ত নিয়মের মূলে আপনার অধিকার স্থাপন । করিয়াছিলেন বলিয়া নিয়মের প্রভু হইয়া বসিয়াছিলেন- তিনি এককে পাইয়াছিলেন বলিয়াই অসংখ্য বহু আপনি ঠাহার কাছে ধরা দিয়াছিল। এই আনন্দলোকটিকে আবিষ্কার করিতে পরিলেই কাব্য সম্বন্ধে কবি,