পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eas রবীন্দ্র-রচনাবলী লোকবালিকাদিগকে গােড়া হইতেই ধর্মশিক্ষা কেমন করিয়া দেওয়া যাইতে পারে এ তর্ক আজকাল খৃস্টান মহাদেশে খুবই প্রবল হইয়া উঠিয়াছে এবং বোধ করি কতকটা একই কারণে এ চিন্তা আমাদের দেশেও জাগ্রত হইবার উপক্ৰম করিতেছে। ব্ৰাহ্মসমাজে এই ধর্মশিক্ষার কিরূপ আয়োজন হইতে পারে। সেই বিষয়ে আলোচনা করিবার জন্য বন্ধুগণ আমাকে অনুরোধ করিয়াছেন। ; ধৰ্মসম্বন্ধে আমাদের অধিকাংশ লোকের একটা সংকট এই দেখিতে পাই যে, আমাদের একটা মোটামুটি সংস্কার আছে যে, ধর্ম জিনিসটা প্ৰাৰ্থনীয় অথচ তাহার প্রার্থনাটা আমাদের জীবনে সত্য হইয়া উঠে নাই। এইজন্য তাহা আমরা চাহিও বটে কিন্তু যতদূর সম্ভব সন্তায় পাইতে চাই- সকল প্রয়োজনের শেষে ७ष्यूखदू निशा काछ जात्रिशा लक्ष्वान 0ी क।ि সন্তা জিনিস পৃথিবীতে অনেক আছে তাহাদিগকে অল্প চেষ্টাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু মূল্যবান জিনিস কী করিয়া বিনামূল্যে পাওয়া যাইতে পারে এ কথা যদি কেহ জিজ্ঞাসা করিতে আসে। তবে বুঝিতে হইবে সে ব্যক্তি সিদ্ধ কাটিবার বা জাল করিবার পরামর্শ চাহে ; সে জানে উপার্জনের বড়ো রাস্তাটা প্রশস্ত এবং সে বড়ো রাস্তাটা ধরিয়াই জগতের মহাজনেরা চিরকাল মহাজন করিয়া আসিয়াছেন, কিন্তু সেই রাস্তায় চলিবাং মতো সময় দিতে বা পাথেয় খরচ করিতে সে রাজি নহে। তাই ধর্মশিক্ষাসম্বন্ধে আমরা সত্যই কিরূপ পরামর্শ চাহিতেছি সেটা একটু ভালো করিয়া ভাবিয়া দেখ দরকার। কারণ গীতায় বলিয়াছেন, আমাদের ভাবনাটা যেরূপ তাহার সিদ্ধিও সেইরূপ হইয়া থাকে আমাদের ভাবনাটা কী ? যদি এমন কথা আমাদের মনে থাকে যে, যেমন যাহা আছে। এমনিই সমস্ত থাকিবে তাহাকে বেশি কিছু নাড়াচাড়া করিব না। অথচ তাহাকেই পূর্ণভাবে সফল করিয়া তুলিব, তবে পিতলকে সোন করিয়া তুলিবার আশা দেওয়া যে-সকল চতুর লোকের ব্যবসায় তাহাদেরই শরণাপন্ন হইতে হয়। কিন্তু এমন অবস্থা আছে যখন ধর্মশিক্ষা নিতান্তই সহজ । একেবারে নিশ্বাসগ্রহণের মতোই সহজ। তবে কিনা। যদি কোথাও বাধা ঘটে। তবে নিশ্বাসগ্রহণ এমনি কঠিন হইতে পারে যে বড়ো বড়ো ডাক্তারের হার ছাড়িয়া দেয়। যখনই মানুষ বলে আমার নিশ্বাস লওয়ার প্রয়ােজন ঘটিয়াছে তখনই বুঝিতে হইবে ব্যাপারট শক্ত বটে । ধর্মসম্বন্ধেও সেইরূপ । সমাজে যখন ধর্মের বোধ যে কারণেই হউক। উজ্জ্বল হয়, তখন স্বভাবত সমাজের লোক ধর্মের জন্য সকলের চেয়ে বড়ো ত্যাগ করিতে থাকে- তখন ধর্মের জন্য মানুষের চেষ্ট্র চারিদিকেই নানা আকারে প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিতে থাকে- তখন দেশের ধর্মমন্দির ধনীর ধানের অধিকাংশৰে এবং শিল্পীর শিল্পের শ্রেষ্ঠ প্রয়াসকে অনায়াসে আকর্ষণ করিয়া আনে- তখন ধর্ম যে কত বড়ো জিনি তাহা সমাজের ছেলেমেয়েদের বুঝাইবার জন্য কোনোপ্রকার তাড়না করিবার দরকার হয় না। সেই সমাণে অনেকেই আপনিই ধর্মসাধনার কঠোরতাকে আনন্দের সহিত বরণ করিয়া লইতে পারে। আমাদের দেশে ইতিহাস অনুসরণ করিলে এরূপ সমাজের আদর্শকে নিতান্ত কাল্পনিক বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যায় না ধর্ম যেখানে পরিব্যাপ্ত ধর্মশিক্ষা সেইখনেই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে তাহা জীবনযাত্রার কেবল এক অংশমাত্র সেখানে মন্ত্রীরা বসিয়া যতই মন্ত্রণা করুক-না কেন ধর্মশিক্ষা যে কেমন করিয়া যথার্থীরাপে দেও! যাইতে পারে ভাবিয়া তাহার। কিনারা পাওয়া যায় না। পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজেই আধুনিকদের যে দশ ব্ৰাহ্মসমাজেও তাঁহাই লক্ষিত হইতেছে। আমাদে বুদ্ধির এবং ইচ্ছার টান বাহিরের দিকেই এত অত্যন্ত যে অন্তরের দিকে রিক্ততা আসিয়াছে। এই অসামঞ্জ যে কী নিদারুণ তাহা উপলব্ধি করিবার অবকাশই পাইন-বাহিরের দিকে ছুটিয়া চলিবার মত্ততা দিনরা আমাদিগকে দৌড় করাইতেছে। এমনকি, আমাদের ধর্মসমাজসম্বন্ধীয় চেষ্টাগুলিও নিরন্তর ব্যস্ততা উত্তেজনা-পরম্পরার আকার ধারণ করিতেছে। অন্তরের দিকে একটুও তাকাইবার যদি অবসর পাইতামত দেখিতাম তাহা গ্ৰীষ্মকালের বালুকবিতীর্ণ নদীর মতে- সেখানে অগভীর ধর্মবোধ আমাদের জীবনযাত্র নিতান্ত একপাশে আসিয়া ঠেকিয়ছে; তাহাকে আমরা অধিক জায়গা ছাড়িয়া দিতে চাই না। আম