পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় । e8e নবযুগের মানুষ, আমাদের জীবনযাত্রায় সরলতা নাই; আমাদের ভোগের আয়োজন প্রচুর এবং তাহার অভিমােনও অত্যন্ত প্রবল ; ধর্ম আমাদের অনেকের পক্ষেই সামাজিকতার একটা অঙ্গমাত্র। এমনকি, সুলতােক দেখিয়াৰ উত্তর ফর্ম এশ্চিমে উল্পে দুৰ্জত দিয়া অল্পে গতি প্ৰবন্ধ 제3R || ' . এইরূপে ধর্মকে যদি আমাদের জীবনের এককোণে সরাইয়ারাখি, অথচ এই অবস্থায় ছেলেমেয়েদের জন্য ধর্মশিক্ষা কী করিয়া অল্পমাত্রায় ভদ্রতরক্ষার পরিমাণে বরাদ্দ করা যাইতে পারে সে কথা চিন্তা করিয়া উদবিগ্ন হইয়া উঠি তবে সেই উদবেগ অত্যন্ত সহজে কী উপায়ে নিবারণ করা যাইতে পারে তাহা বলা অত্যন্ত কঠিন। তবু বর্তমান অবস্থাকে স্বীকার করিয়া লইয়াই ব্যবস্থা চিন্তা করিতে হইবে। অতএব এ সম্বন্ধে আমাদের আলোচনা করিয়া দেখা কর্তব্য তাহাতে সন্দেহ নাই। : এক সময়ে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই শিক্ষাব্যাপারটা ধর্মচার্যগণের হাতেছিল। তখন রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে এমন একটা অনিশ্চয়তা ছিল যে, দেশের সর্বসাধারণে দীর্ঘকাল শান্তি ভোগ করিবার অবসর পাইত না। এইজন্য জাতিগত সমস্ত বিদ্যা ও ধর্মকে অবিচ্ছিন্নভাবে রক্ষা করিবার জন্য স্বভাবতই এমন একটি বিশেষ শ্রেণীর সৃষ্টি হইয়াছিল, যাহার প্রতি ধর্মালোচনা ও শান্ত্রিালোচনা ছাড়া আর কোনোপ্রকার সামাজিক দাবি ছিল না ;তাহার জীবিকার ভারও সমাজ গ্রহণ করিয়ছিল। সুতরাং এই শ্রেণীর লোকেরাই সমাজের শিক্ষক ছিলেন। তখন শিক্ষার বিষয় ছিল সংকীর্ণ শিক্ষাখীও ছিল অল্প এবং শিক্ষকের দলও ছিল একটি সংকীর্ণ সীমায় বদ্ধ। এই কারণে শিক্ষাসমস্যা তখন বিশেষ জটিল ছিল না, তাই তখনকার ধর্মশিক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষা অনায়াসে একত্র মিলিত হইয়াছিল। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়াছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের শিক্ষালাভের ইচ্ছা! চেষ্টা ও সুযোগ প্রশস্ত হইয়া উঠিতেছে, সেইসঙ্গে বিদ্যার শাখাপ্রশাখাও চারি দিকে অবাধে বাড়িয়া চলিয়াছে। এখন কেবল ধর্মযাজকগণের রেখাঙ্কিত গণ্ডির ভিতর সমস্ত শিক্ষাব্যাপার বদ্ধ হইয়া থাকিতে চাহিতেছে না। তবু সময় উত্তীর্ণ হইয়া গেলেও পুরাতন প্রথা সহজে মরিতে চায় না। তাই বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষা কোনোমতে এ পর্যন্ত ধর্মশিক্ষার সঙ্গে নানাধিক পরিমাণে জড়িত হইয়া চলিয়া আসিয়াছে। কিন্তু সমস্ত যুরোপখণ্ডেই আজ তাহদের বিচ্ছেদসাধনের জন্য তুমুল চেষ্টা চলিতেছে। এই বিচ্ছেদকে কোনোমতেই স্বাভাবিক বলিতে পারি না। কিন্তু তবু বিশেষ কারণে ইহা অনিবাৰ্থ হইয়া উঠিয়াছে। । কেননা, সেখানকার ইতিহাসে ইহা দেখা গিয়াছে যে, একদিন যে ধর্মসম্প্রদায় দেশের বিদ্যাকে পালন করিয়া আসিয়াছে, পরে তাহারাই সে বিদ্যাকে বাধা দিবার সর্বপ্রধান হেতু হইয়া উঠিল। কারণ বিদ্যা যতই বাড়িয়া উঠিতে থাকে ততই সে প্রচলিত ধর্মশান্ত্রের সনাতন সীমাকে চারিদিকেই অতিক্ৰম করিতে উদ্যত হয়। শুধু যে বিশ্বতত্ত্ব ও ইতিহাস সম্বন্ধেই সে ধর্মশান্ত্রের বেড়া ভাঙিতে বসে তাঁহা নহে, মানুষের । চারিস্ক্রনীতিগত নূতন উপলব্ধির সঙ্গেও প্রাচীন শাস্নানুশাসনের আগাগোড়া মিল থাকে না। এমন অবস্থায় হয় ধর্মশান্ত্রকে নিজের ভ্রান্তি কবুল করিতে হয়, নয় বিদ্রোহী বিদ্যা স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করে ; উভয়ের এক অন্নে থাকা আর সম্ভবপর হয় না। কিন্তু ধর্মশাস্ত্ৰ যদি স্বীকার করে যে, কোনো অংশে তাহার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও ভ্রান্ত তবে তাহার প্রতিষ্ঠাই । চলিয়া যায়। কারণ, সে বিশুদ্ধদৈববাণী এবং তাহার সমন্ত দলিলও পরোয়ানার উপর স্বয়ং সর্বজ্ঞা দেবতার। সীলমোহরের স্বাক্ষর আছে। এই বলিয়াই সে আপন শাসন পাকা করিয়া আসিয়াছে। বিদ্যা তখন বিশ্বেশ্বরের বিশ্বশান্ত্রিকে সাক্ষ্মী মানে আর ধর্মসম্প্রদায় তাহদের সনাতন ধর্মশাস্ত্রকে সাক্ষী খাড়া করিয়া তোলেউভয়ের সাক্ষ্যে এমনি বিপরীত অমিল ঘটিতে থাকে যে, ধর্মশান্ত্র ও বিশ্বশাস্ত্ৰ যে একই দেবতার বাণী এ কথা আর টেকে না এবং এ অবস্থায় ধর্মশিক্ষা ও বিদ্যশিক্ষাকে জোর করিয়া মিলাইয়া রাখিতে গেলে হয়। মূঢ়তাকে নয় কপটতাকে প্রশ্ৰয় দেওয়া হয় । । চিরদিন আপনার পুরাতন বুলিবলাইবার জন্য ধর্মের দল উঠিয়া পড়িয়া লাগেিয়ছিল। কিন্তুবিদ্যার পক্ষ যতই