পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

महझ (8. করিয়া বুধিয়া দেখা আবশ্যক বলিয়া এত কথা বলিতে হইল। এ কথা স্থির জানিতে হইবে যে, বাঁধা বচন মুখস্থ করা বা বাধা আচার অভ্যাস করা আমাদের ধর্মশিক্ষা নহে। অতএব ইহার যে অসুবিধা আছে তাহা আমাদিগকে স্বীকার করিয়া লইতে হইবে। অন্যান্য সাম্প্রদায়িক ধর্মে অন্য প্ৰণালীতে কতকগুলি সহজ সুযোগ আছে। এ কথা চিন্তা করিয়া আমাদিগকে বিচলিত হইলে চলিবে না। কারণ সত্যের জায়গায় সহজকে বসাইয়া লাভ কী ? সোনার চেয়ে যে ধূলা সহজ ! যাহা হউক। এ কথা নিশ্চিত সত্য যে, স্বাস্থ্য যেমন সমস্ত শরীরকে জুড়িয়া আছে, ধর্ম তেমনি মানুষের সমগ্র-প্রকৃতিগত । স্বাস্থ্যকে টাকা পয়সার মতো হাতে তুলিয়া দেওয়া যায় না। কিন্তু আনুকূল্যের দ্বারা ঠিতারের দিক হইতে তাহাকে জাগাইয়া তোলা যায়। তেমনি মানুষের প্রকৃতি-নিহিত এই অনন্তের বোধকে তাহার এই ধর্ম প্রবৃত্তিকে ইতিহাস ভূগোল অঙ্কের মতো ইস্কুল-কমিটির শাসনাধীনে সমৰ্পণ করা যায় না, ইনস্পেক্টরের তদন্তজালে তাহার উন্নতির পরিমাণ ধরা পড়ে না, এবং পরীক্ষকের নীল পেলিলের মার্কা দ্বারা তাহার ফলাফল চিহ্নিত হওয়া অসম্ভব ; কেবল সর্বপ্রকার অনুকূল অবস্থার মধ্যে রাখিয়া তাহার সর্বাঙ্গীণ পরিণতি সাধন করা যাইতে পারে, তাহাকে বাধা নিয়মে বিদ্যালয়ে দেওয়া-নেওয়ার ব্যবসায়ের জিনিস করা যাইতে 2ों कीं । সাধকেরা আপনারাই বলিয়াছেন। তঁহাকে পাইবার পথ, “ন মেধয়া ন বহুনা শ্ৰতেন।” অর্থাৎ এটা কোনােমতেই পঠন-পাঠনের ব্যাপার নহে। কিন্তু কেমন করিয়া সাধকেরা এই পূর্ণতার উপলব্ধিতে গিয়া উপনীত হইয়াছেন তাহা আজ পর্যন্ত কোনো মহাপুরুষ আমাদিগকে বলিয়া দিতে পারেন নাই। র্তাহারা কেবল বলেন, বেদাহমেতম, আমি জানিয়াছি, আমি পাইয়াছি। র্তাহারা বলেন, যা এতদ্বিদুর মৃতন্তে ভাবন্তি, যাহারা ইহাকে জানেন, তাহারাই অমৃত হন। কেমন করিয়া যে তঁহারা ইহাকে জানেন সে অভিজ্ঞতা এতই অন্তরতম যে, তাহা তাহদের নিজেদেরই গোচর নহে। সে রহস্য যদি তাহারা প্রকাশ করিয়া দিতে পারিতেন তবে ধর্মশিক্ষা লইয়া আজ কোনোরূপ তর্কই থাকিত না । অথচ ঈশ্বরের বােধ কেমন করিয়া পূর্ণভাবে উদবােধিত করা যাইতে পারে এরূপ প্রশ্ন করিলে কোনো কোনো মহাত্মা অত্যন্ত বাধা প্ৰণালীর উপদেশ দিয়াছেন তাহাও দেখা গিয়াছে। একদিকে যেমন একদল মহাপুরুষ বলিয়াছেন, চিত্তকে শুদ্ধ করো, পাপকে দমন করো, ঈশ্বরের বােধ অন্তরের সামগ্ৰী, অতএব অন্তরকেই আপনি আন্তরিক চেষ্টায় উদবোধিত করিয়া তোলো, অপর দিকে তেমনি আর-এক দল বিশেষ। বিশেষ বাহ্যপ্রক্রিয়ার কথাও বলিয়াছেন। কেহ বা বলেন যজ্ঞ করো, কেহ বা বলেন বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করিয়া বিশেষ মূর্তিকে ধ্যান করে, এমনকি, কেহ বা বলেন মাদক পদার্থের দ্বারা অথবা অন্য নানা উপায়ে শারীরিক উত্তেজনার সাহায্যে মনকে তাড়না করিয়া, দ্রুতবেগে সিদ্ধিলাভের দিকে অগ্রসর হইতে থাকো । এমনি করিয়া যখনই চেষ্টাকে বাহিরের দিকে বিক্ষিপ্ত করিবার উপদেশ দেওয়া হয় তখনই প্রমাদের পথ । খুলিয়া দেওয়া হয়। তখন মিথ্যাকে ঠেকাইয়া রাখা যায় না, কল্পনাকে সংযত করা অসাধ্য হয়, তখনই মানুষের বিশ্বাসমুগ্ধতা লুব্ধ হইয়া উঠিয়া কোথাও আপনার সীমা দেখিতে পায় না ; মানুষ আপনাকে ভোলায়, অন্যকে ভোলায় ; সম্ভব অসম্ভবের ভেদ বিলুপ্ত হইয়া ধর্মসাধনার ব্যাপার বিচিত্র মৃঢ়তায় একেবারে ७वांड श्ना ७ ।। ቇሙ অথচ ধ্যাহারা এইরূপ উপদেশ দেন তাহারা অনেকেই সাধু ও সাধক। তঁহারা যে ইচ্ছা করিয়া লোকের মনকে মোহের পথে লইয়া যান তাহা নহে। কিন্তু এ সম্বন্ধে তাঁহাদের ভুল করিবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কারণ, পাওয়া এক জিনিস, আর সেই পাওয়া ব্যাপারটাকে বিশ্লেষণ করিয়া জানা আর-এক জিনিস। মনে করো আহার পরিপাক করিবার শক্তি আমার অসামান্য ; আমাকে যদি কোনাে বেচারা অজীৰ্ণপীড়িত রোগী আসিয়া প্রশ্ন করে তুমি কেমন করিয়া এতটা পরিমাণ খাদ্য ও অখাদ্য বিনাদুঃখে হজম করিতে পার তবে আমি হয়তো সরল বিশ্বাসে তাহাকে বলিয়া দিতে পারি যে, আহারের পর আমি দুই খণ্ড কঁচা সুপারি । মুখে দিয়া বর্মদেশজাত একটা করিয়া আন্তচুরুট নিঃশেষে ছাই করিয়া থাকি, ইহাতেই আমার সমস্ত হজম হইয়া যায়। আসলে আমি যে এতৎসত্বেও হজম করিয়া থাকি তাহা আমি নিজেই জানি না ; এমনকি, যে